আমার কাগজ প্রতিবেদন
মির্জা ফখরুল
দীর্ঘ সাড়ে ৩ মাস কারাবন্দির পর মুক্তি পেলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার বিকাল পৌনে ৪টায় কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রথমে মির্জা ফখরুল এবং ৪ মিনিট পর আমির খসরু মুক্তি পান। এর আগে দুপুরে মুক্তি পান দলটির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে উপস্থিত নেতাকর্মীরা করতালি ও ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে নেতাদের বরণ করেন।
এ সময় তারা মুহুর্মুহু স্লোগান দেন। অনেকদিন পর তিন হেভিওয়েট নেতাকে পেয়ে নেতাকর্মীদের অনেকটা উজ্জীবিত দেখা যায়। কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু শারীরিকভাবে অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য তারা বিদেশে যেতে পারেন।
কারাফটকে নেতাকর্মীদের হাত তুলে অভিবাদন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ সব সময় গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে। এই সংগ্রামে তারা জয়ী হবে। গণতন্ত্র ফেরানোর চলমান আন্দোলন বিজয় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’
মুক্তি পাওয়ার পর নেতাকর্মীরা ফুল ছিটিয়ে মির্জা ফখরুল ও আমির খসরুকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আন্দোলনের কোনো ক্ষতি হয়নি। ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ৭ জানুয়ারির একপক্ষীয় নির্বাচন করে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিএনপির কোনো ক্ষতি হয়নি।
পরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ওরা রাষ্ট্রশক্তিকে কবজা করে ক্ষমতা দখল করেছে। নির্বাচনে তারা নৈতিকভাবে জনগণের কাছে পরাজিত হয়েছে। আমরা বলতে চাই, গণতন্ত্রের আন্দোলন অটুট থাকবে। যতদিন দেশে গণতন্ত্র ফেরত না আসবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আসবে ততদিন এ সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে তাইফুল ইসলাম টিপু, শামীমুর রহমান শামীম, নিপুণ রায় চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন আজাদ, সাবেক সংসদ-সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। মহাসচিবের গাড়ি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মোটরবাইকে কর্ডন করে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় পর্যন্ত পৌঁছে দেন। সেখানে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহান ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর গুলশানের বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব। আর আমির খসরু সরাসরি যান গুলশানের বাসায়।
বিএনপির দাবি, গত বছরের ২৮ অক্টোবরে ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ডের পর মহাসচিবসহ দুই স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও অন্তত ২৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিনের পর থেকে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত বিএনপি হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ ও গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করে।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্নাসহ অনেক নেতাকর্মী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে এখনও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনসহ অন্তত ১৫ জন কেন্দ্রীয় নেতা কারাগারে রয়েছেন।
২৯ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এবং ২ নভেম্বর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গুলশানে তাদের বাসা থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই দিন সংঘর্ষের ঘটনায় ফখরুলের বিরুদ্ধে ১১টি এবং খসরুর বিরুদ্ধে দশটি মামলা হয়। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা ছাড়া সব মামলায় তারা বিভিন্ন সময়ে জামিন পান।
বুধবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনার মামলায় বিএনপি এই দুই শীর্ষ নেতার জামিন মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার সকালে দুই নেতার আইনজীবীরা বিভিন্ন মামলার জামিন আদেশ, প্রডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহারের আদেশগুলো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার পর বিকালে তারা মুক্তি পান। এর আগে দুপুর ২টার দিকে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। গত বছরের ১০ অক্টোবর রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার হন এ্যানি।