
আমার কাগজ ডেস্ক
শক্তিশালী ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ২০০০ ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার (৩১ মার্চ) দেশটির সামরিক সরকার জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৫৬ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছে আরও ৩৯০০ জন।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দেশটির সামরিক সরকার সোমবার থেকে সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে। এ সময়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এমআরটিভি।
গত শুক্রবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার তিন দিন পর মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে জীবিতদের সন্ধান আরও জোরদার করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
সরকারি মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এমআরটিভিকে জানান, মাণ্ডালে অঞ্চলে ২৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সেখানে ভূমিকম্পে মসজিদ, সেতু এবং বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আসলে ভূমিকম্পে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। তবে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল হয়ে যাওয়ায়, অনেক অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ সম্পর্কে খুব কমই জানা যাচ্ছে।
জাতিসংঘ জরুরি ভিত্তিতে ৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তার আবেদন জানিয়েছে, কারণ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে মানবিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা।
ক্ষতিগ্রস্ত হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে গেছে। স্থানীয়রা বিবিসিকে জানিয়েছে, রাস্তায় পচা মৃতদেহের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটির (আইআরসি) মিয়ানমারের প্রোগ্রাম উপপরিচালক লরেন এলেরি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) সংবাদ সংস্থাকে জানান, এ মুহূর্তে ধ্বংসযজ্ঞের প্রকৃত মাত্রা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।
দেশটির ছয়টি অঞ্চলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এলেরি জানান, ভূমিকম্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো ও চলমান ভূমিধস উদ্ধার কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তুলছে।
তিনি আরও জানান, তারা মাণ্ডালের কাছাকাছি একটি শহরের কথা বলছিল, যেখানে ৮০ শতাংশ ভবন ধসে পড়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এটি খবরেও আসেনি। কারণ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ধীরগতির কারণে তথ্য পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে।
ভারী যন্ত্রপাতির অভাবেও উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে উদ্ধারকর্মীদের প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হাতে করেই ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিতদের সন্ধান চালাতে হচ্ছে। সেখানে তাপমাত্রা বর্তমানে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ভূমিকম্পের প্রভাব পার্শ্ববর্তী থাইল্যান্ডেও অনুভূত হয়েছে। সেখানে ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন উচ্চ ভবন ধসে পড়ার সময় সেখানে কর্মরত ছিলেন। ব্যাংককে ফাটল ধরা ভবনগুলো থেকে আজ সোমবার হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিবিসির রেবেকা হেনশকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সামরিক সরকার এখনও সেই সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর ওপর বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যাদের সাথে তারা গত চার বছর ধরে লড়াই করছে।