আমার কাগজ ডেস্ক
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা এতো দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে যে দেশটির পত্রিকাগুলো এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। গত ৩ ডিসেম্বর রাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের আকস্মিক সামরিক আইন জারির চেষ্টা এতই স্বল্পস্থায়ী ছিল যে খবরটি পত্রিকার প্রথম পাতায়ও আসতে পারেনি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি যখন ওই ঘোষণা দেন, তখন পত্রিকাগুলো ইতোমধ্যেই মুদ্রণের জন্য চলে গেছে। পরদিনের সংস্করণে তার ওই ঘোষণাকে ক্ষমতা দখলের ব্যর্থ চেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
দেশটিতে পরবর্তী এক সপ্তাহ ছিল ঘটনাবহুল। এ সময় প্রেসিডেন্ট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আশা করা হচ্ছিল যে তিনি হয়তো অভিশংসন এড়াতে পারবেন। কিন্ত না, তিনি এখন এক উদ্ধত ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী নেতায় পরিণত হয়েছে। যদিও তার সামনে অনেক বিপদ অপেক্ষা করছে।
বিবিসি বলছে, মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং দেশ ত্যাগের বেলায় তার প্রতি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই সপ্তাহের শেষে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের ভোটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই তার প্রতি দলের সমর্থনও কমে এসেছে।
সেইসঙ্গে, রাস্তায়ও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তার বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলছেন। এই সপ্তাহের শুরুতে ক্ষণিকের জন্য মনে হয়েছিল যে তিনি তার দলের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন যে তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন। বিপরীতে তাকে ভোটাভুটি করে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে না।
কিন্তু সপ্তাহ শেষ হয়ে গেলেও প্রেসিডেন্টের এমন কোনও পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যায়নি। বরং, ধীরে ধীরে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে তার পদত্যাগ করার কোনও ইচ্ছেই নেই।
উল্টো, গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ঘোষণা দেন, আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো।
তিনি তার সেই ঘোষণায় মার্শাল ল জারির সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই দেন। তিনি সেখানে বলেন, উত্তর কোরিয়ার পূর্ববর্তী নির্বাচনে কারচুপি হওয়ায় তিনি সংসদের নিয়ন্ত্রণ অর্জনে ব্যর্থ হন।
তিনি সংসদকে দানব আখ্যা দেন এবং বিরোধী দলকে বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেন এবং দাবি করেন, সামরিক আইন জারি করে তিনি জনগণকে এবং গণতন্ত্র রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন। গত শনিবার ক্ষমা চাওয়ার পর এটি ছিল প্রেসিডেন্ট ইউনের প্রথম ভাষণ।
তিনি বলেন, আমাকে অভিশংসন করা হোক বা তদন্তের মুখোমুখি করা হোক, আমি দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো। তিনি দাবি করেছেন যে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা মিথ্যা উস্কানি দিচ্ছে।
এদিকে, এই সপ্তাহে পুলিশ তার কার্যালয়ে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য অভিযান চালালেও প্রেসিডেন্ট ইউন সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় আড়ালেই কাটিয়েছেন। সেই সঙ্গে, জনরোষ সামাল দেওয়ার জন্য হলেও তার দল ঘোষণা করেছে যে, প্রেসিডেন্ট ইউন আর কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
আইন বিশেষজ্ঞরাও এ বিষয়ে একমত যে সংবিধানে এমন কিছু নেই যা এটি সমর্থন করবে। এখন সবার প্রশ্ন হলো, এই মুহূর্তে কে দেশ পরিচালনা করছে?
প্রেসিডেন্ট ইউনের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা বলেছেন, তিনি যদি আবার সামরিক আইন জারির চেষ্টা করেন, তাহলে তারা সেই আদেশ অমান্য করবে। এই মুহূর্তে দেশে এমন একটি ক্ষমতাশূন্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যে দেশটি সারাবছরই উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগর হামলার হুমকির মাঝে থাকে।
সোগাং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক লিম জি-বং বলেছেন, এই অবস্থার আইনি কোনও বন্দোবস্ত নেই। আমরা একটি বিপজ্জনক ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে রয়েছি।
তিনি আরও বলেছেন, বাইরে থেকে যারা দেখছেন, তাদের সবার কাছে এটি স্পষ্ট যে এই ধরনের অস্থিতিশীল ও অদ্ভুত পরিস্থিতি আর বেশি দিন চলতে দেওয়া যাবে না। তবে প্রেসিডেন্টের দল পিপল পাওয়ার পার্টি’র (পিপিপি) এটা বুঝতে কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিল যে প্রেসিডেন্ট ইউনের অভিশংসন অনিবার্য।
এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার পিপিপি নেতা হান ডং-হুন প্রকাশ্যে এসে সকল সংসদ সদস্যকে ইউনের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্টকে অবিলম্বে পদ থেকে স্থগিত করা উচিত।
দেশটিতে অভিশংসন প্রস্তাব পাস করতে ২০০ ভোট প্রয়োজন। বিরোধী দলের হাতে ১৯২টি আসন রয়েছে। অর্থাৎ, প্রস্তাব পাস করার জন্য তাদের শাসক দল থেকে আটজনের ভোট প্রয়োজন।