
আমার কাগজ ডেস্ক
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত মঙ্গলবার সকালে বেইজিংয়ের মহাগণভবনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। ২০২৫ সালে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ-সম্মেলন এবং জাপানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনের জনগণের প্রতিরোধ-যুদ্ধ ও বিশ্ব ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যুদ্ধে বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পুতিন চীন সফরে এসেছেন।
বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সি উল্লেখ করেন যে, চীন-রাশিয়া সম্পর্ক আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের পরীক্ষা অতিক্রম করেছে, এবং চিরস্থায়ী সুপ্রতিবেশী, সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব, উপকারিতামূলক সহযোগিতা ও জয়-জয় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে, যা সারা বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। উভয়পক্ষ তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে এবং স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে, সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা ইতিবাচক ফলাফল অর্জন করেছে। চীন রাশিয়ার সাথে উচ্চ-স্তরের আদানপ্রদান ঘনিষ্ঠ করতে, পরস্পরের উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন সমর্থন করতে, দু’দেশের মূল স্বার্থ ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়ে অবস্থান সমন্বয় করতে ইচ্ছুক, যাতে চীন-রাশিয়া সম্পর্ক আরো বড় অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, চীন ও রাশিয়া উভয়েরই নিজস্ব উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনের জন্য শক্তিশালী গতিশীলতা রয়েছে, এবং উভয়পক্ষকে বড় প্রকল্পের মাধ্যমে সহযোগিতার উন্নয়ন করতে, ফ্ল্যাগশিপ সহযোগিতা প্রকল্প গড়ে তুলতে, এবং গভীর স্তরের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সমন্বিত উন্নয়ন করতে হবে। সহযোগিতার স্থিতিস্থাপতা জোরদার করতে, সহযোগিতার সমন্বয় গভীর করতে, এবং সহযোগিতার সামগ্রিক অবস্থা ভালোভাবে রক্ষা করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন যে, চীন ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা পরস্পরের দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ফ্যাসিবাদ-বিরোধী বিজয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান বিজয়ী দেশ এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে দায়িত্ববোধ প্রদর্শন করে, এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুফল রক্ষা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঠিক ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোন রক্ষা করার দৃঢ় সংকল্প দেখায়। আমি বৈশ্বিক শাসন উদ্যোগ উপস্থাপন করেছি, যাতে সকল অভিন্ন চিন্তাধারা বহনকারী দেশগুলোর সাথে, জাতিসংঘ সনদের নীতি ও চেতনা দৃঢ়ভাবে রক্ষা করতে, এবং আরও ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিযুক্ত বৈশ্বিক শাসন ব্যবস্থা গঠন গতিশীল করে তোলা যায়। চীন ও রাশিয়া উভয়ই সার্বভৌমত্ব সমতা, আন্তর্জাতিক আইনের শাসন এবং বহুপাক্ষিকতার উপর জোর দেয়, এবং উভয়কে জাতিসংঘ, শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, ব্রিকস, জি২০ এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, এবং হাতে হাত মিলিয়ে মানবজাতির অভিন্ন ভবিষ্যতের কমিউনিটি গঠন করতে হবে।
পুতিন বলেন, আমার এবং প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের নেতৃত্বে, রাশিয়া-চীন সম্পর্ক উচ্চমাত্রার কৌশলগত চরিত্র প্রদর্শন করেছে এবং ঐতিহাসিক সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং মে মাসে রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফর করেন এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মহান দেশ-রক্ষা যুদ্ধের বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশ নেন, এবং আমি আগামীকাল চীনের জনগণের জাপানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-যুদ্ধের বিজয়র ৮০তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশ নেব, এটি দুটি দেশ বিশ্বের কাছে দেখাচ্ছে যে, রাশিয়া ও চীন বিশ্ব ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যুদ্ধে পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়ে একসাথে লড়াই করেছিল, এবং ইউরোপীয় ও পূর্ব মূল যুদ্ধক্ষেত্রের বিজয়ের জন্য প্রধান অবদান রেখেছে, এবং একসাথে ঐতিহাসিক সত্যতা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুফল রক্ষার দৃঢ় মতাধিষ্ঠানের প্রমান করে। বিশ্ব ফ্যাসিবাদ-বিরোধী যুদ্ধে রাশিয়া ও চীনের একতা ও সহযোগিতা নতুন যুগে রাশিয়া-চীন সম্পর্ক উন্নয়নের মজবুত ভিত্তি হয়ে উঠেছে। চীন সফলভাবে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার থিয়েনচিন শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করার জন্য অভিনন্দন জানাই, যা বহু ঐকমত্য অর্জন করেছে এবং শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের বৈশ্বিক শাসন উদ্যোগ খুব সময়োপযোগী এবং খুব প্রয়োজন, তা বৈশ্বিক শাসন ঘাটতি সমাধান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। রাশিয়া চীনের সাথে কৌশলগত সমন্বয় বজায় রাখতে, উচ্চ-স্তরের আদানপ্রদান ঘনিষ্ঠ করতে, সকল ক্ষেত্রে বাস্তব সহযোগিতা জোরদার করতে, এবং দু’দেশের সম্পর্ক আরো উচ্চ পর্যায়ে উন্নয়ন করতে ইচ্ছুক।
দু’দেশের নেতারা অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়েও মতবিনিময় করেন।
একই দিন দুপুরে, সি চিনপিং পুতিনের সাথে একটি ছোট আকারের চা-চক্র করেন এবং একসাথে মধ্যাহ্নভোজ করেন।
দু’পক্ষ জ্বালানি, মহাকাশ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কৃষি, পরিদর্শন ও কোয়ারেন্টাইন, স্বাস্থ্য, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, শিক্ষা, মিডিয়া এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ২০টিরও বেশি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিহা নথি স্বাক্ষর করে।
সূত্র :স্বর্ণা-হাশিম-লিলি, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।