খাজা মোহাম্মদ মুস্তাকিম
সকাল বেলা। ঢাকার একটি ব্যস্ত সড়কে গাড়ির লাইন। কিন্তু আজ কিছুটা অন্যরকম। ট্রাফিক জ্যাম নেই, গাড়িগুলো সুশৃঙ্খলভাবে চলছে। রাস্তার পাশে কোনো অবৈধ পার্কিং নেই। একজন তরুণ, মিজান, তার অফিসের উদ্দেশ্যে হাঁটছে। সে লক্ষ্য করল, রাস্তার পাশে একটি পুলিশ অফিসার একজন ড্রাইভারকে থামিয়েছে। কিন্তু কোনো ঘুষের লেনদেন হচ্ছে না, বরং নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য যথাযথ জরিমানা করা হচ্ছে।
মিজান মনে মনে ভাবল, “এই তো সেই বাংলাদেশ যা আমরা চাই।” তার মনে পড়ল কয়েক বছর আগের কথা, যখন দুর্নীতি, অনিয়ম, ও বৈষম্য ছিল দৈনন্দিন জীবনের অংশ। কিন্তু আজ, দেশটা অনেকটাই বদলে গেছে। মিজান অফিসে পৌঁছে গেল। সে জানে, আজ তার কাজের মূল্যায়ন হবে তার যোগ্যতা ও পরিশ্রমের ভিত্তিতে, কোনো বাইরের প্রভাব ছাড়াই। সে গর্বিত যে সে এমন একটি দেশে বাস করে যেখানে প্রতিটি নাগরিকের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ আছে। গল্পটি বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বপ্নের মতো। আমাদের দেশের মানুষও একটি উন্নত, নিরাপদ, এবং সুবিচারপূর্ণ সমাজের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে
আমাদের কিছু মূলনীতির উপর ভিত্তি করে এগোতে হবে। বাংলাদেশের এই পরিবর্তনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে – একটি সুশাসিত, ন্যায়পরায়ণ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সরকার ও নাগরিক সমাজ মিলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি অফিস-আদালতগুলো থেকে ঘুষ ও দুর্নীতি দূর করা একটি দেশের উন্নতির অন্যতম প্রধান শর্ত। ঘুষ ও দুর্নীতি জনগণের উপর একটি বিরাট বোঝা সৃষ্টি করে এবং সরকারি সেবা গ্রহণে বৈষম্য তৈরি করে। সজনপ্রীতি একটি অবৈধ প্রক্রিয়া যা মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক পদে নিয়োগে বাধা দেয়। তাই, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে, কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তার যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন।
বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ আমর্ত্য সেন বলেছেন, “দুর্নীতি একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নকে ব্যাহত করে।” তাই, ঘুষ এবং দুর্নীতি রোধ করতে আমাদের সরকারকে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক সমাজের একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার। তবে এই স্বাধীনতা যেন কারও আবেগ বা বিশ্বাসকে আঘাত না করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। মতের ভিন্নতা সমাজের একটি স্বাভাবিক দিক, কিন্তু সেই ভিন্নতার কারণে কারো জীবনে বা নিরাপত্তায় হুমকি তৈরি হওয়া অনুচিত। মত প্রকাশের স্বাধীনতার সঠিক প্রয়োগের জন্য সংবিধান এবং মানবাধিকার চার্টার অনুযায়ী নির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করতে হবে।
গুম, খুন, এবং হয়রানী কোনো সভ্য সমাজে সহ্য করার মতো ঘটনা নয়। ভিন্ন মতের কারণে কেউ গুম, খুন, বা হয়রানীর শিকার হওয়া মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি একটি দেশকে স্থিতিশীলতা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে হবে যেখানে সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, কিন্তু সেই ভিন্ন মতের কারণে কাউকে হুমকির মুখে পড়তে হবে না। আয়না ঘর শব্দটি সাধারণত নিগ্রহ এবং গোপন নজরদারি বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে এরকম ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তার পরিপন্থি। এমন ব্যবস্থা মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে অনধিকার প্রবেশ এবং তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। সুতরাং, এই ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করতে হলে সংবিধান এবং আইনের শাসনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।
সরকারি সেবা পেতে কারো মধ্যস্থতা বা টেলিফোনের প্রয়োজন হওয়া একটি দুর্নীতির প্রতিচ্ছবি। এর ফলে সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। সরকারি সেবা প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি সহজ, স্বচ্ছ এবং জনবান্ধব হওয়া উচিত, যাতে সকল নাগরিক তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং নিজেই সেবা গ্রহণ করতে পারে। আইন ও নীতি প্রণয়ন এমনভাবে করতে হবে, যাতে তা দেশের মানুষের বিশ্বাস এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে। একটি সমাজের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আইন ও নীতি একটি সমাজকে সুসংহত করতে পারে। নীতিমালা প্রণয়নে জনমতের যথাযথ প্রতিফলন থাকলে, জনগণ সেই নীতিমালাকে সম্মান করে এবং তা মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ হয়।
বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা রাখতে হলে, বিচার বিভাগকে স্বাধীন এবং হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ন্যয় বিচার প্রদানের জন্য অপরিহার্য। বিচার ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা বৃদ্ধির জন্য, কোনও পক্ষের প্রভাব ছাড়াই বিচার কার্য সম্পাদন নিশ্চিত করতে হবে। আইনের শাসন একটি দেশকে সুশাসিত করতে অপরিহার্য। সকলের জন্য সমানভাবে আইন প্রণয়ন এবং তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হলে সমাজে শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা বজায় থাকবে। আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনও প্রকার পক্ষপাতিত্ব থাকলে তা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। শিক্ষানীতিতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রতিফলন থাকা উচিত। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজেদের সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা জাগাতে সাহায্য করবে। শিক্ষার মাধ্যমে একটি সমাজকে তার নিজস্ব সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার নামে কারো উপর তার ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কিছু চাপিয়ে দেওয়া অত্যন্ত আপত্তিকর। ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো সমাজের জন্য অপরিহার্য, বিশেষ করে একটি বহুজাতিক এবং বহুধর্মীয় সমাজে। প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষা করা একটি সুস্থ সমাজের অন্যতম শর্ত। দেশের সকল ধর্মের মানুষের বিশ্বাস এবং চেতনার পরিপন্থি কোনও কিছু আমদানি করা দেশের সংস্কৃতির জন্য ক্ষতিকর। পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ যদি দেশের সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের বিপরীত হয়, তবে তা সমাজে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। সুতরাং, এ ধরনের সংস্কৃতি আমদানি রোধ করা এবং দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রবাসীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই তাদের প্রতি হয়রানী বন্ধ করা এবং দেশের সকল সেবায় তাদের জন্য বিশেষ প্রাধান্য নিশ্চিত করা উচিত। প্রবাসীদের সুবিধার জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করলে তারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হবে। বেকারত্ব একটি দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। তরুণদের যুগচাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশিক্ষণ এবং সূদমুক্ত ঋণ দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সুগম করা বেকারত্ব দূরীকরণের একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। এর ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং তরুণরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।
বিনোদন এবং সংস্কৃতির নামে বেহায়াপনা এবং অশ্লীলতা সমাজের নৈতিক মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই বিনোদন এবং সংস্কৃতিকে এমনভাবে গড়ে তোলা উচিত, যাতে তা সমাজের মঙ্গল এবং নৈতিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এটি দেশের সংস্কৃতির সঠিক বিকাশে সহায়তা করবে। আলেম সমাজ, দাড়ি, টুপি, এবং হিজাবের প্রতি বৈষম্য দূর করা উচিত। ধর্মীয় প্রতীকের প্রতি অসম্মান দেখানো একটি দেশের সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ধর্মীয় প্রতীকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং বৈষম্য দূর করা সমাজের শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং অধিকার রক্ষা একটি দেশের মানবাধিকারের অন্যতম শর্ত। কোনও সম্প্রদায়কে অন্যায়ভাবে আঘাত করা সমাজের সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করে। সুতরাং, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং তাদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। ইসলামপন্থীদের প্রতি সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় বৈষম্য দূর করা উচিত। প্রতিটি নাগরিকের রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করা একটি সুশৃঙ্খল সমাজের জন্য অপরিহার্য। তাই সকল ধরণের বৈষম্য দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইমাম-খতীবদের হক কথা বলার স্বাধীনতা একটি ধর্মীয় সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাদের কথা বলার স্বাধীনতা যদি সীমিত করা হয়, তবে তা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। তাই তাদের বক্তব্যের স্বাধীনতা রক্ষা করা উচিত, তবে সেই স্বাধীনতা যেন সমাজের শান্তি এবং স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত না করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি।
সকল ধরণের নিয়োগ, পদায়ন, এবং পদোন্নতি মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। এটি একটি প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সঠিক বিকাশে সহায়ক। যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করলে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কর্মীদের মধ্যে সন্তোষ তৈরি হয়, যা একটি প্রতিষ্ঠানকে সামগ্রিকভাবে উন্নত করতে সহায়তা করে। দ্রব্যমূল্য যদি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তবে সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনে চরম দুর্ভোগে পড়বে। খাদ্যদ্রব্য এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে রাখা প্রয়োজন, যাতে দেশের জনগণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। এ জন্য সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং মূল্য নির্ধারণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অধিক মুনাফাখোরি এবং মজুতদারী সমাজে বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড জনজীবনকে কষ্টকর করে তোলে। সুতরাং, মুনাফাখোরি এবং মজুতদারী রোধ করতে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
নিরাপদ খাদ্য, পানীয়, এবং ঔষধ একটি দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। খাদ্যে ভেজাল এবং নিম্নমানের ঔষধ জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। তাই এই ক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং প্রতিটি পণ্য যাচাই-বাছাই করে নিরাপদ প্রমাণিত হলে তবেই তা বাজারজাত করতে অনুমোদন দেওয়া উচিত। চিকিৎসার মান উন্নত করা একটি দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানসম্পন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থা জনগণের আস্থা
বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করে তোলে। চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি সহজতর এবং সাশ্রয়ী করতে হলে চিকিৎসা খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।
ছাত্র সংসদ ছাড়া অন্য সকল ধরনের লেজুড়বৃত্তিমূলক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা উচিত। ছাত্র রাজনীতি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে, তবে এটি যদি লেজুড়বৃত্তিমূলক হয়, তবে তা শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট করতে পারে। সুতরাং, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির সঠিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। দুর্নীতি, অনিয়ম, এবং খাদ্যে ভেজাল সমাজের জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। এসব কার্যকলাপের শাস্তি কঠোর এবং কার্যকর করতে হবে, যাতে অপরাধীরা ভয় পায় এবং সাধারণ মানুষ সুরক্ষিত থাকে। এর ফলে সমাজে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং মানুষের জীবনে শান্তি বজায় থাকবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড একটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি সমাজে বিশৃঙ্খলা এবং অবিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রোধ করতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং প্রতিটি অপরাধের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
চাঁদাবাজি, নৈরাজ্য, এবং সিন্ডকেট দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে এবং পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং, এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেশের বাজার ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক রাখতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য সাশ্রয়ী রাখে। ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম দেশের জনগণের দৈনন্দিন জীবনে চরম সমস্যা সৃষ্টি করে। ট্রাফিক জ্যাম কমাতে সরকারকে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যেমন বাস স্টপ এবং পার্কিং এর জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা, এবং ট্রাফিক নিয়মের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
কৃষকের শ্রমের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। কৃষক যদি তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য না পায়, তবে তারা কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই সরকারকে কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রমিকদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা একটি দেশের শিল্প খাতের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। শ্রমিক যদি তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তবে তা
সমাজে বিশৃঙ্খলা এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করবে। তাই, শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি এবং সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
জালিয়াতি এবং প্রতারণা সমাজের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করে। এটি দেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য চরম হুমকি স্বরূপ। তাই, সকল ধরণের জালিয়াতি এবং প্রতারণা
বন্ধ করতে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তার কার্যকর প্রয়োগ প্রয়োজন। মাস্তানী বা গুণ্ডামি একটি সমাজের শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি স্বরূপ। কেউ কোথাও মাস্তানী করতে আসবে না, এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে হলে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এক উজ্জ্বল সূর্যালোকে ভরপুর হতে পারে যদি আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশকে এই মূলনীতিগুলির উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলি। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা এমন একটি দেশে বড় হোক, যেখানে তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারে এবং তাদের স্বপ্নগুলোকে সত্যি করতে পারে। এটি বাস্তবায়ন করতে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে আমাদের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হবে সচেতন হওয়া, একসঙ্গে কাজ করা, এবং আমাদের সমাজের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা। আমরা সবাই মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে পারি, যা হবে একটি সোনালী সকাল, যেখানে প্রতিটি মানুষ তার ন্যায্য অধিকার এবং স্বাধীনতা উপভোগ করবে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কারণ, যেমন কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, “দেশের কাজে যে করিবে অবহেলা, বিশ্ব-সংসারে সে হইবে হেয় হেলা।” আসুন, আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলি সেই বাংলাদেশ, যা আমরা চাই – একটি সুশাসিত, ন্যায়পরায়ণ ও সমৃদ্ধ দেশ।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, মার্কেটিং বিভাগ, হাবীবুল্লাহ্ বাহার কলেজ, ঢাকা।