
হাওর অঞ্চল প্রতিনিধি
শৈত্য প্রবাহে হাওর অঞ্চলের নীড় হারা মানসিক রোগীদের অবস্থা তুলনামূলক অনেকটা শোচনীয়। সরকারকে এমন বাস্তবতার দায় এড়াতে গেলে সরকারের দায়বদ্ধতার পাশাপাশি বিত্তশালী জনগণ ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা পারে একমাত্র এ সকল মানসিক প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এমন অভিমত সচেতন মহলের।
হাওর অঞ্চলগুলোতে শীতকালে নীড় হারা ভবঘুরে মানসিক রোগীরা অধিক পরিমাণে কষ্টের মধ্যে ময়লাযুক্ত পোশাক আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শীতের দাপটে হাঁটু গেড়ে জবুথবু অবস্থায় বসে থাকতে দেখা গেছে। বাত ব্যথা আর ঠান্ডাজনিত সমস্যা তাদের ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে দেখা দিতে থাকে।
কিশোরগঞ্জের নিকলী, বাজিতপুর, অষ্টগ্রাম, ইটনা মিঠামইনসহ হাওর অঞ্চলের বুকে শৈত্য প্রবাহে ঠান্ডার পরিমাণ বাড়ার কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস দেখায় না। এসব অঞ্চলে শহরের তুলনায় খোলামেলা বলে বাতাস বেশি অনুভব হয় আর গাছগাছড়া অধিক বলে ঠান্ডার পরিমাণও বেশি অনুভ‚ত হয়ে থাকে।
গরমের দিনের তুলনায় ভবঘুরে মানসিক রোগীদেরও তেমন একটা চোখে পড়ে না। স্বজন সঙ্গীহীন এসব অস্বাভাবিক মানুষের খোঁজ খবর চোখের আড়াল হলে খুব কম সংখ্যকই নিয়ে থাকেন। ওরা সাধারণত গ্রামের হাটে বাজারে ও বাড়ি ঘরে, জনবহুল রাস্তায়, রেলওয়ের ষ্টেশনে, ঘুরে ফিরে চেয়ে চিনতে করুণার পাত্র হিসেবে অস্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত। মানসিক রোগীদের পারিবারিকভাবে সুখে শান্তিতে স্বাভাবিকভাবে রাখা হলেও তারা তা পছন্দ করে না। এলোমেলো অস্বাভাবিক চলাফেরা করতে তারা আগ্রহ দেখায়।
শৈত প্রবাহে বা প্রচন্ড শীতের কুয়াশার সময়ে ক্ষুধা নিবারণের আশায় বাহিরে ঘুরা ফেরায় জামা ভিজে গেলে সেই ভেজা অবস্থাতেই রাত্রি কাটাতে দেখা গেছে। কখনো কখনো গ্রামের মানুষের পরিত্যক্ত ঘরে, দোকানের সামনে, সরকারি প্রতিষ্ঠানে হেলান দিয়ে শীত থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে রাত্রি কাটায়।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এখন আর আগের মতো গ্রামের স্কুলের বারান্দায় অবস্থান করার তাদের সুযোগ নেই। বর্তমানের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারন্দাগুলোতে গ্রীল হয়ে গেছে। মসজিদ ও মন্দিরগুলোতেও তাদের থাকতে দেয়া হয় না বলে জানা গেছে। তাই শীতে কাবু হয়ে ঠান্ডা বাতাস থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে নোংরা কাপড় শরীরে জড়িয়ে উষ্ণতা নেয়ার চেষ্টায় লোকালয়ের ভীড়ে থাকার চেষ্টা করে থাকে। অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতার কারণে অনেক সময় লোকালয়ের ভীড়েও সুযোগ মিলে না বলে জানা গেছে।
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের আঠার বাড়িয়া টাওয়ারের মোড়ে ছাব্বির নামধারী এক পরিচয়হীন মানসিক রোগীকে শৈত্য প্রবাহের মধ্যে ঠান্ডাজনিত অসুখে আর শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট করতে দেখা গেছে। শীতের দাপটে জবুথবু অবস্থায় হাঁটু গেড়ে রাত্রি যাপন করে কখনো রাস্তার পাশে, কখনো চায়ের স্টলের পাশে। কখনো দোকানের সামনে কখনোবা গাছতলায়। অভিজ্ঞদের ভাষ্য এটা শুধু নিকলীতে অবস্থানকারী মানসিক প্রতিবন্ধী ছাব্বিরের ক্ষেত্রে নয় এটা গোটা বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জের বাস্তবতার চিত্র।
মানবতার সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি থেকে শুরু করে সচেতন মহলের যুক্তি মানসিক ভারসাম্যহীনদের পরিচর্যায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে অধিক পরিমাণে সেবা কেন্দ্র স্থাপনে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি সঠিক সেবামূলক কার্যক্রম সচল রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বজনদেরকেই মানসিক রোগীদের বিষয়ে তদারকি করা। তদারকির অভাবে যেনো কোন রোগী ঘরছাড়া না হয়। সরকারিভাবে মানসিক রোগীদের ডাটাবেজ তৈরি করা থেকে শুরু করে খোঁজ খবর নেয়ার পাশাপাশি সেবামূলক কার্যকরী ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিতে হবে। শীতে যাতে অনাদরে আর অবহেলায় কোন মানসিক রোগীর অস্বাভাবিক মৃত্যু না হয় এ দিকেও খেয়াল রাখা নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে নিতে হবে। সরকারের দায়বদ্ধতার পাশাপাশি বিত্তশালী জনগণ ও দেশি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় পারে এ সকল মানসিক প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে। তবেই কমে আসবে মানসিক রোগীর সংখ্যা।