
সিলেট প্রতিনিধি
সিলেটের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘স্কলার্সহোম’র এক শিক্ষার্থীর অস্বাভবিক মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। স্কলার্সহোমের শিক্ষার মান ও শিক্ষকদের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ও বর্তমান অনেক শিক্ষার্থী ও অভিবাবকরা।
গতকাল বুধবার বিকেলে স্কলার্সহোম’র শাহী ঈদগাহ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী আজমান আহমেদ দানিয়াল (১৯)-এর মরদেহ নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
আজমান স্কলার্সহোমের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাসা নগরীর সুবিদবাজার বনকলাপাড়া এলাকায়। আজমান এইচএসসি’র প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষায় পাঁচ বিষয়ে ফেল করেছে বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়।
এদিকে, আজমানের মত্যুর খবরে ছড়িয়ে পড়লে স্কলার্সহোম কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার সহপাঠী ও ওই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এমনকি অনেক সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্কলার্সহোমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাকেদের সাথে খারাপ আচরণ, পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষক না থাকা, শিক্ষার্থী খারাপ করলে ছাড়পত্র দিয়ে বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেন।
যদিও কলেজটির অধ্যক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নিহত আজমানের পরিবারের সাথে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।
হাফিজ মজমুদার ট্রাস্ট পরিচালিত ইংরেজিমাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কলার্সহোম’র বেশ প্রসার রয়েছে সিলেটে। নগরীতে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৬ টি শাখা রয়েছে। তবে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগও ওঠেছে এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
আজমান আহমেদ দানিয়ালের একাধিক সহপাঠী নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করেন, প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় খারাপ করায় আজমানের সাথে কলেজের শিক্ষকরা খারাপ ব্যবহার করেন। তাকে কলেজ থেকে ছাড়পত্র (টিসি) দিয়ে বের করে দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি তার অভিভাবদের কলেজে ডেকে এনেও অপমান করা হয়। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলো আজমান। এ কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে।
এদিকে, সিলেটের সংবাদপত্রে আজমানের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হলে খবরের নিচে স্কলার্সহোমের অনেক সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মন্তব্য করেন। তারা স্কলার্সহোমের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ তুলেন। কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগও দাবি করেন কেউ কেউ।
এসব অভিযোগ ও আজমানের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে স্কলার্সহোম’র শাহী ঈদগাহ অধ্যক্ষ লে. কর্ণেল (অব.) মুনীর আহমেদ কাদেরী বলেন, এরপর আজমান বা তার পরিবারের কেউ আর কলেজে আসেননি। তাদের সাথে আমাদের আর কোন কথাও হয়নি। বুধবার বিকেলে শুনি সে আত্মহত্যা করেছে। এটি খুবই দুঃখজনক। খবর পেয়ে আমরাও তার বাসায় গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে শুনেছি, কালকে সে নাকি বাবার সাথে অন্য একটা কলেজে গিয়েছিলো। ওই কলেজ থেকে আসার পর বাসার নিজের রুমে ঢুকে পড়ে। এরপর তার মরদেহ পাওয়া যায়।
প্রি-টেস্টে অকৃতকার্য হলে ছাড়পত্র প্রদান করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা কাউকে ছাড়পত্র দেইনা। সে এখতিয়ারও আমাদের নেই। এটি শিক্ষাবোর্ড অনুমোদন করে। তবে খারাপ ছাত্রদের অভিভাবদের আমরা অনুরোধ করি- যেহেতু এখানে সে ভালো করতে পারছে না, তাই আপনারা চাইলে অন্য কলেজে নিয়ে যেতে পারেন।
শিক্ষার্থীরা খারাপ ফল করলে অভিভাবদের ডেকে এনে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ লে. কর্ণেল (অব.) মুনীর আহমেদ কাদেরী বলেন, আমরা কারো সঙ্গেই দুর্ব্যবহার করি না। তবে বড় ক্লাসের অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় খারাপ করলে বাসায় গিয়ে জানায় না। তাই আমরা অভিভাবদের ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের ফলাফল জানাই। তার প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিতে অনুরোধ করি। শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্যই এসব করি।
এদিকে, নিহত আজমান আহমেদ দানিয়ালের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়- ‘প্রি-টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় কলেজের প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপাল আজমানের অভিভাবকদের ডাকেন। তারা দুই তিনদিন আগে কলেজে গেলে শিক্ষকরা জানান, প্রি-টেস্টপরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় আজমানকে আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মন খারাপ হয়। এর মধ্যে বুধবার অন্য একটি কলেজে থেকে ফিরে বাসায় এসে সে আত্মহত্যা করে।’
এ ঘটনায় মহানগর পুলিশ জানায়, এ বিষয়ে পুলিশের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।