আমার কাগজ ডেস্ক
অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলী বাহিনীর হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৫ হাজার। ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছে আরও ৭ হাজার। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার বেশিরভাগই শরণার্থী শিবিরে কিংবা খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের উপর এমন বর্বর নির্যাতনের চিত্র সারাবিশ্বকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। সর্বত্র এই নারকীয় যুদ্ধের নিন্দা আর তিরস্কার। তবে ইসরাইলী বাহিনীকে এসবকিছু প্রভাবিত করতে পারেনি। তারা সদম্ভে ফিলিস্তি নিধনে মেতে আছেন।
খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এই যুদ্ধের শেষ কোথায়? অনেকে আবার বলছে, নেতানিয়াহু কি এই যুদ্ধের মাধ্যমে মুসোলিনি বা হিটলারকেও ছাড়িয়ে যাবেন?
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নাৎসি বাহিনীর ইহুদি নিধনযজ্ঞের সঙ্গে মিল রয়েছে। তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে জার্মানির নাৎসি একনায়ক অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। খবর রয়টার্সের।
রয়টার্সের প্রতিবেদন মতে, এরদোয়ান বলেছেন, ‘হিটলার ও নেতানিয়াহুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বরং হিটলারের চেয়ে তিনি আরও ধনী। তিনি পশ্চিমাদের সমর্থন পাচ্ছেন। সব ধরনের সহায়তা আসছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আর এসব সহায়তা দিয়ে তারা কি করছে। তারা ২০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে।’
পশ্চিমাদের সমালোচনা করে এরদোয়ান আরও বলেন, ‘ইসরাইলের গাজা হামলায় সমর্থনকারী পশ্চিমা দেশগুলোও যুদ্ধাপরাধ করছে। তারা হিটলারের সমালোচনা করত। হিটলারের সঙ্গে আপনাদের পার্থক্য কী? এই নেতানিয়াহু কি হিটলারের চেয়ে কম করছেন?’
এদিকে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) ছিল গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ৮২তম দিন। এদিন গাজার হামাস সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হতাহতের নতুন তথ্য প্রকাশ করে। নতুন তথ্য মতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২১ হাজার ১১০ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৫৫ হাজার ২৪৩ জন। আর ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৯ জনে।
নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত নিহত শিশুর সংখ্যা ৮ হাজার ৮০০। আর নিহত নারী ৬ হাজার ৩০০ জন। এছাড়া নিহতদের ৩ হাজার ১১১ জন চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মী, ৪০ জন নিরাপত্তা রক্ষী এবং শতাধিক সাংবাদিক। যুদ্ধবিরতি ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপ থাকা সত্ত্বেও গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরাইলি বাহিনী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বুধবারের বিবৃতি অনুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৯৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩২৫ জন। গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় ৪ হাজার ৩৭ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০৯ জন কর্মীও নিহত হন। আহত হয়েছেন ৭ হাজার ২৫৯ শিক্ষার্থী ও ৬১৯ শিক্ষক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় গাজায় ৩৫২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৯২টি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ১১৫টি মসজিদ ও তিনটি গির্জা ধ্বংস হয়েছে। ২৩টি হাসপাতাল ও ৫৩টি মেডিকেল সেন্টার অকেজো হয়ে গেছে।
এদিকে গাজার ফিলিস্তিনিদের মিশরের সিনাই মরুভূমিতে পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলছেন ইসরাইলের কয়েকজন রাজনীতিক। তারই অংশ হিসেবে মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় ইসরাইল হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই দুই এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১৯ লাখ মানুষ যা গাজার উত্তারাঞ্চল থেকে পালিয়ে এসেছেন। তবে ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার কোনো পদক্ষেপ মেনে নেয়া হবে না বলে ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে মিশর ও জর্ডান।