
আমার কাগজ ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই আরেকটি বাণিজ্য চুক্তি করতে যাচ্ছে এবং সেই চুক্তি হয়তো ভারতের সঙ্গে হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা বলেন। তাঁর এ কথার বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়ে যায় এই কারণে যে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সময় ওয়াশিংটন ডিসিতে আছেন।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনের সূত্রে ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, ভারত প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বেশি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পেতে চায় আর তাই ইন্দোনেশিয়ার তুলনায় কম হারে শুল্ক–সুবিধা চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে। যেখানে শুল্ক হার ধরা হয়েছে ১৯, ভারতের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশের নিচে হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চুক্তি প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘তারা আমাদের ইন্দোনেশিয়ার বাজারে প্রবেশাধিকার দিচ্ছে, যেটা আমাদের আগে ছিল না। সেটাই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ভারতও একই পথে এগোচ্ছে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা এখন ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। আপনাদের বুঝতে হবে, এর আগে আমাদের এসব দেশে প্রবেশাধিকার ছিল না। আমাদের লোকজন যেতেই পারত না। এখন শুল্কনীতি বদলের মাধ্যমে আমরা সে সুযোগ পাচ্ছি…।’
গত সপ্তাহেও ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল এ সপ্তাহের শুরুতে বলেন, ‘আলোচনা দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।’
ভারত এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে আছে। ভারতের জন্য এই দুই খাত অত্যন্ত সংবেদনশীল। অতীতের প্রতিটি বাণিজ্য আলোচনাতেই ভারত নিজের দুগ্ধশিল্পকে রক্ষা করে এসেছে। ফলে সম্ভাব্য কোনো মিনি বা অন্তর্বর্তী চুক্তিতেও এই দুই খাতের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তবে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম (৫০%) ও গাড়ি আমদানিতে (২৫%) যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক নিয়ে এখনো বিরোধ আছে। এসব বিষয়ে ভারত পৃথকভাবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছেও অভিযোগ জানিয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহ থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক ‘শুল্ক চিঠি’ পাঠাচ্ছে। পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার তারিখ ৯ জুলাই থেকে পিছিয়ে আগামী ১ আগস্ট করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ২০টির বেশি দেশকে আলাদা চিঠি দিয়ে রপ্তানিপণ্যের ওপর প্রযোজ্য শুল্ক হার জানিয়ে দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভারত তেমন কোনো চিঠি পায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের হিসাবের অনুসারে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে মোট পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ হাজার ৯২০ কোটি ডলার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে পণ্য রপ্তানি করেছে ৪ হাজার ১৮০ কোটি ডলারের, ২০২৩ সালের তুলনায় যা ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বা ১৪০ কোটি ডলার বেশি।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে পণ্য আমদানি করেছে ৮ হাজার ৭৪০ কোটি ডলারের, আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৩৭০ কোটি ডলার বেশি।
দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের তুলনায় যা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বা ২৪০ কোটি ডলার বেড়েছে।