
মোঃ ফারুক
কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলাকে জেলা ঘোষণার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে জেলার ন্যায্যতার পক্ষে সমৃদ্ধ বাজিতপুরের নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরনে বক্তারা।
বাজিতপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে অনুষ্ঠিত উক্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিরি বক্তব্য রাখেন আমেরিকার চার্লস টাউন অধ্যাপক ও পানি গবেষক ড. রাজ বিহারি ঘোষ।
সভাপতিত্ব করেন বাজিতপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক, বাজিতপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক তফাজ্জল হোসেন বাদল।
সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, বাংলাদেশের ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ সাংবাদিক ফোরাম-ঢাকা’র সভাপতি এরফানুল হক নাহিদ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি তাজুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা জহিরুজ্জামান জহির, সাবেক ছাত্রনেতা বদরুল আলম শিপু, বিএনপি নেতা শাহরিয়ার শামীম, ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল বোরহানসহ ঢাকায় অবস্থানরত বাজিতপুরবাসী বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ।
অনুষ্ঠান সঞ্চায়লনায় ছিলেন বাজিতপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জসীম মাহমুদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. রাস বিহারী ঘোষ বলেন, তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে যেকোনো মূল্যে বাজিতপুরকে জেলা রূপান্তরিত করতে হবে। এ দাবি আদায়ে বাঁচবো, না হয় মরবো। তিনি বলেন, বাজিতপুরকে জেলা করতে গেলে যা যা দরকার, তার সব আয়োজনই আমাদের আছে। তাই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের কাছ থেকে এ দাবি আদায় করতে হবে।
অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘বাজিতপুরকে জেলায় রূপান্তর করা শতবর্ষের ন্যায্য দাবি। এ দাবির পক্ষে চলা দীর্ঘ আন্দোলনে আমরা সম্পৃক্ত ছিলাম, চলমান আন্দোলনেও আছি এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত থাকব।’
এরফানুল হক নাহিদ বলেন, ‘ভৌগলিক অবস্থানসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় বাজিতপুর জেলা হওয়ার যৌক্তিত দাবিদার। এ উপজেলার সাথে নৌপথ, রেলপথ ও সড়কপথে পার্শ্ববর্তী উপজেলারগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, জেলার প্রশ্নে বাজিতপুরের মানুষদের কারো কোনো দ্বিমত নাই, আমরা সবাই এক। আমাদের পাশের যে উপজেলাগুলোর রয়েছে সেসব উপজেলার নেতৃবৃন্দের সাথে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করতে হবে। সর্বোপরি জাতীয়ভাবে চাপ প্রয়োগ করে বাজিতপুর জেলা আদায় করতে হবে। আমার বিশ্বাস করি, আমরা যদি চেষ্টা করি বাজিতপুর জেলা হিসেবে আশার আলো দেখবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, যেকোনোভাবে বাজিতপুরকে জেলায় রূপান্তরিত করতে হবে। ভৌগলিক দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা বাজিতপুরের সঙ্গে সারা দেশের নৌপথ, রেলপথ ও সড়কপথে সংযুক্তি রয়েছে। ১৮৬৯ সালে ঘোষিত পৌরসভা বাজিতপুরকে ‘কৃষি জেলা’ ও মহকুমা রূপান্তরের উদ্দেশে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৯১২ সালেই বাজিতপুরে প্রায় ২০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। বাজিতপুর ব্রিটিশ আমল থেকেই জেলা হওয়ার কথা ছিল।
বাজিতপুরকে জেলা হওয়ার যৌক্তিক কারণসমূহ:
১৮৩৪ সালে, অর্থাৎ এখন থেকে ১৯১ বছর আগেই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বাজিতপুরে সাতটি প্রশাসনিক এলাকার দেওয়ানী (চৌকি) আদালত প্রতিষ্ঠা করে, এর মধ্যে ভৈরব, কুলিয়ারচর, নিকলী, অষ্টগ্রাম ও বাজিতপুর-এ পাঁচ থানার চৌকি আদালতের কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে; ১৮৩৫ সালে, অর্থাৎ ১৯০ বছর আগেই বাজিতপুরকে থানায় উন্নীত করা হয়; ১৮৬৯ সালে, অর্থাৎ ১৫৬ বছর আগেই বাজিতপুরকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়; ১৯১২ সালে, অর্থাৎ ১১৩ বছর আগেই মহকুমা করার লক্ষ্যে বাজিতপুরে প্রায় ২০০ একর ভ‚মি অধিগ্রহণ করা হয়; দেশের খ্যাতনামা জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জহুরুল ইসলাম নার্সিং ইনস্টিটিউট অবস্থিত এ বাজিতপুরেই; ভৌগলিক দিক দিয়ে সবচেয়ে যোগ্য অবস্থানে রয়েছে বাজিতপুর উপজেলা, এ উপজেলার চারদিকে রয়েছে অষ্টগ্রাম, নিকলী, কটিয়াদী, কুলিয়ারচর ও ভৈরব।
সবমিলিয়ে এটুকু তো দাবি করাই যায় যে, আজ থেকে ২০০ বছর আগেই বাজিতপুর বিভাগীয় শহর হিসাবে গড়ে ওঠার সকলরকম উপযোগিতা অর্জন করেছিল।