এ বি সিদ্দিক
মামা,
আপনার কাছে লেখা চিঠিগুলো আমার মনের অনুভূতি হৃদয়ের স্পন্দন, জীবন স্মৃতির অপ্রকাশিত ঘটনা প্রবাহ এবং সমাজের মানুষের দুঃখ-কষ্ট, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, আবেগ-অনুভূতি নিয়ে দুঃখিনী মায়ের বর্ণমালায় বর্ণনামাত্র। এ লেখা আকাশের ধূমকেতু বা চীনের প্রাচীর বা মিশরের পিরামিডের মত চিন্তা না করে আত্মজিজ্ঞাসার বিষয়গুলো খুঁজে বের করাই হলো শুভ বুদ্ধির পরিচয়। যার ফলে সচেতনতাবোধ আর আত্মউপলব্ধি জাগ্রত হতে পারে।
মামা,
আমাদের আলাপ আলোচনা দীর্ঘ দিনের, তবে রয়ে সয়ে গেছেন কারণ মান অভিমান হৃদয়ের টান। মায়ের মুখে শুনা রূপ কথার গল্পের মত আমার নাম রাখা নিয়ে নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে দাদা-নানার মধ্যে বাক বিতন্ডা, বাড়াবাড়ি, রেষারেষি, মনোমালিন্য অবশেষে মহাধুমধাম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ নাটকের অবসান ঘটে। কবিয়াল নানার নামের প্রস্তাব ছিল বেনজীর আহমেদ কিন্তু দাদা রেহান উদ্দিন মুন্সি এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করে নানা যুক্তি দেখান। তার মতে বে- দিয়ে নাম রাখলে যে সব না সূচক শব্দের প্রভাব কর্মজীবনে পড়তে পারে তা হলো বেনামাজী, বেকার, বেহিসাবী, বেমানান, বেয়াক্কল, বেকুব, বেতাল, বেঈমান, বেসামাল, বেহায়া, বেশরম।
অনেকে বলে,
“নামের বড়াই কোরো নাকো নাম দিয়ে কি হয়?
নামের মাঝে পাবে নাকো আসল পরিচয়।”
৮০ বছরের বুড়ার নাম শিশু মিয়া, রাস্তায় ভিক্ষা করা লোকটির নাম বাদশাহ মিয়া, নামাজ রোজার খবর নেই- সে লোকটির তার নাম ঈমান আলী, চোখে দেখেনা যে লোকটি তার নাম নজর আলী। শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয় অথচ তার নাম আতর আলী। কোটি কোটি টাকার মালিক নাম গরীব উল্লাহ। শহর জীবন দেখে নাই, থাকে গ্রামে অথচ নাম শহর বানু।
আসলে,
বুনিয়াদি বট বৃক্ষ কত নাম তার,
অখাদ্য ফল যার কাকের আহার।
মামা
আমার নাম নিয়ে ভীষন টানা হ্যাচড়া। পাড়া-পড়শী, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের কাছে বক্কর। কোন এক ঘটনায় শ্বশুর গোষ্ঠীর কাছে সত্যবাদী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ৮২তম ব্যাচের আনন্দ মেলায় হাউজী খেলা পরিচালনা করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের কাছে হাউজী বকর, ভাগিনার খোলা চিঠি লিখতে গিয়ে এখন আমি ভাগিনা নামে পরিচিত। এ নামটি সামাজিক যোগাযোগে বেশ ভাইরাল হয়েছে। এ নামের এতো প্রচার এবং প্রসার যা কোন ক্রমেই এড়িয়ে যেতে পারছিনা। আমার অখন্ড নাম কাঁচের টুকরার মতো খন্ড বিখন্ড। মস্কো নগরের ঘন্টার মতো জোড়া লাগানো যাচ্ছেনা। বাংলাদেশের সংবিধানের মতো আমার নামের মৌলিকত্ব হারিয়ে ফেলছি।
সুলতান মাহমুদ যেমন আমাদের ভারত বর্ষ ১৭ বার আক্রমণ করেছে তেমনিভাবে বাংলাদেশের সংবিধান নানা কাটা ছেঁড়ার মধ্যে দিয়ে ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে। এ সংবিধান এখন ক্ষত বিক্ষত। প্রথম সংশোধন ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই। যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের জন্য এ সংশোধনী আনা হয়। প্রথম সংসদেই ৪ বার সংশোধনী আনা হয়েছে এবং এ সংসদেই ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এনে সংসদীয় ব্যবস্থা পাল্টিয়ে দিয়ে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন করা হয়েছিল যা বাকশাল নামে পরিচিত।
মামা,
এটি আপনার কাছে লেখা আমার ১৫ নম্বর পত্র। কাউকে আঘাত বা কটাক্ষ করা আমার লেখার উদ্দেশ্য বা বিষয় বস্তু নয়। চিত্র বিচিত্র ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরার মাধ্যমে পাঠকের আস্থা অর্জনই আমার উদ্দেশ্য। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এ চিঠি ঐতিহাসিক ঘটনা সমূহের দালিলিক অ্যালবাম। কবি গুরু রবি ঠাকুরের ‘স্ত্রীর পত্র’ নামক গল্পের নায়িকা মৃণাল। তার সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা আবেগ অনুভূতি আর নারীর প্রতি স্বামীর পরিবারের অনাদর অবহেলা এবং বিবাহিত জীবনের ১৫ বছর পর স্বামীর কাছে লেখা প্রতিবাদ লিপি এ গল্পের মূল বিষয়। ১২ বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ মৃণাল। তীর্থ ক্ষেত্র থেকে তার স্বামীর কাছে ১৫ বছর পর প্রথম ও শেষ লেখা। মৃণাল এ পত্রের মাধ্যমে তার ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনেছে।
আমিও এ দেশের দেশ প্রেমিক জনতার ক্ষোভ বিক্ষোভের কথা লিখে এ পর্যন্ত ১৫ টি পর্ব শেষ করলাম। কিন্তু নেতা নেত্রীদের চাপাবাজিতে এতো অতিষ্ঠ, মাঝে মাঝে মনে হয় লেখা থেকে দূরে সরে যাই। এদের কথা বার্তায় মনে হয় এখন বোবা ভালো গাইতে পারে, অন্ধ ভালো নাচতে পারে, বধির ভালো শোনে। বিশাল উন্নয়নের জোয়ার। দেখতে দেখতে অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর হয়ে যাচ্ছি। বলার কিছু নেই দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলা ছাড়া। জনগণ এখন বাবু রাম সাপুড়ের অঙ্গ বিকলাঙ্গ হীন সাপের নেউলের গোষ্ঠীর মতো, চৈতন্যহীন এবং বিবেক বিবেচনাহীন। বিভ্রম বিভ্রান্তিতে পড়ে জনগণ জ্ঞান শূন্য। এখন ঢুশ ঢাশ, ফৌঁসফাঁস কিছুই করতে পারেনা। সম্পূরক প্রশ্নের মত মনে পড়ে গেল, ভূপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গানটি,
শরৎ বাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে,
তোমার গফুর মহেষ এখন কোথায় কেমন আছে?
তুমি জানোনা,
হারিয়ে গেছে কোথায় কখন তোমার আমিনা,
শরৎ বাবু এ চিঠি পাবে কিনা জানিনা।
মামা
আমিও জানতে চাই আমার খোলা চিঠিগুলো তোমার কাছে পৌঁছে কিনা? দুঃখী মানুষের বোবা কান্না তুমি বুঝতে পার কিনা? তুমি খবর রাখো কিনা? দেশে এখন ৩০ টাকার আটা ৫৫ টাকা। হানাদার দেশ পাকিস্তানে চিনির কেজি ৫৮ টাকা দেউলিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায় ৮০ টাকা আর দরবেশ- আউলিয়ার দেশে চিনির কেজি ১৫০ টাকা ছুঁইছুঁই।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি খেয়ে ফেলছে মানুষের আয়। যেখানে এ দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশেরও বেশী সেখানে ভারতে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে। মধ্যবিত্তরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, ধার দেনায় মানুষ ডুবে যাচ্ছে। অভাবের তাড়নায় সংসার ভাংগছে, মানুষ হতাশায় আত্মহত্যা করছে, সঞ্চয় পত্র ভেংগে খাচ্ছে, নিম্ন আয়ের লোকেরা ঢাকা ছাড়ছে, দেশে বেকার বাড়ছে। দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার (২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী)। যুবক শ্রেণী মাদকে খুব বেশী আসক্ত হচ্ছে, মাদক ব্যবসার কারণে বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায় (ইউনাইটেড নেশানস কনফারেন্স অন ট্রেড এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর তথ্য অনুযায়ী)। মাদক কেনা বেচা করে অর্থ পাচার-এর দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম, এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে। মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত পুলিশ আদালতের কাঠগড়ায়।
সমবেদনা আর অনুসূচনার ভাটা পড়ছে, লজ্জা আর শ্রদ্ধাবোধ উঠে যাচ্ছে। দয়া মায়া কমে যাচ্ছে, প্রতিহিংসা বেড়ে যাচ্ছে, জীবন যাত্রার ব্যয় বাড়ছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট দেখা দিচ্ছে, সরকারী-বেসরকারী বিদেশী ঋণ ও করের বোঝা বাড়ছে, দেশ থেকে সম্পদ পাচার বাড়ছে, খাদ্যে ও ওষুধে ভেজাল বাড়ছে। ভেজাল খাদ্যে বাজার এখন সয়লাব। নিজেদের ক্ষতি নিজেরা করে আত্মবিধ্বংসী জাতিতে পরিণত হচ্ছি। জীবন এখন ভয়ংকর স্লো পয়জনিং এ চলছে। রোগ বাড়ছে কারণ মাছে দুধে ফরমালিন মিশাচ্ছি, বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে কলা পাকাচ্ছি। আম, জাম, লিচু পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং সংরক্ষণে ফরমালিন ব্যবহার করছি, চালকে চকচকে, মুড়িকে ধবধবে সাদা এবং মোটা তাজা করার জন্য ইউরিয়া সার ব্যবহার করছি। ফলের রসে মিশানো হচ্ছে নানা জাতের কেমিক্যাল ও কাপড়ের রঙ। মিষ্টি কুমড়া দিয়ে আমের জুস বানাচ্ছি। মসল্লায় মিশানো হয় মেটালিক অক্সাইড আর ইটের গুড়া। জিলাপি আর চানাচুরকে মচমচে রাখার জন্য পোড়া মোবিল ব্যবহার করা হয়। মিষ্টি, নুডলস, সেমাইতে কাপডের রঙ। শাক সবজি টাটকা রাখার জন্য মিশানো হয় কপার সালফেট এবং কাপড়ের সবুজ রঙ। ফলের শুরুতে কীটনাশক এবং শুটকি তেও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। ফল গাছে থাকতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। মসল্লায় মেটালিক অক্সাইড আর পানিতে সামান্য পারদ অক্সাইড মিশিয়ে বিশুদ্ধ পানি হিসাবে বাজারজাত করা হচ্ছে। তরমুজে সিরিজ দিয়ে পটাসিয়াম পার ম্যাংগানেট ঢুকানো হয় তরমুজকে লাল এবং মিষ্টি করার জন্য, কফিতে মিশানো হয় তেতুল এর বিচি। এসবের ফলে দুরারোগ্য ক্যন্সার ও মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে। প্রখ্যাত সাংবাদিক জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলায় ‘চোখের আড়ালে’ শিরোনামে সিরিজ রিপোর্ট করে ফিলিপ্স পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। লোক চক্ষুর অন্তরালে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে এই সিরিজ লেখা। যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলার ভেজাল বিরোধী অভিযান এখন আর চোখে পড়েনা। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সার্কাস মার্কা ভেজাল বিরোধী অভিযানে দায়িত্বহীনতার পরিচয় ছাড়া আর কিছুই না। একটু আধটু জরিমানা অসৎ ব্যবসায়ীদের টনক নড়ে না। মানুষ কি খাচ্ছে, হোটেল রেস্তোরাঁতে কি ধরনের খাবার রান্না হচ্ছে এ ব্যাপারে কারো মাথা ব্যথা নেই। সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরা চেতনার চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়াতে নতুন নতুন চেতনার গল্প তৈরী করে পাবলিককে বোকা বানানো হচ্ছে। আসলে পাবলিক কিন্তু এতো বোকা নয়। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল তার প্রমাণ।
মামা,
সম্প্রতি বাংলাদেশীদের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি রাজনীতি অঙ্গনে বেশ তোলপাড় তুলেছে। পত্রিকা, টকশোতে আলোচনার ঝড় বইছে। ১৭ কোটি মানুষ এ ভিসা নীতির আওতায় পড়েছে। দেশের জন্য লজ্জাষ্কর এবং বিব্রতকর। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন নতুন ভিসা নীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পরিষ্কার করে বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন। যারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হতে দিবেনা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যারা বাধার সৃষ্টি করবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেবেনা।
যুক্তরাষ্ট্রের এ নীতি কোন দল বা সংস্থা, সংগঠন, বিভাগ বা প্রতিষ্ঠান বা নির্দিষ্ট কারো বিরুদ্ধে নয়। শাসক ও বিরোধী দল এই সিদ্ধান্ত তাদের পছন্দ অনুযায়ী ব্যাখ্যায় ব্যস্ত। এ ভিসা নীতির ঘোষনার পরদিন বাংলাদেশে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির ৬ জন নেতার সাথে বৈঠক করে নিজেদের কৌশলগত অবস্থান নিশ্চিত করে। এর আগেও আমেরিকা র্যাবের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্যাংশন আরোপ করে এবং দুই দুইবার আমেরিকাতে অনুষ্ঠিত ১১০ টি দেশের গণতান্ত্রিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত দেওয়া থেকে বিরত থাকে যা দুঃখজনক। অংশগ্রহণমূলক কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা উল্লেখ না থাকলেও বিএনপি এ নীতিকে স্বাগত জানায়। সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা থাকলেও কর্মীদের চাঙ্গা রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মাথা ব্যথা করে লাভ নেই, ২০ ঘন্টা জার্নি করে অ্যাটলান্টিক পার হয়ে ওই আমেরিকা না গেলে কিছু আসে যায় না (প্রথম আলো ৪ জুন ২০২৩)।
অনেকে গণতন্ত্রের জন্য আমেরিকার এ মায়া কান্না ভালো চোখে দেখছে না। কারণ এরা বরাবর আধিপত্যবাদী এবং পরের ধনে পোদ্দারি করে। এরা নিজেরা গণতন্ত্রকামী কিনা অনেকের কাছে প্রশ্ন। এরা কোন ক্রমেই সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিদার নয়। হিলারী ক্লিন্টন যেবার ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি হেরে ছিলেন আদালতের নির্দেশে। সবাই জানে বেশী ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি হিলারি। ট্রাম্পকেই জিতিয়ে ছিল রাশিয়া। রাশিয়ানদের ডিজিটাল ভোট ছিনতাই নিয়ে কথা কিন্তু কম হয়নি। আমেরিকানরা মুখ ফুটে বলতে পারে না। ২০২২ সালে ট্রাম্প হেরে যাওয়ার পর নির্বাচন মেনে নেননি বরং ক্যাপিটাল দখলের ডাক দিয়েছেন। এতে মানুষ মারা যায়। নির্বাচনী ফল পাল্টিয়ে দেয়ার জন্য সাংবিধানিক ’’ক্যু’’ করার চেষ্টা করেছিলেন। পৃথিবীর অনির্বাচিত রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র মত প্রকাশের স্বাধীনতা হীন দেশগুলোর সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন অথচ অন্যদেশের গণতন্ত্রের জন্য নিজেরা কোরবানী হয়ে যাচ্ছেন। কি অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করে সে দেশের ধন সম্পদ লুট করেছিল সবাই জানে এবং বুঝে। আমেরিকা কিন্তু স্বার্থ ছাড়া কিছুই করেনা। তবে আমাদের অবস্থা ভিন্ন। কথায় বলে গরিবের বউ সকলের ভাবী। আমরা যদি নিজেদের মধ্যম আয়ের দেশ চিন্তা করি অথবা উন্নয়নের রোল মডেলের কথা চিন্তা করি তা হলে আমাদেরকে পৃথিবীর সকল দেশের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে। কারো সাথে শত্রুতা নয় এই নীতিতে চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আমাদের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। আমদানি কম রফতানি বেশী। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের রফতানি করেছিল ৬৭০ কোটি ডলার, আমদানী করেছিল ২৩০ কোটি ডলার। এককথায় দেশটি রফতানির একক বৃহত্তম দেশ। প্রবাসী আয়ের প্রধান উৎস। আমাদের দেশের বেশকিছু ছাত্র ছাত্রী স্নাতক পর্যায়ে পুরো বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন। খন্ডকালীন চাকরি করে পড়াশোনার খরচ যোগাচ্ছেন। আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বাড়তি ৬ বছর সুবিধা পাচ্ছি। সেটি যদি পেতে হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বড় নিয়ামক ভূমিকা পালন করবে। সংসদ সদস্য তারানা হালিম এর ভাষায় পিতা দিয়েছেন স্বাধীন স্বদেশ আর কন্যা দিয়েছেন উন্নত বাংলাদেশ। এ শ্লোগান ১৭ কোটি মানুষের নজরে আনতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবশ্যই নিরপেক্ষ, জবাবদিহি ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে এ দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে মানবাধিকার সুরক্ষা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। তখন আমেরিকার ভিসা নীতি আমাদের কোন প্রভাবিত করবে না।
মামা,
আসল কথা হলো বিদেশী রাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপ কোন ক্রমেই গ্রহনযোগ্য নয় তবে ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে এই মডেলের নির্বাচন ২০২৪ সালে করার যদি চিন্তা করা হয় তা হবে ভুল এবং আত্মঘাতি। এই চিন্তা ভাবনা থেকে সরে আসতে হবে তা না হলে দেশ এক মহা সংকটে পড়বে। যা হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। এ দেশ আমার, আপনার, ১৭ কোটি মানুষের।
মামা,
রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ আনন্দঘন পরিবেশে নিকুঞ্জের সরকারি বাসভবনে বসবাস করছেন। খোলা মেলা মনের রসিক মানুষ। হাসতে পারে, হাসাতে পারে। তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতির অভিজ্ঞতা একাধারে ৫ বারের নির্বাচিত এমপি এবং ১৯৭০ সালের সর্ব কনিষ্ঠ এমপি। ডেপুটি স্পীকার থেকে স্পীকার এবং পরে রাষ্ট্রপতি হিসাবে টানা ১০ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ক্ষমতার প্রকৃত নিয়ন্ত্রকের সুনজরে থাকার সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। এলাকায় জনপ্রিয় এবং এলাকার উন্নয়নে নিবেদিত ছিলেন তবে বিদায় কালে “ক্ষমতায় যেতেই হবে এই মানসিকতা বর্জন এবং বিভিন্ন দেশকে আমাদের দেশের সমস্যা সমাধানে ডেকে আনা মোটেই ভালো নয়” এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে গিয়ে অনেকের সমালোচনার মুখে পড়েন। কারণ ক্ষমতা থাকাকালে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য ‘টু’ শব্দ করেননি, এমনকি রাষ্ট্রবাহিনী কর্তৃক গুম, খুনের ব্যাপারে নীরব ছিলেন। ছোট খাট চিকিৎসা নিতে বেমানান সংখ্যক সংগী নিয়ে বিদেশ সফর এবং চিকিৎসা ব্যয় করেছেন অতিরিক্ত।
দুটি জাতীয় নির্বাচনে (২০১৪ ও ২০১৮সালে) দেশের জনগণের ভোটাধিকার উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়ে নীরব ভূমিকা ছিল। ভোল্টের সোনা তামা হয়ে যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা লোপাট হয়ে যায়। ১৫ লক্ষ টন কয়লা নাই হয়ে যায়। এমনকি সাড়ে তিন লক্ষ কোটি টাকা (ডঃ মাইনুল ইসলামের মতে) খেলাপী ঋণের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট টু শব্দও করেননি। নারায়ণগঞ্জের সাতখুন, সাগর রুনি হত্যাকান্ড সহ অনেক বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের ব্যাপারে মুখ খুলেননি। হলমার্ক কেলেংকারী, শেয়ার মার্কেট কেলেংকারী, এবং গত ১০ বছরে এগারো লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার, কানাডায় বেগম পাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম নিয়ে কোন কথা বলেননি। এই নিয়ে তীব্র সমালোচনা রয়েছে। অসংখ্য হত্যা মামলার আসামী এমনকি ভয়ংকর খুনের আসামিকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দিয়েছেন। ভারতীয় নায়িকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া তার সাথে দেখা করেনি কেনো তা নিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মুখরোচক আলোচনা করে নীতি ও নৈতিকতা বিরোধী আলোচনা বলে সোশ্যাল মিডিয়াতে সমালোচিত হয়েছেন। তবে দেশের দুর্নীতি ও মানবধিকার লংঘনের বিষয়ে কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। আসলে এলাকার উন্নয়ন, হাওরে বাঁধ, রাস্তা ঘাট নির্মাণ এবং সেনানিবাস নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক সমালোচনায় পড়লেও এলাকার প্রতি ছিলো তার দরদ মানুষের প্রতি ছিল অগাধ ভালোবাসা।
মামা,
অবশেষে একটি গল্প দিয়ে লেখা শেষ করলাম,
প্রাচীন যুগে চীনারা যখন শান্তিতে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিল তখন তারা গ্রেট ওয়াল নির্মাণ করলো (চীনের প্রাচীর)। চীনারা ভেবেছিলো এটার উচ্চতার জন্য কেউ টপকে তাদের আক্রমণ করতে পারবে না। গ্রেট ওয়াল নির্মাণের প্রথম একশো বছরের মধ্যেই চীনারা ৩ বার আক্রান্ত হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো কোনবারই আক্রমণকারীদের দেওয়াল টপকানোর বা ভাঙার প্রয়োজন হয়নি। কারণ প্রত্যেকবারই আক্রমণকারীরা দেওয়াল পাহারার রক্ষীদের উৎকোচ দিয়ে সামনের গেট দিয়ে ঢুকে গেছে। চীনারা অনেক পরিশ্রম করে মজবুত দেওয়াল তৈরী করেছিল কিন্তু তারা দেওয়াল পাহারা দেওয়া রক্ষীদের চরিত্র মজবুত করার কোন পরিশ্রম করেনি।
মামা,
খালি হাতে এসেছিলাম খালি হাতে যাবো,
ভাবিনি এ জীবনে এতো কষ্ট পাবো।
ইতি
তোমারই ভাগিনা
চলবে..।