আমার কাগজ প্রতিবেদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি নাকচ করার পরেও ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলম। তার এই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এ সংক্রান্ত এক রিট খারিজের বিরুদ্ধে করা আবেদন আজ মঙ্গলবার খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ।
এদিন শুনানিতে আবেদনের পক্ষের আইনজীবী এস এন গোস্বামীকে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটা বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল- রিভিউ সব শেষ হলো, অবজারভেশনে সব বলে দেওয়া হলো। তারপর আবার এটার বিরুদ্ধে রিট নিয়ে হাইকোর্টে এলেন কেন? এখানে রিট করার কি কোনো সুযোগ আছে? এরকম কোনো আদালতের সিদ্ধান্ত দেখাতে পারবেন?’
জবাবে আইনজীবী এস এন গোস্বামী বলেন, ‘এরকম নেই। তবে আমাদের আপত্তির জায়গাটা হচ্ছে আসামিকে আটক ও আদালতে হাজিরের ক্ষেত্রে সংবিধানের বিধান মানা হয়নি।’
তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজিরের বিষয়টি তো আপিলের রায়ে উত্তর দেওয়া হয়েছে। তাহলে এখন এসে রায় কার্যকরকে বাধাগ্রস্ত করছেন? এখানে একজন প্রফেসরকে যে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো সেটা ১৯৭১ সালের বর্বরতাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। আর আগেও বলেছি যে, যখন আমরা কোনো বিচার করি তখন ঘটনাটা আমাদের সামনে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে অধ্যাপক তাহেরের লাশটি আমাদের সামনে, এমনটা দেখেই আমরা বিচার করেছি।’
এ সময় বেঞ্চের অপর বিচারপতি বলেন, ‘মক্কেলকে সৎ পরামর্শ দেয়াটাও কিন্তু একজন আইনজীবীর দায়িত্ব।’
বেঞ্চের আরেক বিচারপতি বলেন, ‘আপনি যে বিষয়ে রিট করেছেন তার উত্তর তো রায়েই দেওয়া হয়েছে।’
এরপর বেঞ্চের আরেক বিচারপতি বলেন, ‘এরকম বিষয় নিয়ে এসে আদালতের সময় নষ্ট করায় জরিমানা করা উচিৎ।’ একপর্যায়ে আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. মোরশেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম। এছাড়া শুনানিতে অধ্যাপক তাহেরের আইনজীবী কন্যা শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। সে মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ২ জনকে খালাস দেন। পরবর্তীকালে হাইকোর্ট দুই আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে অন্য দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি হলেন- রাবির সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
আর সাজা কমিয়ে হাইকোর্ট নাজমুল আলম ও আব্দুস সালামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন। অন্যদিকে, সাজা কমিয়ে দু’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে সব আপিলের শুনানি শেষে গত ৫ এপ্রিল আপিল বিভাগ অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যায় হাইকোর্টের দেওয়া আগের রায়ই বহাল রাখেন। এই রায়ের ফলে ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড এবং নাজমুল আলম ও আব্দুস সালামের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত নাজমুল আলম বাদে অপর তিন দণ্ডিত আপিল বিভাগে (রিভিউ) আবেদন করলে গত ২ মার্চ সেই রিভিউ খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। পরবর্তীতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে তা নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি।