
আমার কাগজ প্রতিবেদক
কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজের চাকা আকাশেই খুলে পড়েছিল। এ ঘটনার পেছনে বিয়ারিংয়ের ত্রুটিকেই প্রাথমিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১৯ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটি।
বিমান বাংলাদেশের ভাষ্য, ‘কানাডার ডি-হেভিল্যান্ড এয়ারক্রাফট কোম্পানির তৈরি ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ ম্যানুয়ালের নির্ধারিত টাস্ক (০৫-৫০-১৭-২১০-৮০১) অনুযায়ী, চাকার বিয়ারিং অকেজো হলে পুরো চাকা বিচ্যুত হতে পারে। আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, এমনই একটি বিয়ারিং ফেইলিওরের কারণে ১৬ মে ওই বিমানটির চাকা খুলে পড়ে।’
যদিও কী কারণে ওই বিয়ারিং অকেজো হয়ে পড়ে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্তের মাধ্যমেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে বিমান। এরই মধ্যে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে—একটি সেফটি ইনভেস্টিগেশন কমিটি, অপরটি প্রকৌশল ও উপকরণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটি। তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিগুলোকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিমানের চাকা খুলে পড়ার ঘটনায় জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্যবিমানের চাকা খুলে পড়ার ঘটনায় জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য
ঘটনাটি ঘটে গত ১৬ মে, শুক্রবার। কক্সবাজার থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৪৩৬ ফ্লাইটটি। তবে উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই ফ্লাইটটির ল্যান্ডিং গিয়ারের পাশের একটি চাকা খুলে পড়ে যায়।
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে দ্রুত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে বার্তা পাঠান পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ। সঙ্গে ছিলেন ফার্স্ট অফিসার জায়েদ। তাদের দক্ষ সিদ্ধান্তে বিমানটি ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে নিরাপদে ঢাকায় অবতরণ করে।
পরে কারিগরি পরিদর্শনে দেখা যায়, বিমানটির বাম পাশের ল্যান্ডিং গিয়ারের একটি চাকা (দ্বিতীয় নম্বর) অনুপস্থিত। সেটিই পরে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বিমানের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ঘটনার পরপরই উড়োজাহাজটির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ডি-হেভিল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। বিমানের প্রকৌশল বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকায় অবস্থানরত সব ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের চাকা পরীক্ষা করা হয়েছে।
এদিকে বিমানের ভাষ্য, উড়োজাহাজটি আবার যাত্রীসেবায় ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুতকারকের পরামর্শ ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
বিমানের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ফ্লাইট পরিচালনাবিষয়ক ম্যানুয়ালের ৮ দশমিক ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এ ধরনের পরিস্থিতিতে যাত্রা শুরুর বিমানবন্দরে না ফিরে গন্তব্য বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেন বৈমানিক। সেই নির্দেশনাই পালন করেছেন ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ। বিমান কর্তৃপক্ষ তার সিদ্ধান্ত এবং দক্ষ পরিচালনার প্রশংসা করেছে।
আকাশ থেকে কক্সবাজারের নুনিয়া ছড়ায় খুলে পড়ল বিমানের চাকাআকাশ থেকে কক্সবাজারের নুনিয়া ছড়ায় খুলে পড়ল বিমানের চাকা
বিমান জানায়, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বহরে থাকা ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের ৩১টি উড়োজাহাজে গত তিন বছরে এ ধরনের চারটি চাকা সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেছে।
২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এ মডেলের উড়োজাহাজে চাকা সংক্রান্ত মোট ৫৯টি দুর্ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। তবে এসব ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই ‘রিডান্ডেন্সি’ প্রযুক্তির কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় রূপ নেয়নি।
বিমান বলছে, ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের প্রতিটি ল্যান্ডিং গিয়ারে দুটি করে চাকা থাকে। ফলে একটি চাকা বিকল হলেও, অন্যটি উড়োজাহাজকে নিরাপদে নামতে সহায়তা করে। এ ধরনের প্রযুক্তিগত ব্যাক-আপ যেকোনো বাণিজ্যিক উড়োজাহাজেই রাখা হয়, যাতে ফ্লাইট সেফটির সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা থাকে।
ঢাকায় নিরাপদে অবতরণ করেছে চাকা খুলে পড়া বিমানটিঢাকায় নিরাপদে অবতরণ করেছে চাকা খুলে পড়া বিমানটি
উড়োজাহাজটি খুব শিগগিরই আবার উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।