আমার কাগজ ডেস্ক
নাইজেরিয়ায় নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় ২৯ শিশুকে এমন মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাতে তাদের প্রাণদণ্ড হতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ মামলায় মোট ৭৬ জন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, সম্পত্তি ধ্বংস, জনবিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, বিদ্রোহসহ ১০টি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২৯ জনের বয়স ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।
সিএনএন লিখেছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক মাসে দফায় দফায় গণবিক্ষোভ দেখেছে নাইজেরিয়া। অগাস্টে কর্মসংস্থান ও তরুণদের জন্য ভালো সুযোগ-সুবিধার দাবিতে বিক্ষোভে গুলি চালানো হলে অন্তত ২০ জন নিহত হন, গ্রেপ্তার হন শতাধিক বিক্ষোভকারী।
নাইজেরিয়ায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু হয়েছে গত শতকের সত্তর দশকে। তবে ২০১৬ সাল থেকে এ দণ্ড কার্যকরের নজির নেই।
আবুজাভিত্তিক আইনজীবী আকিনতায়ো বালোগুন বলেন, শিশু অধিকার আইন অনুযায়ী কোনো শিশুকে ফৌজদারি মামলায় আদালতে হাজির করা কিংবা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সুযোগ নেই।
“এই ছেলেদের সবার বয়স ১৯ বছরের বেশি-এটি সরকার যদি প্রমাণ করতে না পারে, তাহলে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ফেডারেল হাই কোর্টের সামনে নিয়ে যাওয়া বৈধ নয়।”
কয়েকজন কিশোরের আইনজীবী মার্শাল আবুবকর বলেন, আদালত শেষ পর্যন্ত আসামিদের প্রত্যেককে এক কোটি নায়রার (৫ হাজার ৯০০ ডলার) মুচলেকায় কঠোর শর্তে জামিন দিয়েছে।
“একটি দেশের দায়িত্ব যেখানে শিশুদের শিক্ষিত করা, সেখানে তারা শিশুদের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এসব শিশুকে ৯০ দিন ধরে না খাইয়ে আটকে রাখা হয়েছে।”
সুশাসনের জন্য কাজ করা নাগরিক সমাজের সংগঠন এনাফ ইজ এনাফের নির্বাহী পরিচালক ইয়েমি আদামোলেকুন বলেন, শিশুদের বিরুদ্ধে বিচার করার অধিকার কর্তৃপক্ষের নেই।
“প্রধান বিচারপতির লজ্জা হওয়া উচিৎ, তিনি একজন নারী ও মা।”
সিএনএন লিখেছে, আফ্রিকার শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশ হওয়ার পরও বিশ্বে দরিদ্রই রয়ে গেছে নাইজেরিয়া। দীর্ঘস্থায়ী দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষের কষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের জীবনধারায় খুব কমই প্রতিফলিত হয়। স্বল্প বেতনের প্রতিবাদে স্বাস্থ্য কর্মীরা সেখানে প্রায়ই ধর্মঘট করেন।
দেশটির রাজনীতিবিদ ও আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে; কেউ কেউ আফ্রিকার মধ্যে সর্বোচ্চ ঘুষ গ্রহীতাও। এমনকি প্রেসিডেন্টের স্ত্রী এখন করদাতাদের অর্থায়নে এসইউভি এবং অন্যান্য বিলাসী পণ্য পাওয়ার অধিকারী।
সিএনএন লিখেছে, আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে নাইজেরিয়াতে সবচেয়ে বেশি ২১ কোটি মানুষের বাস। বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি এই দেশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারছে না। গত ২৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা দেশটির মুদ্রা নায়রার মূল্যমান এখন ডলারের বিপরীতে সবচাইতে কম।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনে নাইজেরিয়াকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক হটস্পট’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। কারণ পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হচ্ছে।