আমার কাগজ ডেস্ক
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কঠোর অবস্থান সত্ত্বেও ইসরাইল ও গাজার যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও দু’দিন বাড়ানো হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। টাইমস অব ইসরাইল খবর দিয়েছে যে, কাতারের সফল মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির এই মেয়াদ বর্ধিত করা হয়েছে। ফলে এই মেয়াদ আজ মঙ্গলবার এবং আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর অর্থ হলো আরও বন্দিকে মুক্তি দেবে দুই পক্ষ। ইসরাইল প্রতিদিন মুক্তি দেবে ফিলিস্তিনি ৩০ জন করে বন্দিকে। সোমবার ৩৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল। অন্যদিকে ১১ জন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।
ওদিকে বিশ্বনেতাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি। তিনি বলেছেন, বর্তমানে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি যাতে স্থায়ী হয়, সে জন্য তীব্র গতিতে এবং জরুরি ভিত্তিতে তা নিশ্চিত করতে হবে বিশ্ব নেতাদের।
আয়মান সাফাদির নেতৃত্বে ইউনিয়ন ফর দ্য মেডিটারেনিয়ান সম্মেলন চলছে। এতে যোগ দিয়েছেন ওই অঞ্চলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। একই সঙ্গে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে গেছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। এ সময়ে তিনি বিবৃতিতে ওই আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির একটিই মাত্র সমাধান। তাহলো- দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান। এ সময়ে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যাওয়া এবং অসলো চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার জন্য দায়ী করেন ইসরাইলকে। তিনি বলেন, আমরা সবাই এখানে চরম এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চাই, তাহলো এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। আমাদের এই অঞ্চলকে টেকসই এবং ব্যাপক বিস্তৃত শান্তির অধীনে আনতে হবে।
যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়ে জো বাইডেন বলেছেন, এই চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে গভীরভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা এবং কূটনীতি নিয়ে গভীরভাবে যুক্ত আছি আমি, যাতে একটি ভাল ফল আসে। প্রথম দফা যুদ্ধবিরতির শেষদিন ছিল সোমবার। এদিন ইসরাইলি আরও ১১ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয়া সম্পর্কে বাইডেন বলেন, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তারা পরিবারের কাছে ফিরে গিয়েছেন। মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আছে টিনেজ, মায়েরা এবং দাদী-নানীরা। এ সময় তিনি ইসরাইলি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক চার বছর বয়সী আভিগেইল ইডানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এই বাচ্চাটার পিতামাতা হামাসের ৭ই অক্টোবরের হামলায় নিহত হয়েছেন। তারপর তাকে জিম্মি করে হামাস। জো বাইডেন বলেন, মুক্তি পাওয়ার পর আভিগেইলের পরিবারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। সে যাতে যথাযথ যত্ন পায় তা নিশ্চিত করতে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে ইসরাইলের সঙ্গে কাজ করছি। এ সময় গাজা উপত্যকায় দুর্ভোগে থাকা নিরীহ মানুষের কাছে আরও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোনো দেশ ফিলিস্তিনিদের জন্য অধিক মানবিক সহায়তা দান করেনি। ইসরাইলি সব জিম্মি মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কাতার ও মিশরকে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।
ওদিকে পেন্টাগনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় মানবিক সহায়তা অবশ্যই বৃদ্ধি করার কথা ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের কাছে পুনর্ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। রাষ্ট্রীয় ও বিরাষ্ট্রীয় পক্ষকে বর্তমানের যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় তারা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ দু’দিন বৃদ্ধি করা নিয়েও কথা বলেন।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি ৩ শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করার দায়ে এক মার্কিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সে হত্যার দায় স্বীকার করেনি। তার নাম জ্যাসন জে. ইটন (৪৮)। সোমবার ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। তার জামিন নামঞ্জুর করেছে আদালত। নিহত ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা হলেন হিশাম আওয়ারতানি, কিন্নান আবদেল হামিদ ও তাহসিন আহমেদ। শনিবার ইউনিভার্সিটি অব ভারমন্ট ক্যাম্পাসের কাছে তাদেরকে গুলি করা হয়। এতে গুরুতর জখম হন তারা। পরে তাদের মৃত্যু হয়।