
আমার কাগজ প্রতিবেদক
বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা কবে! ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় নামে পৃথক সচিবালয়ের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক খসড়াটি নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাদেশ জারি হবে। অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত রূপ পাবে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের। তবে খসড়া প্রস্তুত হলেও সাংবিধানিক কারণে বাকি প্রক্রিয়া এগোচ্ছে না বলে সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, পৃথক সাচিবালয় প্রতিষ্ঠার আইন হলে তা বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এমন পরিস্থিতি এড়াতেই সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদের সংশোধন বা সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক বাতিল হলে সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে মন্ত্রণালয়। এ কারণে সময় নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এদিকে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় যে দাবি, সেটা হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বাধীন সচিবালয়। আমরা মনে করি, এটা অর্জন হবে খুব শিগিগরই।’ তিনি বলেন, ‘সচিবালয় সম্পর্কে অবকাঠামোগত অর্গানোগ্রাম দিয়েছিলাম, ধারণাপত্র দিয়েছিলাম, সেগুলো নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে, আলোচনা চলছে। দেখতে হবে কোনো সাংবিধানিক ও আইনি প্রতিবন্ধকতা আছে কি না বাস্তবায়নের জন্য। সেটা যদি থাকে, সেটা দূরীকরণ হবে।’
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বিচারকর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল-নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান {রাষ্ট্রপতির} উপর ন্যাস্ত থাকিবে।’ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের ফলে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি, শৃঙ্খলা ইত্যাদি নির্বাহী বিভাগের আওতায় রয়ে গেছে। এসব কাজ রাষ্ট্রপতির পক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ করে থাকে। একইভাবে অধস্তন আদালতের বিচারকদের ওপর সুপ্রিম কোর্ট এবং আইন মন্ত্রণালয়—এই দুটি কর্তৃপক্ষের যুগপত্ নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা দ্বৈত শাসনের অংশ হিসেবে বিচারকর্ম বিভাগের সব বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তথা সরকারের ওপর নির্ভরশীল।
চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন অ্যাডভোকেট মো. শিশির মনির। গত বছর দায়েরকৃত ঐ রিটের ওপর রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুলে বিদ্যমান সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। জারিকৃত রুলটি এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এই রিট মামলায় হাইকোর্ট যদি আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করতে আইনগত বাধা দূর হবে বলে জানান আইনজ্ঞরা।
আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘বিচার কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল-নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকিবে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শিশির মনির ইত্তেফাককে বলেন, ‘আনন্দের সংবাদ এটা যে, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু একটা দুঃখের খবর, এটা করতে এখন অনেক সময় নেওয়া হচ্ছে। সরকার হচ্ছে-হবে বলে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সচিবালয়ের অধ্যাদেশের একটা খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। যেটা এখন বিবেচনাধীন আছে আইন মন্ত্রণালয়ে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে একটি বড় বাধা আছে, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ। এটাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছি। যে মামলায় আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ ফিরিয়ে আনার আবেদন করেছি। সেই মামলায় হাইকোর্ট কর্তৃক জারিকৃত রুল বিচারাধীন রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ রুল শুনানিতে সময় নিয়েছে। রবিবার থেকে কোর্ট খুলবে। আশরা করি, রাষ্ট্রপক্ষ নতুন করে এই মামলায় আর সময় নেবে না। এটাকে নিষ্পত্তির উদ্যোগে নেবে। মামলা নিষ্পত্তি করে বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।’