শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরের জাজিরায় একদিকে চলছে পদ্মার তীর রক্ষা বাঁধের কাজ, অপরদিকে শুরু হয়েছে পদ্মার ভাঙন। গত এক সপ্তাহ যাবৎ কয়েকটি পয়েন্টে পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে কয়েকশ পরিবার। বিশেষ করে জাজিরা ইউনিয়নের পাথালিয়া কান্দির বাসিন্দারা। আর এই ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব জানান, এখন যেই যেই পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেসব পয়েন্টে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করাই তাদের মূল লক্ষ্য। ভাঙন ঠেকাতে ১ হাজার ৩০০ শ্রমিক নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা ভাঙন কবলিত বিভিন্ন পয়েন্টে বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
শরীয়তপুর পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার ভাঙনে জাজিরা উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। পদ্মা নদীর দীর্ঘস্থায়ী ভাঙন রোধে ৮ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার নদীরক্ষা প্রকল্প হাতে নেয় পাউবো। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ‘শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পদ্মা নদীর ডান তীরের ভাঙন থেকে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকা রক্ষা’ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) এর অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৮৬০ কোটি টাকা। এরপর ৩২টি প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ করে পাউবো গত মে মাসের শেষের দিকে কাজ শুরু হরে। ২০২৬ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বর্তমানে বাঁধের আওতায় জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা, পালের চর, বড় কান্দি ও জাজিরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় চলছে সিসি ব্লক স্থাপনসহ বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ। প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শেষ করতে ১ হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানায় পাউবো।
এর মধ্যে বর্ষা মৌসুম শুরু হলে পদ্মার পানি ও স্রোত বাড়তে থাকে। ফলে গত এক সপ্তাহ যাবৎ জাজিরা উপজেলার পাথালিয়া কান্দীসহ কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়। এতে বেশকিছু ফসলি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে যায়। এদিকে ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু করেছে পাউবো। জরুরি ভিত্তিতে ওই ১ হাজার ৩০০ শ্রমিককে ভাঙন কবলিত পয়েন্টে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা একাধিক বার্জের মাধ্যমে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে যাচ্ছেন। এতে স্বস্তি ফিরেছে ভাঙন কবলিত পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের। পাউবোর কর্মযজ্ঞ দেখে তারা এখন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। এদিকে ভাঙন কবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের পাশাপাশি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার কথা জানিয়েছে জেলা পাউবো।
সরেজমিনে পাথালিয়াকান্দি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা অনেকটা বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে স্রোতও। এতে নদীপাড়ের বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে পাথালিয়া এলাকার বেশ কিছু ফসলি জমি ও বসতবাড়ির জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আতঙ্কে রয়েছে কয়েকশো পরিবার। ভাঙনরোধে শত শত শ্রমিক বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াকুব আলী জানান, কয়েকদিন আগেও বাড়ি থেকে নদী কিছুটা দূরে ছিল। কয়েক দিনের ভাঙনে নদী এখন বাড়ির উঠানের কাছে চলে এসেছে।
জানতে চাইলে জেলা পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক বলেন, গত এক সপ্তাহে পাথালিয়াকান্দিসহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে পাউবো আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, ‘আশা করছি পদ্মার ভাঙন থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে পারব।’
এছাড়া প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলের মানুষ নদীভাঙন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের ভাঙন কবলিত জনপদ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে এবং পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবনমান উন্নত হবে বলে তিনি আশা করেন।