হাওরঅঞ্চল থেকে আলি জামশেদ
নিকলীতে বিএডিসির গভীর নলকূপ ৩৪ বছর ধরে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তদারকির অভাবে শুরু থেকেই দুরবস্থা। অকেজো অবস্থায় মরিচাযুক্ত অংশবিশেষ পড়ে আছে। এ যেনো সরকারি টাকার অপচয়! এমনি ভাষ্য স্থানীয়দের।
হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ১৯৯০ সালে কৃষির উন্নতির লক্ষ্যে পল্লি এলাকায় উপজেলা ভিত্তিক বিএডিসির অধীনে সরকার বিনামূল্যে স্বল্প সংখ্যক উন্নত গভীর নলকূপ প্রদান করে। এ সবের মধ্যে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার জারইতলা ইউনিয়নের আঠার বাড়িয়ার কৃষকদের ভাগ্যে জুটে সেই আধুনিক গভীর নলকূপ। তৎকালীন সময়ে এটি পাওয়া অনেকটা প্রতিযোগিতার মতোই ছিলো বলে জানা গেছে একাধিক সূত্রে।
আলোচনা ও প্রতিযোগিতা ছিলো সেই সময়ের সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দের এ গভীর নলকূপ নিয়ে। উপজেলা জুড়ে প্রথম দিকে একটি মাত্র উন্নত মানের গভীর নলকূপ ছিল বলেও জানান তদারকির দায়িত্বে থাকারা। যদিও অফিসিয়ালভাবে এই নলকূপের মূল্য নির্ধারণের তথ্যটি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
স্থানীয় তত্বাবধায়কের ভাষ্যমতে, এটাকে কৃষি প্রদর্শনী খামারে রূপ দেওয়ার কথা থাকলেও এরশাদ সরকারের পতনের পর তা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি। নানান কারণে একটিমাত্র মৌসুম চালানোর পরেই তা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।
সরকারি ব্যয় বহুল এই গভীর সেচ নলকূপটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে স্থানীয় কৃষকদেরও যথেষ্ট ভূল ধারণা ছিল এই সেচ নলকূপ সম্পর্কে। কৃষকদের ভাবনা ছিলো সরকারি খরচে তারা মৌসুমে তাদের জমিতে পানি দিতে পারবেন। কাউকে টাকা দিতে হবে না বলেও তাদের অনেকের ভ্রান্ত ধারণা কাজ করেছিলো সেই সময়ে। খরচের পরিমাণের সাথে সেখানকার কৃষকদের লাভের পরিমাণ যখনি কম হয়ে উঠে তখনি এই মেশিন থেকে জমিতে পানি নিতে আপত্তি তোলে কৃষকেরা। অনেকে আবার ব্যক্তিগত খরচে ছোট আকারের সেলু মেশিনও কিনে নেয় সেই সময়ে। ফলে দায়িত্বে থাকারাও মেশিনটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এক পর্যায়ে সেচ যন্ত্রটি অকার্যকর হয়ে যায় বলেও স্থানীয় সূত্রে জানায়। একাধিকবারের বৃহৎ বন্যার পানিতেও মেশিনের অংশ বিশেষ তলিয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে মেশিন রাখার সরকারি বরাদ্দের নির্মিত পাকা ঘরের দরজাও মরিচা পরে বিনষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে মেশিনের যন্ত্রপাতিও অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বের অভাবে থেকেই বেশ কিছু যন্ত্রপাতিও খুলে নিয়ে গেছে ছিঁচকে চোরেরা।
মেশিনটির স্থানীয় তদারকির দায়িত্বে থাকা সাবেক একাধিকবারের ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বিএনপি নেতা মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন বলেন, বিএডিসির অধীনের এই গভীর নলকূপটিকে প্রদর্শনী খামার করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে নানান কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। স্থানীয় কৃষকেরাও বিকল্প ছোট সেচ মেশিন নির্ভরশীল হয়ে উঠে। কৃষকদের ভ্রান্ত ধারণা ছিলো সরকারি খরচেই পানি দেয়া যায়। গভীর নলকূপটি সচল রাখার জন্যে নানানভাবে চেষ্টা করেছেন বলেও জানান। এ লক্ষ্যে ডেইন নির্মাণসহ শ্রমিকদের পিছনে বেশ কিছু টাকা খরচ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নলকূপটি অনেক আগের। এটি বিএডিসি নাকি বিআরডিবির। এটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তদারকির অভাবে সরকারি টাকার অপচয় বিষয়টির প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করতে নারাজ।
নিকলী উপজেলার বিএডিসির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী শাওন মালাকারের কাছে তদারকির অভাবে গভীর নলকূপের বেহাল দশা ও সরকারি অর্থের অপচয় এমন কথা হলে এই প্রসঙ্গের জবাবে বিএডিসির কি না সঠিকভাবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান। বিএডিসির হলে পরবর্তীতে এই বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তা অচিরেই ভেবে দেখবেন বলেও জানান।
কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের কাছে ১৯৯০ সালের এরশাদ সরকারের আমলে কোন ধরনের প্রজেক্টের মাধ্যমে সেচ মেশিনটি দেয়া হয়েছিল এই বিষয়ে কথা হলে তিনি সম্পূর্ণ অবগত নন বলেও স্বীকার করেন। তবে এই প্রজেক্টটির বিষয়ে অচিরেই খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলেও জানান।