
গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উপলক্ষে অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু
আমার কাগজ প্রতিবেদক
সবার সম্মিলিত সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা ‘একেবারেই অসম্ভব’ বলে মনে করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেছেন, “বাজার পরিচালনা যারা করেন, তাদের সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা একেবারেই অসম্ভব। যারা ব্যবসায়ী আছেন, পাইকারি ব্যবসায়ী, খুচরা ব্যবসায়ী, বিভিন্ন বাজারের প্রতিনিধি যারা আছেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি যারা আছেন, সকলকে নিয়ে আমরা একটা স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে চাই।
“আমরা সবাই যদি যার যার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারি, তাহলে ভোক্তা অধিকার যেমন সংরক্ষণ হবে, ঠিক একইভাবে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ সুনিশ্চিত হবে।”
‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস’ উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা দায়িত্ব নিয়েছি খুবই অল্প সময় হল, এর মধ্যে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় যে দ্রব্যগুলো আছে, সেগুলোর বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে।”
উদাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন, “আমরা কিন্তু তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি ১৬৩ টাকা বোতল। আমরা মনিটরিং করে দেখেছি সব জায়গায় যে তেলের দাম ১৬৩ টাকা বা তার নিচে বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৯ টাকা করে।
“শুরুতেই চালের অস্থিরতা ছিল, আজকে কিন্তু চাল নিয়ে কোনো সংবাদ নাই, তার মানে চালের বাজার স্থিতিশীল আছে। এবং সেই সাথে যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ডাল, ছোলা, চিনি বাজারে আছে।”
আহসানুল ইসলাম বলেন, “আমাদের কৃষিপণ্যগুলো নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে যে আলোচনা হচ্ছে, সেজন্য আমরা পাইকারি বাজারে নজরদারি বাড়িয়েছি। কারওয়ান বাজারে রাতভর অভিযান চলেছে। পরবর্তীতে আমরা কাঁচাবাজারগুলোতে খবর নিয়েছি এবং আমাদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।”
তিনি বলেন, “বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসকদের আমরা অনুরোধ করেছি, জেলাগুলোতে যে কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলো যেন সহজে পরিবহনের মাধ্যমে পাইকারি বাজার হয়ে খুচরা বাজারে পৌঁছাতে পারে।
“আমরা সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা নিবিঢ়ভাবে কাজ করছি।”
এ বছর ভোক্তা অধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল-‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ি, ভোক্তার স্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করি’।
প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, “ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে আমাদের কনজ্যুমার কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সেটি কিন্তু কাজ করছে। আপনারা চাইলে ১৬১২১ এ ফোন করে আপনারা যেকোন কমপ্লেইন করতে পারেন। এবং প্রতিটি কমপ্লেইন যেন সমাধান হয় সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিই।”
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, “করোনার পূর্ব পর্যন্ত মানুষের আয় বৃদ্ধির হার ছিল বেশি, ব্যয় বৃদ্ধির হার সে তুলনায় ছিল কম। যার ফলে জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। প্রায় চার কোটি মানুষ নতুন করে মধবিত্ত হিসেবে সংযুক্ত হয়েছে।
“কিন্তু, তারপরে দেশের গড়পড়তা আয় বাড়লেও কোটি-কোটি সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধির হারের সাথে ব্যয় বৃদ্ধির হারের বিস্তর ফারাক রয়ে গেছে। ব্যয় বাড়ছে বেশি, আয় বাড়ছে কম। যার ফলে জীবনমানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ প্রয়োজন।”
বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, “সময়কে কাজে লাগিয়ে অধিক মুনাফা করার লোভ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অধিক মুনাফাকারী এবং আইন অমান্যকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এফবিসিসিআই থাকবে না। ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করতে হলে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
ভোক্তা স্বার্থে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষত সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে রিফাইনারি থেকে পরিবেশক পর্যন্ত মজুদ পরিস্থিতি জানতে ‘সাপ্লাই চেইন মনিটরিং সিস্টেম’ (এসসিএমএস) নামের একটি অ্যাপের পাইলটিং পর্যায়ের উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।