
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহিদওহাবপুর ইউনিয়নের নিমতলা-কোলারহাট সড়কের মাঝে কুমার নদের ওপরের পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওই স্থানে পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ব্রিজ নির্মাণের কথা থাকলেও আড়াই বছর পরও শুরু হয়নি নতুন ব্রিজ নির্মাণের কাজ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তিন উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে পুরাতন ব্রিজ। ভেঙে ফেলা ব্রিজের পাশ দিয়ে নির্মিত সরু কাঁচা রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ ও ছোট যানবাহন। এতে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। তবে বন্ধ রয়েছে বাস, ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ডভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স ও প্রাইভেটকার চলাচল। অবশ্য কাজটি বাতিল করে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণে আবারও টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এলজিইডি।
জানা গেছে, নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগে আশাবাদী ছিলেন রাজবাড়ী সদর, বালিয়াকান্দি ও ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। তবে ব্রিজের কাজ শুরু না করেই পালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাই দেড় বছরে ব্রিজ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি আড়াই বছরেও।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাজবাড়ী সদরের কোলারহাট-নিমতলা সড়কের কোলারহাট এলাকায় কুমার নদের ওপর নির্মিত পুরাতন গার্ডার ব্রিজ ভেঙে নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বরিশালের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স রুপালী কনস্ট্রাকশন ব্রিজটি নির্মাণকাজের টেন্ডার পায়। ২০২৩ সালে জুন মাসে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হবার কথা ছিল। ২০ মিটার দৈর্ঘ্যে ও ৭.৩৩ মিটার প্রস্থের ব্রিজটির নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৮৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা। তবে কাজ শেষ করাতো দূরের কথা, শুরুই করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ভেঙে ফেলা ব্রিজের পাশ দিয়ে একটি সরু কাঁচা রাস্তা তৈরির পর কাজ ফেলে রেখে পালিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। সরু এ রাস্তায় গাড়ি উল্টে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ব্রিজ না থাকার ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের নিমতালা থেকে কোলারহাট সড়কের মাঝে কুমার নদের ওপর নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য পুরাতন ব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে সেখানে ব্রিজ নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। কোনো সাইনবোর্ড দেওয়া নেই, নেই কোনো ব্যারিকেডও। অপরিচিত কেউ বিষয়টি বুঝতে না পারায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেক যানবাহন এই রাস্তা দিয়ে এসে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিকল্প সড়ক ব্যবহারে ভোগান্তি বেড়েছে। নিমতলা থেকে কোলারহাট বাজার কিংবা বালিয়াকান্দির জামালপুর ইউনিয়ন ও ফরিদপুরের মধুখালি যেতে ঘুরতে হচ্ছে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা।
সেখানকার স্থানীয় ও বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, পুরাতন ব্রিজ ভাঙার পর থেকে দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। ব্রিজের দুই পাড়ে কোলারহাট বাজার। ব্রিজের পূর্বপাশে শতাধিক এবং পশ্চিম পাশে ৫ শতাধিক দোকান রয়েছে। ব্রিজের কাজ বন্ধ থাকায় কোলারহাট বাজারের একপাশে প্রায় অর্ধশত দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পাশের সরু রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। অনেক মানুষ গর্তেও পড়ে যায়। ব্রিজ না থাকায় গর্ভবতী নারী বা অন্য রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া খুবই কষ্ট হয়। অনেক পথ ঘুরে যেতে হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এই সরু কাঁচা রাস্তায় হাটাও যায় না। আমাদের দাবি দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।
কোলারহাট বাজারের ব্যবসায়ী রাজু মন্ডল বলেন, কোলারহাট বাজার পেঁয়াজ, সবজি ও পশুহাটের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু কুমার নদের ওপর ব্রিজ ভাঙা থাকার কারণে কোলারহাটে বড় ট্রাক ঢুকতেও পারে না আবার বের হতেও পারে না। এতে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত এই ব্রিজ সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
দেবাশীষ বিশ্বাস নামের এক ব্যাক্তি বলেন, আমার বাড়ি বালিয়াকান্দির জামালপুর ইউনিয়নে। পেশাগত কাজে আমাকে প্রতিদিনই রাজবাড়ীতে আসতে হয়। নিমতলা-কোলারহাট সড়ক দিয়ে আমার রাজবাড়ী আসতে ১৫/২০ কিলোমিটার পথ কম ঘুরতে হয়। কিন্তু এই রাস্তায় মাঝে কুমার নদের ওপর নতুন ব্রিজ করার জন্য পুরাতন ব্রিজ ভেঙে ফেলার কারণে আমাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। দ্রুত ব্রিজ সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
এলজিইডির রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার অজুহাতে কাজ ফেলে পালিয়ে যায় ঠিকাদার। বিধি অনুযায়ী ঠিকাদারকে জরিমানার পাশাপাশি কাজটি বাতিল করে নতুন করে ব্রিজ নির্মাণে আবারও টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
রাজবাড়ী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ হোসেন বলেন, রুপালী কনস্ট্রাকশন কাজ করবে না বলে আমাদের জানিয়েছে। বিধি মেনে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন করে আবার টেন্ডার আহ্বান করে কাজ শুরু করা হবে।