হাওর অঞ্চল প্রতিনিধি
নিকলীতে দেড় যুগের কাছাকাছি সময়ের ব্যবধানে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় একে মিলন মেলা বলে আখ্যায়িত করেছেন দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তারা অতীত ও বর্তমানের আলোচনার পাশাপাশি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক মেরুকরণের বিষয়ে আলোকপাত করেন। পাশাপাশি নিকলী-বাজিতপুরের জনসাধারণের শান্তির লক্ষ্যে যোগ্য নেতা হিসেবে কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সম্মানিত আমীর অধ্যাপক মোঃ রমজান আলীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরা নিকলী বাজিতপুরের গণমানুষের স্বস্তির আশ্রয়স্থলের যোগ্য নেতা যুক্তি দিয়ে তাঁকে যোগ্য নেতৃত্বে পৌঁছে দেওয়ারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর এই প্রথম প্রকাশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিকলী উপজেলা শাখার উদ্যোগে নিকলীর ঐতিহাসিক কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ৩১জানুয়ারী শুক্রবার সকাল ৯টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের শুভ সূচনা করে। সম্মেলনে নিকলী উপজেলা সদরের জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীসহ অত্র উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়ে উঠে নিকলীর কেন্দ্রিয় ঈদগাহ মাঠ। আলেম-উলামা ও ছাত্রজনতার মিলন মেলায় রূপ নেয়া এই কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সম্মানিত আমীর অধ্যাপক মোঃ রমজান আলী।
এ সময়ে রমজান আলী তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট উল্লেখ করেন, আওয়ামীলীগ বৈষম্যের কথা বলে দেশে স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থের রাজনীতি করেছিলো। তাদের নেতাকর্মীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। এমনকি কলাগাছ থেকে তারা একে একে বটগাছে পরিনত হয়েছিলো। তাদের অনেকেই দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি তৈরি করে নিয়েছে। কথায় কথায় আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি বলেছিলো। বাস্তবে আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারেনি। দেশের স্বাধীনতা একমাত্র জামায়াতে ইসলামীই রক্ষা করতে পারবে বলেও তিনি তার বক্তব্যে নানান যুক্তির মধ্যে দিয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর নীতি আদর্শে যারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, তারা সবাই এখনো ঐক্যবদ্ধই রয়েছে। আগামী নির্বাচনে সকল ইসলামী দল এক হয়ে কাজ করবেন বলেও তিনি তার বক্তব্যে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এই মর্মে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে সহায়তা করতে হবে। এই সরকার ব্যর্থ হলে তারাও ব্যর্থ হয়ে যাবে বলেও যুক্তি তুলে ধরেন। তাই দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন পর্যন্ত তাদের সহায়তা করে যেতে হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
অত্র কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ জেলার সেক্রেটারি মাওলানা নাজমুল ইসলাম, সহকারি সেক্রেটারি সাংবাদিক শামসুল আলম সেলিম, সহকারি সেক্রেটারি কাজী মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ মুসলেহ উদ্দিন সুমন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি এডভোকেট খালেদ হাসান জুম্মনসহ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি হাসান আল মামুন। এছাড়াও খেলাফতে মজলিস কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সেক্রটারি মাওলানা আকরামুজ্জামান, নিকলী উপজেলার সভাপতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন, জামায়াতে ইসলামী কিশোরগঞ্জ শহর অমুসলিম শাখার সেক্রেটারি কৃঞ্চ চন্দ্র বসাক, মাওলানা নাছির উদ্দিন রুবেল, মাওলানা এনামুল হক উসমানী, সাবেক উপজেলা সভাপতি ব্যাংকার মতিউর রহমান, মাওলানা আব্দুল হান্নান, সাবেক আমীর ইসরাফিল সরকার, কটিয়াদী উপজেলা আমীর অধ্যাপক মোজাম্মেল হক জোয়রদার, আব্দুল্লাহ কাইয়ূম, মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রহমানী, জমীর উদ্দিন, মাওলানা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
উপজেলা আমীর মো: আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে এই কর্মী সভায় বক্তারা আরও বলেন, মানুষের ভুলের কারণেই রাষ্ট্রে জালেম সরকারের আবির্ভাব হয়। গত জালিম সরকার মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন চালিয়ে ছিল। দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ভারতের তাবেদার হাসিনা সরকার আলেম-উলামাদেরকে অন্যায় ভাবে ফাঁসি দিয়েছে। আলেম-উলামাদের বিচার বহির্ভূত জেল-জুলুম-নির্যাতন, গুম, খুন করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পাখির মতো প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে। সংবাদ মাধ্যমেরও গলা টিপে ধরেছিল। অনেক মিডিয়ার সাংবাদিক হত্যাসহ পত্রিকা অফিস ও টেলিভিশন. ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল। ৫ আগস্ট জালেম সরকারের পতনের পূর্বে কেউ কথা বলতে পারেনি। দাড়ি-টুপিয়ালা মানুষদেরকে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের নেতা-কর্মীরা গুম-খুন এবং প্রকাশ্যে লাঞ্চিত করেছে। আল্লাহ্ ইতিমধ্যেই তার বিচার করেছেন বলেও উল্লেখ করেন। হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে হিন্দুস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। জুলাই বিপ্লবের অগণিত শহীদদের শাহাদাতের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ দিন পর হলেও আজ সকলে মুক্ত মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছেন বলেও উল্লেখ করেন। এটা ছাত্র জনতার আন্দোলনের ফসল ও ফলশ্রুতিতে আজকের এই কর্মী সম্মেলন। মহান আল্লাহর কাছে এজন্য কোটি কোটি শুকরিয়াও আদায় করেন।
জেলা শিবির সভাপতি তার জ্বালাময়ী বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে, ফেব্রুয়ারি মাসে এই ফ্যাসিস্ট হাসিনা সারাদেশে আবারও আন্দোলন ও হরতালের ডাক দিয়েছে। বক্তব্যের এক ফাঁকে নিকলী থানার অফিসার ইনচার্জের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আওয়ামীলীগ যেন ঘর থেকে রাস্তায় বের হতে না পারে এই দিকেও নজর রাখার ইঙ্গিত করেন। তাদেরকে রাস্তায় পেলে তার সমোচিত জবাব দিবেন বলেও উল্লেখ করেন। এ সময়ে বক্তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী বাজিতপুর) আসনে জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক মোঃ রমজান আলীর জন্যে দোয়াসহ ভোটারদের কাছে ভোটেরও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।