
আমার কাগজ ডেস্ক
ভারত হঠাৎ করেই একতরফাভাবে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করলেও সামগ্রিকভাবে এতে বড় কোনো ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও শিল্পোদ্যোক্তারা। তাদের মতে, এই সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে পরিমাণ রপ্তানি করত, তা মোট রপ্তানির ১ শতাংশেরও কম। তবে বিষয়টি প্রতীকীভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং এ থেকে শিক্ষা নিয়ে কৌশলগত প্রস্তুতির সময় এখনই।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করলেও চীন ছাড়া অন্যদের জন্য তা আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাত আপাতত স্বস্তি পেলেও আগামী তিন মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ কমে যাওয়ায় কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হলেও এ নিয়ে উত্তেজনার প্রয়োজন নেই। বরং ঠান্ডা মাথায় কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সামাল দেওয়া উচিত।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করলে সময় ও খরচ উভয়ই কমত। এখন আকাশপথ বিকল্প হলেও সেটি তুলনামূলক ব্যয়বহুল। তবে নতুন কার্গো টার্মিনাল চালু হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, কিছু কোম্পানি এই রুটের ওপর নির্ভরশীল, তাই তাদের জন্য এটি তাৎক্ষণিক ধাক্কা হলেও সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রভাব সীমিত।
যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হয়ে উঠেছে।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, চীনের ওপর শুল্ক বাড়ায় বাংলাদেশের নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এখন দরকার ৯০ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ কৌশলগত প্রচেষ্টা।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “এই বিরতিটুকু আমাদের প্রস্তুতি নেওয়ার যথেষ্ট সময় দেবে। চীনের শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের সামনে বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”
একজন পোশাক রপ্তানিকারক জানান, মার্কিন বাজারে অর্ডার কমে যাওয়ার আশঙ্কায় একটি বিদেশি ক্রেতা ইতোমধ্যেই আগের অর্ডার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছেন। তাই সরকারের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ও ফলপ্রসূ আলোচনা চালিয়ে যাওয়া।
ভারতের এই সিদ্ধান্তে বেনাপোল থেকে চারটি রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাক পেট্রাপোল কাস্টমসে প্রবেশ করতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে রপ্তানিকারকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশে বিমান ভাড়া অনেক বেশি হওয়ায় অনেক রপ্তানিকারক দিল্লি বা কলকাতা থেকে বিমান ভাড়া করতেন। এখন সেই সুবিধা হারালে খরচ বেড়ে যাবে। ফলে স্থানীয় লজিস্টিক খরচ কমিয়ে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।”
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছেন, সংকট মোকাবিলায় সরকার কৌশলগত প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, “চিঠি দেওয়ার বিষয়টি আপাতত বিবেচনায় নেই। তবে আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ৯০ দিনের বিরতি বাংলাদেশকে সাময়িক সুরক্ষা দিয়েছে, এ সময়টুকুতে কৌশলগত আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান খোঁজাই এখন মূল লক্ষ্য।