
আমার কাগজ প্রতিবেদক
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ফুলার রোড মিলনায়তনে ‘নিয়োগযোগ্যতা: শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন’ বিষয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১২ মে) দিনব্যাপী ওই অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও তরুণ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বাংলাদেশের স্নাতকদের কর্মসংস্থানে প্রবেশের যোগ্যতা ও কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুতি ছিল সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল।
ব্রিটিশ কাউন্সিল পরিচালিত বেশ কিছু ফোকাস গ্রুপ আলোচনার চূড়ান্ত পর্ব ছিল এই সম্মেলনটি। সম্মেলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চাকরিদাতা ও উন্নয়ন পেশাজীবীদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিক্ষেত্রে প্রবেশে যেসব দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে- তা আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
আলোচনায় দেখা যায়, শিক্ষার সঙ্গে শিল্প ও চাকরির প্রয়োজনীয়তার মধ্যে বড় একটি ব্যবধান আছে। এতে পাঠ্যক্রম উন্নয়ন, হাতে-কলমে শেখার সুযোগ ও ক্যারিয়ার গাইডেন্সের গুরুত্বও উঠে আসে।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম। মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন ইংলিশ ফর ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কপ্লেসের লার্নিং কনসালট্যান্ট ইভান ফ্রেন্ডো ও সাবেক ডেপুটি চিফ অফ পার্টি, ইউএসএইড বিজয়ী প্রজেক্ট, আলমীর আহসান আসিফ।
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর, স্টিফেন ফোর্বস স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘এই সম্মেলন শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মাঝে সমন্বয় সাধন করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এখানে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্পখাত ও তরুণদের মধ্যে অর্থবহ সংলাপকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গতিশীল শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলা যা গ্র্যাজুয়েটদের আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল চাকরির বাজারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করবে। এটি বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভবিষ্যতমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের অগ্রাধিকারকে পুনর্ব্যক্ত করে।’
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবধান বা ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। আজকের গ্র্যাজুয়েটদের কেবল ডিগ্রি নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা, শিল্পখাতের সাথে সংস্পর্শ ও ডিজিটাল দক্ষতাও প্রয়োজন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের বেশি ৩৫ বছরের নিচে- এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী আমাদের এক অসাধারণ সম্ভাবনা এনে দিতে পারে। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সরকার দক্ষতা উন্নয়নকে জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তরুণদের কারিগরি জ্ঞান, সফট স্কিল, ডিজিটাল লিটারেসি ও কর্মস্থলের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রস্তুত করতে কাজ করে যাচ্ছি যেন তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফল হতে পারে। তবে এই কাজ আমরা একা সম্পন্ন করতে পারব না। আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মশক্তিকে প্রস্তুত করতে আমরা সকল অংশীজনকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাই।’
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল- ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার, সমরেশ সাহার পরিচালনায় ‘শ্রেণিকক্ষ থেকে কর্মক্ষেত্র: সমন্বিত উদ্যোগে দক্ষতা গড়ে তোলা’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা। এতে অংশ নেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পরিকল্পনা উইংয়ের সহকারী পরিচালক জেসমিন আরা, মন্নো ফেব্রিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামিউল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক বেনাজির এলাহী মুন্নি ও কমনওয়েলথ স্কলার ও উন্নয়নকর্মী তানজিলুত তাসনুভা।
আলোচকরা উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রমে সফট স্কিল, ডিজিটাল দক্ষতা ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। বক্তারা বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নে শিল্পখাতের মতামত জরুরি। সম্মেলনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ফোকাস গ্রুপ আলোচনার উপস্থাপনা। সেখানে দেখা যায়, যোগাযোগ দক্ষতা, দলগত কাজ ও ডিজিটাল সক্ষমতায় শিক্ষার্থীদের ঘাটতি রয়েছে। বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সেবা বাড়ানো ও বাজার চাহিদার সঙ্গে শিক্ষার মিল ঘটানো এখন সময়ের দাবি।
অনুষ্ঠানে ‘তরুণদের কণ্ঠ’ শীর্ষক একটি সেশনও ছিল। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি পরিচালিত একটি সংলাপের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এখানে তরুণরা জানান হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের সুযোগ সীমিত, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রায় নেই, এবং সবার জন্য সমান সুযোগ দরকার। তাদের মতামত ছিল বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক যা শিক্ষার কাঠামোগত পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।
অনুষ্ঠানটি একটি নেটওয়ার্কিং সেশন দিয়ে শেষ হয় যেখানে তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়, চাকরিদাতা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মধ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়।