‌নড়াইলে ‘২০০ পরিবার ৯ মাস ঘরছাড়া’ : মানবাধিকার কমিশনের পদক্ষেপ

আমার কাগজ প্রতিবেদক
আজ ২১ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখ দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত “২০০ পরিবার ৯ মাস ঘরছাড়া” শীর্ষক সংবাদটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। ঘটনাটি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী গ্রামের। সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, একটি হত্যাকাণ্ডের জেরে মামলার আসামি হয় এলাকার নিরীহ মানুষ। তাদের কেউ কৃষিকাজ করে, কেউ-বা দিনমজুর। আসামি হয়ে হাজত খেটে জামিনে বের হয়ে এলেও ঘরে ফেরার ভাগ্য হয়নি ভুক্তভোগী সেসব মানুষের। এ ছাড়া হামলার ভয়ে বাড়িঘর ফেলে পথে পথে ঘুরছে একই গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় আজ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সুয়োমোটো গ্রহণ করেছে।

সংবাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২০ জুলাই গ্রামটিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুন হন যুবলীগকর্মী আজাদ শেখ (৩০)। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মানুষগুলো গ্রামের ভিটামাটিছাড়া। গত ১৫ এপ্রিল পুলিশ সুপারের কাছে বাড়িঘরে ফেরার আকুতি নিয়ে তাঁর কার্যালয়ে যায় ভুক্তভোগীরা। তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে। পরে পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত আবেদন করে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পিরোলী গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাবু শেখ ও শহীদুল মোল্যা গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের জেরে খুন হন যুবলীগকর্মী আজাদ শেখ। তিনি বাবু শেখ গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ওই ঘটনায় ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন আজাদের বড় ভাই সাজ্জাদ শেখ। আজাদ হত্যা মামলার ছয় আসামি ছাড়া বাকি সবাই আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। তবে জামিনের পরও তাঁরা ঘরে ফিরতে পারছেন না।

এ হত্যাকাণ্ডের জেরে নিহতের দলীয় প্রতিপক্ষ ২০ জন আসামি হলেও গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে পরিবারগুলোর সদস্যদের গ্রামছাড়া করা হয়। সেই থেকে বাড়ি ঘরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পেরে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে পরিবার-পরিজনসহ পথে পথে মানবেতর দিন পার করছে।

প্রকাশিত সংবাদের বরাতে সুয়োমোটোতে উল্লেখ রয়েছে, পিরোলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জারজীদ মোল্যা বলেন, ‘২০০ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জমিজমাও চাষ করতে পারছে না। আমরা চেষ্টা করছি তাদের বাড়িতে তুলে দেওয়া যায় কিনা। পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।’ এ বিষয়ে নড়াইলের পুলিশ সুপার মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘এটি ৯ মাস আগের একটি খুনের ঘটনা। নড়াইলের দীর্ঘদিনের রীতি হলো, আসামিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করা। আদালতে মামলা চলমান। আদালত যে রায় দেবেন, সেটাই চূড়ান্ত হবে।’

সুয়োমোটোতে আরও উল্লেখ রয়েছে, বাসস্থান একজন মানুষের মৌলিক প্রয়োজন। উল্লিখিত সংবাদে বর্ণিত ভুক্তভোগী প্রায় ২০০ মানুষ বাসস্থান থাকার পরও নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে বসবাস করতে না পারার বিষয়টি বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের ভাষ্য মতে, নড়াইলের দীর্ঘদিনের রীতি হলো, আসামিপক্ষের বাড়িঘর ভাঙচুর করা। এক্ষেত্রে, খুনের ঘটনার সাথে সাথেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি তা কমিশনের বোধগম্য নয়। তাছাড়া মানুষের নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপত্তার সাথে বসবাস করার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

গৃহীত সুয়োমোটোতে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পিরোলী গ্রামে আজাদ শেখ খুনের ঘটনার সাথেসাথেই উদ্ভূত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হয়নি -তার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য পুলিশ সুপার, নড়াইল-কে বলা হয়েছে। ভুক্তভোগী প্রায় ২০০ মানুষকে নিজ নিজ বাসস্থানে বসবাস করার এবং চাষাবাদ করার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে আগামী ১৮/০৫/২০২৪ তারিখের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে পুলিশ সুপার, নড়াইল-কে বলা হয়েছে। আদেশের অনুলিপি সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।