আমার কাগজ ডেস্ক
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের তীব্রতা বেড়েছে। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে চলছে ধরপাকড়ও। এখন পর্যন্ত অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় (ইউটি অস্টিন) এবং ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) এর শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এই খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্যাম্পাসের দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে আনতে ন্যাশনাল গার্ডকে মোতায়েনের পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন হাউস স্পিকার মাইক জনসন।
বুধবার অস্টিন এবং লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে ধরপাকর চালানো হয়। ওইদিন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রাউন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে প্রতিবাদ করেছিল।
গত সপ্তাহে, নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছিল এই বিক্ষোভ। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনে আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছিল প্রতিবাদকারীরা। তাদের দাবি, ওই কোম্পানিগুলো গাজায় মাসব্যাপী যুদ্ধ পরিচালনায় ইসরায়েলকে সক্ষম করে তুলছে। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৪ হাজার ২৬২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আল-জাজিরা বলছে, বিক্ষোভটি শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে ইহুদি-বিদ্বেষের নাম করে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়।
বুধবারের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদটি হয়েছিল ইউটি অস্টিনে। শহরটিতে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান করিডোরে মিছিল করেছিল। এমনকি সেখানে একটি ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনাও করেছিল তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ক্যাম্পাসে তারা কোনও প্রকার ‘ব্যাঘাত সহ্য করবে না’। ভিড় ছত্রভঙ্গ করার জন্য স্থানীয় ও রাজ্য পুলিশকে ডাকে কর্তৃপক্ষ।
এরপরই সেখানে শত শত পুলিশ ছুটে যান। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আসেন ঘোড়ায় চড়ে। পুলিশ জনতার উপর লাটিচার্জ করে এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক গ্রেফতার করে।
টেক্সাসের জননিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছে, অন্তত ৩৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ‘কারাগারে রাখা’র কথা জানিয়েছেন টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট। তিনি বলেন, ‘ঘৃণ্য ও ইহুদি বিরোধী বিক্ষোভে’ অংশ নেওয়ায় তাদের বহিষ্কার করা উচিত।
ইউটি অস্টিনের ইতিহাসের অধ্যাপক জেরেমি সুরি। তিনি একজন ইহুদি। আল জাজিরাকে জেরেমি বলেছিলেন, বিক্ষোভে ‘ইহুদি বিরোধী কিছুই’ ছিল না।
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা ‘মুক্ত ফিলিস্তিন’ বলে চিৎকার করছিল। তারা হুমকিমূলক কিছু বলেনি। তারা যখন দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিল, আমি দেখলাম, রাজ্য পুলিশ, ক্যাম্পাস পুলিশ, সিটি পুলিশসহ পুলিশের একটি বাহিনী আসছে…তাদের অনেকের হাতে বন্দুক ছিল। অনেকের হাতে ছিল আবার রাইফেল। তারপর কয়েক মিনিটের মধ্যেই ছাত্র জনতার মধ্যে ঢুকে পড়ে পুলিশ এবং তাদের গ্রেফতার করতে শুরু করে।’
লস এঞ্জেলেসের ইউএসসি ক্যাম্পাসের বিক্ষোভস্থলেও পুলিশ ঢুকে পড়ে। ইউএসসি প্রভোস্ট অ্যান্ড্রু গুজম্যান ক্যাম্পাসে একটি মেইল পাঠালে সেখানে পুলিশ যায়। ওই মেইলে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা ‘আমাদের অফিস এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।’
‘গাজায় যুদ্ধবিরোধী এই প্রতিবাদ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ছিল’ বলে জানিয়েছেন আল জাজিরার সাংবাদিক রব রেনল্ডস। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কোনও সংঘর্ষ বা হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড করতে দেখিনি।’