আমার কাগজ প্রতিবেদক
পাকিস্তান থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজ নিয়ে আলোচনা চলছেই। কী ছিল সেই জাহাজে? আর কেনই বা এতদিন পর পাকিস্তানের করাচি থেকে জাহাজ সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে এলো এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় বইছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে পাকিস্তান থেকে জাহাজ আসা নিয়ে সে দেশের উদ্বেগের খবর দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে আলোচনা ছড়িয়েছে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের পাকিস্তানের জাহাজে অস্ত্র আসার যে খবর দিয়েছে তা পুরোপুরি ভুয়া। শিগগিরই এ ব্যাপারে আমরা স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দেব।’
স্বাধীনতার পর এই প্রথম পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে সরাসরি আমদানি পণ্য নিয়ে আসে ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ জাহাজটি। সংযুক্ত আমিরাত থেকে আসা জাহাজটি করাচি থেকে ২৯৭ একক কনটেইনার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৭৩ কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে গত সোমবার (১১ নভেম্বর) আসে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২৮৯ একক কনটেইনার (একটি পণ্যভর্তি ও বাকি সব খালি) নিয়ে মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাংয়ের উদ্দেশে বুধবার (১৩ নভেম্বর) ছেড়ে যায় জাহাজটি।
এখন প্রশ্ন হলো এর আগে কি পাকিস্তানি পণ্য চট্টগ্রামে আসত না? উত্তর হলো, অবশ্যই আসত। তাই এটা নিয়ে মিডিয়ায় এত শোরগোল হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিপিং সেক্টরের প্রতিনিধিরা। এই জাহাজ দিয়ে পণ্য এনেছেন বাংলাদেশে কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রিজেন্সি লাইনস লিমিটেড। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হলো এই কোম্পানি।
এ বিষয়ে কথা হয় কোম্পানিটির নির্বাহী পরিচালক আনিস উদ দৌলার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে এর আগেও পণ্য এসেছে। তখন পণ্য আসত আরব আমিরাতের দুবাই কিংবা শ্রীলঙ্কার কলম্বো পোর্ট হয়ে। পাকিস্তানের পণ্যগুলো সেসব পোর্টে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখান থেকে জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে আসত। এবারই আমরা প্রথম সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে করাচি হয়ে পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে আসি।’
করাচি থেকে কোনো জাহাজ চট্টগ্রামে আসতে পারবে না, এমন কোনো বিধান নেই উল্লেখ করে আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘বৈশ্বিক নৌ-বাণিজ্যে সরকারি নিষেধাজ্ঞা নেই, এমন যেকোনো দেশের বন্দর থেকে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাবে। আর করাচিতে এবার বেশি কনটেইনার পণ্য থাকায় আমরা জাহাজটি করাচি হয়ে নিয়ে এসেছি। পণ্যগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় চার দিন আগে এসেছে।’
করাচির সঙ্গে নৌ-চলাচলে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘করাচি থেকে ৩৭০ একক কনটেইনার পণ্য নিয়ে আসা জাহাজটি গত ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে এসে ১৩ নভেম্বর ২৮৯ একক কনটেইনার পণ্য নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে চলে গেছে।’
আগে পাকিস্তানের পণ্য ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে অন্য বন্দর থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হতো উল্লেখ করে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘পণ্য আনা-নেওয়ায় তো কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আর এখন বিশ্বের অনেক বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। এতে কম সময়ে দ্রুত পণ্য পরিবহন করা যায়। সে হিসেবে পাকিস্তান থেকে আসতে তো কোনো বিধি-নিষেধ নেই।’
কিন্তু এসব কনটেইনারে কী কী পণ্য রয়েছে? তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ঝড় বইছে। আমদানি পণ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে শিপিং কোম্পানি রিজেন্সি লাইনস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক আনিস উদ দৌলা বলেন, ‘পাকিস্তান থেকে মূলত বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল, কাপড়, ভোগ্যপণ্য ও ইলেকট্রনিকস আইটেম আনা হয়ে থাকে।’ এবার কী কী আনা হয়েছে তা জানতে কথা হয় কাস্টমস ও শিপিং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে।
কাস্টমস সূত্রের তথ্যমতে, পাকিস্তান থেকে ৬ হাজার ৩৩৭ টন পণ্য এসেছে। এসব পণ্যের মধ্যে ১১৫টি কনটেইনার রয়েছে টেক্সটাইল শিল্পের কাঁচামাল সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ। ৪৬টি কনটেইনারে আছে খনিজ পদার্থ ডলোমাইট, ৩৫টি কনটেইনারে রয়েছে চুনাপাথর, ২৮টি কনটেইনারে রয়েছে পোশাক শিল্পের কাঁচামালা কাপড় ও রঙ, ১০টি কনটেইনারে রয়েছে কাচ শিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ, ছয়টি কনটেইনারে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট এবং একটি কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। শিল্পের কাঁচামাল ছাড়াও ৪২টি কনটেইনারে ৬১১ টন পেঁয়াজ, ১৪টি কনটেইনারে ২০৩ টন আলু আনা হয়েছে ফ্রিজার কনটেইনারে করে।
দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ফিডার লাইনস ডিএমসিসি’ কয়েকটি দেশের বন্দরকে যুক্ত করে এই রুট চালু করেছে। এই রুটে জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তানের করাচি বন্দর, ভারতের মুন্দ্রা, ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ান, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর রুটে চলাচল করবে।