
আমার কাগজ প্রতিবেদক
পুলিশি হেফাজতে থাকা ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর সমর্থনে তুরস্কে টানা তৃতীয় দিনের মতো ব্যাপক বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। শনিবার (২২ মার্চ) তাকে আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে।
গত বুধবার ভোরে এই মেয়রকে গ্রেপ্তারের ফলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তুরস্কের রাস্তার সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ শুরু হয়। আরব নিউজ জানিয়েছে, আদালতে হাজির করার আগের রাতেও বিক্ষোভকারীরা ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সমাবেশ করে।
বিক্ষোভকালে ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইজমিরে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ হয়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট এবং জলকামান নিক্ষেপ করে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনী ৯৭ জনকে আটক করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া।
ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর সমর্থনে তুরস্কে বিক্ষোভ।
মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, আটককৃতদের প্রকৃত সংখ্যা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ রাতারাতি বেশ কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে।
২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রজাতন্ত্রী জনতা দল (সিএইচপি) থেকে ৫৩ বছর বয়সী মেয়র ইমামোগলুকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার কয়েকদিন আগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইনি জটিলতার ক্রমবর্ধমান ঝামেলার মধ্যে ইমামোগলু গত বছর ব্যাপকভাবে মেয়র হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে আরও ‘একটি সন্ত্রাসী সংগঠনকে (পিকেকে) সহায়তা এবং মদদ দেওয়ার’ মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘুষ, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, ব্যাপক জালিয়াতি এবং একটি অপরাধমূলক সংগঠনের অংশ হিসেবে অবৈধভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এসব মামলায় তার সঙ্গে আরও অনেকেই আসামি করা হয়েছে।
ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর সমর্থনে তুরস্কে বিক্ষোভ।
গতকাল শুক্রবার পুলিশ দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে পুতিন তাকে ছয় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে বলে তার দল জানিয়েছে। মেয়রের একজন আইনজীবী মেহমেত পেহলিভান বলেছেন, ইমামোগলু সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আইনজীবী এক্স-পোস্টে লিখেছেন, সমাজের চোখে ইমামোগলুর সুনাম ক্ষুণ্ণ করাটাই এই গ্রেপ্তারের লক্ষ্য ছিল। উভয় তদন্তই অসত্য অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।
এদিকে, শনিবার রাতে দেশজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড়ের পর আবারও সমাবেশ করার কথা রয়েছে। আইনজীবীদের মাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় ইমামোগলু বলেছেন, তিনি তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে ৫০টিরও বেশি প্রদেশে রাস্তায় নেমে আসা বিক্ষোভকারীদের জন্য ‘সম্মানিত এবং গর্বিত’। ‘তারা আমাদের প্রজাতন্ত্র, আমাদের গণতন্ত্র, ন্যায়পরায়ণ তুর্কিদের ভবিষ্যত এবং আমাদের জাতির ইচ্ছা রক্ষা করছেন।’
শুক্রবার রাতে ইস্তাম্বুলের সিটি হলের বাইরে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধান বিরোধী দল সিএইচপির প্রধান ওজগুর ওজেল বলেন, বিক্ষোভ নিষেধাজ্ঞা এবং রাস্তার সন্ত্রাস (তিনি পুলিশি কর্মকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন) সহ্য করবে না তুরস্ক। কেননা এরদোগানের তীব্র সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে ৩ লাখ মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইমামোগলুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পর তুর্কি মুদ্রার ব্যাপক দরপতন হয়েছে এবং আর্থিক বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। শুক্রবার তুর্কি স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক প্রায় আট শতাংশ কমে গেছে।