
আলাউদ্দিন, ফেনী
ফেনীর ফুলগাজীতে বন্যার আশংকা দেখা দেওয়ায় এলাকার মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ে। এসময় ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম পানি প্রবেশের এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন এবং এলাকাবাসীকে শান্তনা দেন। তিনি বলেন, আতঙ্কিত হওয়া কোন সমাধান নয়। ফেনীর ফুলগাজী বাজারে পানি প্রবেশের স্থান পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসকের সাথে বাজারের ব্যবসায়ীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় উজানের ঢলে আবারও ভাঙল মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ। গতকাল রাতে ১০টার দিকে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দুটি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও বাজার এলাকায় প্রবেশ করছে পানি। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পাঁচ গ্রামের বাসিন্দারা। গেল বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতচিহ্ন মুছতে না মুছতেই আবারও এমন ভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায়সারা কাজকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা সংস্কার ও নজরদারির অভাবেই বারবার এ দুর্ভোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০টার দিকে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের বণিকপাড়া এলাকায় সহদেব বৈদ্যের বাড়ির সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধে ও গোসাইপুর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এর ফলে উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া, বণিকপাড়া, বসন্তপুর ও জগতপুর এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এছাড়া সন্ধ্যা থেকে ফুলগাজী তরকারি বাজার-সংলগ্ন মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করে বাজারের একটি অংশও প্লাবিত হয়। একই দিন দুপুর থেকেই পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মনিপুর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর পানি বেড়ে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। ভুক্তভোগী বরইয়া এলাকার বাসিন্দা মো: নজরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে অনেক চেষ্টা করেও বাঁধে ভাঙন ঠেকানো যায়নি। গেল বছরের বন্যার পর মাত্র এক বছর পেরোতে না পেরোতেই আবারও পানিতে ডুবছি। কিছু কর্মকর্তার দায়সারা কাজের কারণেই প্রতিবছর এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ফুলগাজী বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ বলেন,এখানে প্রতিবছর জুন-আগস্টের মধ্যে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। দোকানের মালপত্র পানিতে ভিজে যায়, বড় ক্ষতি হয়। বারবার বলেও কেউ শুনে না, এখন এসব সহ্য করেই ব্যবসা করি।
জগতপুর এলাকার বাসিন্দা মোনায়েম রাজু বলেন,কর্মকর্তারা যখন বন্যা আসে তখন জিও ব্যাগ দিয়ে মেরামতের কথা বলেন। কিন্তু বন্যা গেলে আর কেউ খোঁজ নেয় না। আজও পানি প্রবেশের খবর শুনে কয়েকজন এসেছিল, কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি।
এদিকে ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান,বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ফেনীতে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফাহাদ্দিস হোসাইন বলেন, উজানে ভারি বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। তবে মুহুরী নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। বাঁধ রক্ষায় স্থানীয়দের সঙ্গে মিলে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও রক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।