
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
হিংস্র শিয়ালের আক্রমণে অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের অণ্ডকোষ এবং আরেকজনের কান কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছে শিয়ালটি। সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে শহরের সার্কিট হাউজ, পুলিশ লাইন এবং বটতলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুইজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ লাইন এলাকার মোটরসাইকেল মেকানিক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দোকানের সামনে হঠাৎ একটি শিয়াল এসে পথচারীদের আক্রমণ করতে শুরু করে। শিয়ালটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করলে সেটি আরও হিংস্র হয়ে ওঠে এবং কুকুরকেও আক্রমণ করে। পরে আমরা শিয়ালটিকে ধাওয়া করলেও সেটি লোকালয়ের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর সেটি আবার বেরিয়ে এসে পথচারীদের আক্রমণ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিয়ালটি শ্রমিক নেতা শচিনের অণ্ডকোষ এবং মোখলেস নামে এক ব্যক্তির কান ছিঁড়ে নিয়ে যায়। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শ্রমিক নেতা জেমস পিটার শচিন বলেন, ‘আমি হাড়িভাঙ্গা থেকে মিশনমোড়ের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ শিয়ালটি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং অণ্ডকোষ কামড়ে ছিঁড়ে ফেলে। নিজেকে রক্ষার জন্য শিয়ালের সঙ্গে বেশ লড়াই করতে হয়। এক পথচারী লাঠি নিয়ে এগিয়ে এলে শিয়ালটি পালিয়ে যায়। তবে এর মধ্যেই শিয়ালটি আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ে দিয়েছে।’
মোখলেস নামের আহত ব্যক্তি জানান, শিয়ালটি তার ওপর আক্রমণ করে এবং কান কামড়ে ছিঁড়ে নেয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেনামৈত্রী বাজারের ব্যবসায়ী সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমরা কয়েকজন একত্র হয়ে শিয়ালটিকে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু সেটি এতটাই হিংস্র ছিল যে আমাদের ওপরই হামলা চালায়। ভয়ে সড়কের লোকজন ছোটাছুটি করে নিরাপদ জায়গায় সরে যায়। এর মধ্যেই শিয়ালটি একটি শিশুসহ আরও কয়েকজনকে আক্রমণ করে।’
লালমনিরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সামিরা হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘শিয়ালের কামড়ে আহত চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আলিফ নামে এক শিশু রয়েছে। আহতদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শচিন ও মোখলেসকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ‘অন্য আরও ৫-৬ জন শিয়ালের আক্রমণে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তারা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেননি।’
লালমনিরহাট বন বিভাগের কর্মকর্তা মাহবুবুল হক বলেন, ‘খাদ্যের সংকট এবং বাসস্থানের অভাবে শিয়ালসহ কিছু বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসছে। আমরা শুনেছি, ৯-১০ জনকে শিয়াল কামড়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। হিংস্র শিয়ালগুলোর আতঙ্ক দূর করতে আমরা যৌথভাবে কাজ করছি। বন বিভাগ এবং পুলিশ যৌথভাবে হিংস্র শিয়ালগুলো ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
এদিকে, শহরের সার্কিট হাউজ, পুলিশ লাইন এবং আশপাশের এলাকাগুলোতে লোকজন শিয়ালের আক্রমণের আতঙ্কে রয়েছেন। প্রশাসন সবাইকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রয়োজন হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের গভীর রাতে বের হওয়ার সময় সতর্ক থাকা এবং দলবদ্ধভাবে চলাচলের অনুরোধ জানানো হয়েছে। শিয়ালের আক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসন ও স্থানীয়দের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।