
গাজীপুর প্রতিনিধি
বিনাপয়সায় তরমুজ না দেওয়ায় গাজীপুরের শ্রীপুরে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের নেতা রমিজ উদ্দীন সৈকত। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় মারধরে শিকার ফল ব্যবসায়ী এনামুল হক মুনসি আজ বুধবার বিকেলে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা রমিজ উদ্দীন সৈকত গাজীপুরে জেলা ছাত্রদলের সাবেক কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক। তবে ছাত্রদল নেতা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন তরমুজ ব্যবসায়ী তাকে ও তার লোকজনকে মারধর করেছে।
মারধরে শিকার ফল ব্যবসায়ী এনামুল হক মুনসি সাতখামাইর বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ফলের ব্যবসা করেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মঙ্গলবার ইফতারের কিছু সময় আগে ছাত্রদল নেতা সৈকত ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা রেললাইন লাগুয়া বাজারের ফল ব্যবসায়ী এনামুলের দোকানে এসে তরমুজ কেনা নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক সময় ফল ব্যবসায়ীকে কিল ঘুষি মারতে থাকেন তারা।
তাদের অভিযোগ, দেশে রাজনৈতির পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার পর থেকেই ছাত্রদল নেতা সৈকত তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিনা কারণে যে কারও সাথে মারধরে জড়িয়ে পড়েন। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। আজও (গতকাল) দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বাজারে ঢুকে ব্যবসায়ীকে মারধর করেছে।
‘শেখ হাসিনার বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নাই’‘শেখ হাসিনার বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নাই’
মারধরে শিকার ফল ব্যবসায়ী এনামুল বলেন, ‘সৈকত ও তার কর্মীরা আমার দোকানে এসে তরমুজ নিতে চায়। এ সময় তরমুজ দরদাম করে টাকা ছাড়াই নিতে চাইলে তরমুজ দিতে রাজি হইনি। এ নিয়ে তর্কে জড়িয়ে আমাকে বেধম মারধর করে সৈকত ও তার লোকজন। পরে আশপাশের অন্য ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এসে আমাকে রক্ষা করেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে লাথি ঘুষি মারেন এরপর লাঠি দিয়ে মারধর করেন। এ বিষয়ে বাজার কমিটিকে অবহিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় আজ বিকেলে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা সৈকত মোবাইলে জানান, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা। তিনি মারধর করেনি। গ্রাম্য রাজনীতির (ভিলেজ পলিটিক্স) শিকার হয়েছেন।
অভিযোগ করে তিনি জানান, মেপে মেপে উচ্চ দামে তরমুজ বেচার কারণ জানতে চাইলে ফল ব্যবসায়ী ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেন। এরপর তার লোকজন তাকেও (ফল ব্যবসায়ী) হালকা মারধর করে।
সাতখামাইর বাজার কমিটির সভাপতি রাসেল আকন্দ বলেন, ‘ছাত্রদল নেতা সৈকত ও তার লোকজন বাজারের ফল ব্যবসায়ী এনামুলকে মারধর করেছে। এ নিয়ে বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষোভ প্রকাম করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। পরে এ নিয়ে পুলিশকে অবহিত করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল নেতা সৈকত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। তার পরিবারও তার কাছে অসহায়। আমরা তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। বাজারের ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তায় স্বার্থে তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করছি।’
এ বিষয়ে শ্রীপুর মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল মালেক বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি অবগত হয়েছি। পরে ফল ব্যবসায়ীকে আইনের সহায়তা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়।’
শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রিফাত মোড়ল বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। এ নিয়ে সিনিয়রদের সাথে কথা বলেছি। আমাদের স্পষ্ট কথা কোনো সন্ত্রাসী অস্ত্রবাজ দলীয় পরিচয়ে থাকতে পারবে না। তার পরিচয় সে সন্ত্রাসী, সে অপরাধী। পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। আমরা দলীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।’
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, ‘একটি অভিযোগ করেছে মারধরে শিকার ফল ব্যবসায়ী। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’