আমার কাগজ প্রতিবেদক
সরকার পতনের আন্দোলনে বছরের শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণভাবেই মাঠে সক্রিয় ছিল বিএনপি। কিন্তু নির্বাচনের কয়েক মাস আগে গত ২৮ অক্টোবর দলটির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও একজন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার পর কঠোর হয়ে ওঠে সরকার। গ্রেপ্তার করা হয় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তিন নেতাকে। এ ছাড়া মাঠে সক্রিয় থাকা আরও চারজন সিনিয়র নেতা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। এমন বাস্তবতায় প্রায় নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ছে বিএনপি। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অভিজ্ঞ ও বয়োজ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে দলটিতে।
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংষর্ঘে পুলিশ সদস্য নিহতের পাশাপাশি একজন রাজনৈতিক কর্মীরও মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ৪১ জন পুলিশ সদস্য ও ২৮ জন সাংবাদিকসহ আরও অনেকে আহত হয়েছেন। পুলিশের হিসাবে, ৫৫টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি পুলিশ বক্স-পোড়ানোর পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও হামলা চালানো হয়।
এসব ঘটনার পর রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৬৬টি মামলা করে পুলিশ। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে র্যাব-পুলিশ। শুরুতেই দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর একে একে গ্রেপ্তার করা হয় মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জহির উদ্দিন স্বপন, মজিবুর রহমান সারোয়ারসহ প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মীকে।
এ ছাড়া গ্রেপ্তার এড়াতে বিএনপি ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়নসহ সব স্তরের নেতাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। দল থেকেও তাদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যেই অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এমন বাস্তবতায় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অভিজ্ঞ ও বয়োজ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে দলটিতে। যদিও কর্মসূচি সফল করতে ভার্চুয়ালি জরুরি বৈঠক ও যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলছেন, একটি দলে রাতারাতি যেমন নেতৃত্ব তৈরি করা যায় না, তেমনি রাতারাতি একটি দলকে নেতৃত্বশূন্যও করা যায় না। যাকেই যেখানে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাৎক্ষণিকভাবে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতেই থাকবে।
এদিকে, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ অসহযোগ আন্দোলনের মতো আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে বিএনপি। এমন প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে বলা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান আরও জোরদার করতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে, দলটির অনেক নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছে। তাদের ধরতে প্রযুক্তির পাশাপাশি মেনুয়াল সোর্স ব্যবহার করছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ বলেছেন, ২৮ অক্টোবর হামলা, আগুন ও পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া যারা হামলায় নেতৃত্ব এবং উসকানি দিয়েছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিএমপি যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, মহাসমাবেশের নামে বিএনপি ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগ, পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা এবং পুলিশ সদস্য হত্যা করেছে। এ সব ঘটনায় জড়িত কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের দায় বিএনপি কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। ভিডিওতে যাদের পাচ্ছি, তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। সব আসামিকে আইনের আওতায় আনা হবে।