
শেরপুর প্রতিনিধি
বৃষ্টি না থাকায় শেরপুরের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে ভোগাই নদীর গড়কান্দা
গতকাল মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় শেরপুরের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে জেলার চারটি পাহাড়ি নদ–নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা নদীতে পাহাড়ি ঢল না থাকায় বন্যার শঙ্কা থেকে স্বস্তি পেয়েছেন এলাকাবাসী।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর ভোগাই নদের পানি বিপৎসীমার ২৪৬ সেন্টিমিটার ও শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৬৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঝিনাইগাতীতে মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি রাত থেকে কমতে শুরু করেছে।
এর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছিল, ২০ মে পর্যন্ত ময়মনসিংহ, সিলেট ও রংপুর বিভাগের নিম্নাঞ্চলগুলো সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে। এ কারণে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষি খাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বন্যা মোকাবিলায় শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ের কৃষকদের দ্রুত আধা পাকা ধান কেটে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছিল। বিশেষ করে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় যেসব ধান ৯৫ শতাংশের বেশি পেকে গেছে, তা দ্রুত কাটার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এরই মধ্যে জেলার ৯০ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। বাকি ধানগুলোও দ্রুত কেটে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইগাতীর দিঘিরপাড় এলাকার গৃহিণী আশুরা বেগম (৪২) বলেন, ‘যাক আল্লাহ আমগরে এইবারের মতো রহম করছে। যেমনে মহারশির পানি বাড়ছিল, ঠিক সেই ভাবেই পানি রাইত থাইকা কমা শুরু অইছে।’ নালিতাবাড়ী চেল্লাখালী নদীর পাড়ের সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন (৫০), ‘নদীতে যেমনে ঢল নামছিল, এতে আমরা বন্যার আশঙ্কা করছিলাম। গত রাইত থাইকা নদীতে পানি কমতে শুরু করছে। অহন আমরা একটু স্বস্তির মধ্যে আছি।’
বাঘবেড় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরে আলম বলেন, ‘বৃষ্টি না থাকায় গত রাত থেকে নদ–নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পাহাড়ি ঢলে পানিতে চেল্লাখালী নদীর বাঁধের কোথাও ক্ষতি হয়নি।’
মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি রাত থেকে কমতে শুরু করেছে জানিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এর ফলে বন্যার শঙ্কা মুক্ত আছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন। নালিতাবাড়ীর ইউএনওর দায়িত্বে থাকা (এসি ল্যান্ড) মো. আনিসুর রহমানও একই কথা বলেছেন।
পাউবোর শেরপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জেলার চারটি নদ–নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের মেঘালয় ও জেলায় ১৭ ঘণ্টা বৃষ্টি না হওয়ায় পাহাড়ি ঢলও কমে গেছে। ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় পাহাড়ি ঢলে নদীরক্ষা বাঁধের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ও বৃষ্টি না হওয়ায় জেলায় বন্যার শঙ্কা আপাতত নেই।