রাঙ্গামাটি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেছেন, সকল সংস্কৃতির মাঝে যদি আমরা ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি করতে পারি তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। একইভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অবদান রাখা যাবে। পাহাড়িদের সংস্কৃতির সাথে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের সংস্কৃতি ও চেতনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু এদেশের মাটি, আকাশ, বাতাস সবকিছুই আমাদের সকলের। এখানে কোন পার্থক্য নেই। তাই বলছি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচার –ব্যবহার আলাদা হলেও দেশ ও দেশের মাটি এক।
আজ রাঙ্গমাটি বীর মুক্তিযোদ্ধা চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়ামে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত চট্টগ্রাম পাহাড়ী ৩ জেলার ১৬ সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় ফুড এন্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, এমপি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি আমাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি প্রকাশ না করি, মানুষকে যদি জানতে না পারি তাহলে এগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। আমাদের খাবারের সাথে অনেকে পরিচিত নয়। তাদের জন্য এধরনের ফেস্টিভ্যাল আরো বেশি বেশি করে আয়োজন করা দরকার। তাহলে আমাদের অতীত সর্ম্পকে সারাদেশের মানুষের কাছে ধারনা জন্ম নেবে, এবং তারা আমাদের সংস্কৃতি ও খাবারের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করবে।
অনুষ্ঠানের প্রথমেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপিসহ অন্যান্য সকলে মিলে বেলুন উড়িয়ে ফুড এন্ড কালচারাল ফেস্টিভ্যাল ২০২৪ এর শুভ উদ্বোধন করেন। প্রতিমন্ত্রী পরে মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। এসময় অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
ফেস্টিভ্যালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা’র সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি রাঙ্গামাটি জেলার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি, রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সোহেল আহমেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ, রাষ্ট্রদূত (অব.) তারিক করিম, AOFA-এর প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ্ আল হাসান, পার্বত্য জেলার সংগীত শিল্পী, সুরকার ও গীতিকার মনোজ বাহাদুর গূর্খা ও রুম্পা ম্রো বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আলমগীর হোসেন। মনোজ্ঞ এ অনুষ্ঠানটি ১২ জন অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত অংশ নেন। ফ্যাস্টিভ্যালে আগত সকলে খাবার স্টল ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করেন।
সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, আমাদের দেশে পাহাড়িদের খাবার নিয়ে অন্যান্যদের অনেক কৌতুহল ছিল। তারা জানতে চায় আমরা খাবারের তালিকায় কি কি খেয়ে থাকি। এটা আগে ছিল কিন্তু এখন সেটা নেই। মানুষ এখন অনেক এগিয়ে গেছে, তারা এখন এসব বিষয়ে কৌতুহল দেখায় না। এধরনের ফেস্টিভ্যালে মানুষের মেলামেশায় সবার মাঝে ভাবের আদান প্রদান বেড়ে গেছে। আজকে রাঙ্গামাটিসহ অন্যান্য অঞ্চলের পাহাড়িরা দেশের নাম বিশ্বে উজ্জ্বল ভূমিকা রাখছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মশিউর রহমান এনডিসি বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় একসময় খাদ্যের বৈচিত্র্যতা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতার সম্মিলনে যে সম্মৃদ্ধ বৈচিত্রতা ছিল, তা আবারও এ ধরনের ফ্যাস্টিভাল আয়োজনের মাধ্যমে পার্বত্যবাসীর মাঝে ফিরে আসবে, মানুষকে উজ্জীবিত করবে। তিনি পার্বত্য সকলের মাঝে আন্তরিক ও পারস্পরিক সৌহাদ্রতা গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান সচিব মশিউর রহমান এনডিসি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি সুপ্রদীপ চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, এ ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে আমরা খাবারের মনোরম বৈচিত্র্য এবং ১৬ টি সম্প্রদায়ের খাদ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আজকের এ অনুষ্ঠান আমাদের পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে একটি মিলন মেলা। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পোশাক, আচার-ব্যবহার, খাবার-দাবার ও তাদের বাদ্যযন্ত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পেরেছি। সংস্কৃতি একটি সুগন্ধিযুক্ত খাবারের আইটেমের মতো বিভিন্ন উপাদানে মিশ্রিত। এগুলো সংরক্ষণ করে না রাখলে আগামীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি আশা করি এগুলো যদি সংরক্ষণ করে রাখা যায় তাহলে আগামীতে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যতে এগুলো স্থান করে নিতে পারবে।
ফেস্টিভ্যালে নানান রঙের পিঠাসহ রসনাবিলাসসমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী বাহারি খাবারসামগ্রী দেখতে ও খেতে আসছেন দুর দুরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এরমধ্যে শিশু-কিশোরদের মাঝে বাড়তি আনন্দের আবহ তৈরি হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, তঞ্চগ্যা, বাঙ্গালি, অহমিয়া, খেয়াং, খুমি, গুর্খা, চাক, পাংখোয়া, বম, লুসাই, রাখাইন এবং সাঁওতালসহ মেলায় ১৬টি সম্প্রদায়ের দোকান হরেক রকম ঐতিহ্যবাহী খাবারের পসরা নিয়ে বসেছে। এ মেলা ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলবে।