
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) রেহেনা আকতারের বিরুদ্ধে লোকাল রিলেশন্স (এলআর) ফান্ডের নামে কোটি-কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। বালুমহাল ইজারা থেকে ৫% কমিশন হিসাবে কয়েক কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন তিনি। ডিসি রেহেনা আকতার ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই মানিকগঞ্জে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ২৭তম বিসিএস কর্মকর্তা। অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ মে মানিকগঞ্জে ৭টি বালুমহাল ২১ কোটি ৪৩ লাখ ৮১ হাজার ৬১১ টাকা মূল্যে ইজারা দেন ডিসি। সেই বালুমহালের কার্যাদেশ আটকে রেখে ইজারাদারদের কাছ থেকে ৫ শতাংশ কমিশন আদায় করেন। সাতটি বালুমহাল থেকে ৫ শতাংশ কমিশন হিসাবে ১ কোটি ৭ লাখ ১৯ হাজার ৮০ টাকা নিয়েছেন তিনি। এর আগে ২০২৩ সালে এসব বালুমহাল থেকে একই কায়দায় ৩ শতাংশ কমিশন নেন তিনি। আর এই কমিশন বাণিজ্যে ডিসি রেহেনা আকতারের সহকারী (সিএ) শরীফ এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাখার সিএ বজলু জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া বিভিন্ন হাট-ঘাট ইজারা, লঞ্চ-বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহণ সংগঠন, ইটভাটা, জলমহালসহ বিভিন্ন ক্রয় কমিটি থেকে কমিশন বাণিজ্য করেছেন এই প্রভাবশালী ডিসি। সর্বশেষ চাকরির নিয়োগেও বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুস নিয়েছেন। গেল কুরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা দিয়ে এলআর ফান্ডের নামে ইজারাদারদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা বাণিজ্য করেছেন। আরও জানা গেছে, চলতি বছরে মানিকগঞ্জে বিখ্যাত হাজারী গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে খেজুর গাছের চারা রোপণ, সভা-সেমিনার, প্রদর্শনী করেন ডিসি রেহেনা আকতার। তার বিরুদ্ধে খেজুর গাছ প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা লোপাটের অভিযোগ ওঠেছে। ইতোমধ্যে খেজুর গাছ প্রকল্প নিয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালুমহাল ইজারাদার বলেন, প্রত্যেক বছর বালুমহাল ইজারা নেওয়ার সময় ডিসির এলআর ফান্ডে কমিশন দিতে হয়। এ বছর ডিসির দাবি ৫ শতাংশ কমিশন দিতে হবে। পরে জেলার সব ইজারাদার আলাপ করে ডিসির চাহিদা অনুযায়ী ৫ শতাংশ টাকা দেওয়ার পর কার্যাদেশ আমরা হাতে পাই। হরিরামপুর বালুমহাল ইজারাদারদের কারণে ডিসিকে ৫ শতাংশ কমিশন দিতে হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একাধিক কর্মচারী বলেন, এই ডিসি আমাদের মানুষই মনে করে না। তার অত্যাচারে সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারী অতিষ্ঠ।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে (০১৭১১-১৬৭২৫০ ও ০১৭১৩৩৫৩৩০০) যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পরও কোনো উত্তর মেলেনি।
এদিকে বর্তমানে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত অধিকাংশ জেলা প্রশাসক স্থানীয় সাবেক এমপিদের সাথে মিলেমিশে টেন্ডারবাজি ও ঘুষ দুর্নীতির সাথে জড়িত থেকে কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তদন্তপূর্বক তাদের সম্পদের হিসাব নিলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।