
আমার কাগজ ডেস্ক
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ইডির কর্মকর্তারা আবগারি নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কেজরিওয়ালের বাসভবনে যান। সেখান থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভারতের ইতিহাসে মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকা অবস্থায় প্রথম ব্যক্তি হিসেবে গ্রেপ্তার হলেন কেজরিওয়াল। তাঁর দল আম আদমি পার্টি বলেছে, কারাগারে থেকেই দলের প্রধান ও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাবেন কেজরিওয়াল।
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আগে কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে আম আদমি পার্টি। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর দলের নেতা ও দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী অতীশী মারলেনা সিং সাংবাদিকদের বলেন, দুই বছর আগে এ মামলার তদন্ত শুরু হয়েছিল। এ মামলায় আম আদমি পার্টির নেতা ও মন্ত্রীদের বাসায় হাজারো অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু এক রুপিও উদ্ধার করতে পারেনি ইডি বা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই)। তাঁকে (কেজরিওয়াল) গ্রেপ্তার করাটা বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটা ষড়যন্ত্র।
ইডির ১২ সদস্যের একটি দল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর তল্লাশি পরোয়ানা নিয়ে দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের বাসভবনে যায়। তাঁরা কেজরিওয়াল ও তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোন জব্দ করেন। কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন ইডি কর্মকর্তারা। এ সময় মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। আশপাশে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। প্রায় দুই ঘণ্টা পর কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে দিল্লিতে ইডির কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের এই অভিযোগ আনা হয় দিল্লি সরকারের ২০২১–২২ সালের আবগারি নীতি ঘিরে। অভিযোগ ওঠে, ওই নীতিতে বেশ কিছু মদ ব্যবসায়ীকে সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। পরে অবশ্য ওই নীতি বাতিল করা হয়েছিল। তদন্ত সংস্থা ইডির অভিযোগ, এই নীতি করে আম আদমি পার্টির নেতারা ১০০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন।
এ মামলায় এর আগে দলটির নেতা মনীশ সিসোদিয়া ও সঞ্জয় সিংহকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা বর্তমানে কারাগারে আছেন। এ মামলায় গত সপ্তাহে তেলেঙ্গানার বিআরএস নেতা কে কবিতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইডির অভিযোগ, এসব রাজনীতিবিদ ও কিছু ব্যবসায়ী মিলে যোগসাজশ করে ওই আবগারি নীতি করেছিলেন। তাতে কিছু ব্যবসায়ী সুবিধা পান এবং তার একটি অংশ রাজনীতিবিদদের হাতে যায়। তাঁরা সবাই মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
এ মামলায় গত নভেম্বর থেকে আট দফায় ইডির সমনে হাজির হননি কেজরিওয়াল। গত সোমবার অর্থ পাচার মামলার পৃথক আরেকটি সমনেও হাজির হননি তিনি। তাঁকে এভাবে তলব করাটা বেআইনি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল।
কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারকে লজ্জাজনক বলেছে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। দলটির নেতা রাহুল গান্ধী গতকাল রাতে এক্সে এক পোস্টে বিজেপি সরকারকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, মিডিয়াসহ সব প্রতিষ্ঠান দখল, দল ভাঙা, বিভিন্ন কোম্পানি থেকে চাঁদা তোলা এবং প্রধান বিরোধী দলের তহবিল কেড়ে নেওয়া যথেষ্ট ছিল না, এখন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীদেরও গ্রেপ্তার করতে শুরু করেছে। ভারতবাসী এর উপযুক্ত জবাব দেবেন।
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন, এনসিপির প্রধান শারদ পাওয়ার, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি, এসপির প্রধান অখিলেশ যাদব। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ডেরেক ও’ ব্রায়েন এক্স পোস্টে লিখেছেন, ‘ভোটপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। তার পরেই এই ঘটনা! বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা, মুখ্যমন্ত্রী, নির্বাচনী এজেন্ট, কর্মীদের হেনস্তা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমাদের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী?’