
আমার কাগজ প্রতিবেদক
তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বেরিস একিনচি দুই দিনের সফরে সোমবার সকালে ঢাকায় এসেছেন। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। তুরস্কের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বেরিস একিনচি।
এ বৈঠকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও রাজনীতিতে সম্পর্কে গভীর করার বিষয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পাঁচ বছরের বেশি সময় পর অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের চতুর্থ বৈঠক এটা। বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে। এ বিবৃতিতে রাজনৈতিক পরিসরে সম্পর্ক জোরদার, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে অংশীদারত্বে রূপ নেওয়ার মত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সফরের প্রথম দিন সোমবার এ বেরিস একিনচি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন।
আজ পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর তিনি পররাষ্ট্র উপদেস্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেস্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
আলোচনায় যা গুরুত্ব পাবে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ও তুরস্কের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ব্যবসা–বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দুই দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বেড়েছে। খুব সঙ্গত কারণেই এ বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক পরিসরে সম্পর্ক জোরদারের বিষয়টিও আলোচ্যসূচির ওপরের দিকে রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের সম্পর্কের নানা বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যু নিয়ে দুপক্ষ প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আলোচনা করবে। খসড়া আলোচ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, রাজনৈতিক সম্পর্ক, উন্নয়ন ও কৃষি খাতে সহায়তা, স্বাস্থ্য, অভিবাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, যোগাযোগের মতো বিষয়গুলো রয়েছে।
সন্ত্রাসবাদের দমনের বিষয়ে লক্ষ্য ঠিক করে নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে দুই দেশ আলোচনা করবে। এর পাশাপাশি রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা এবং রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান।
আঞ্চলিক বিষয়ের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং মধ্যপ্রাচ্য সংকট, বিশেষ করে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন। আন্তর্জাতিক বিষয়ের মধ্যে থাকবে ডি–৮, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় এক দেশের প্রতিনিধিকে অন্য দেশের অকুন্ঠ সমর্থন জানানো।
গুরুত্বপূর্ণ সফর বিনিময়
গত বছরের আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের অনেকগুলো সফর বিনিময় হয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তুরস্কের বাণিজ্যমন্ত্রী ওমের বোলাট। সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়।
এরপর ফেব্রুয়ারিতে আঙ্কারা সফর করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম। তিন দিনের ওই সফরের সময় তিনি তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বেরিস একিনচির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া তিনি অর্থ, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিনিয়োগ সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এপ্রিলে আনতোলিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরামে অংশ নেওয়ার ফাঁকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দুই দেশের অংশীদারত্বকে ভবিষ্যতে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার বিষয়ে তাঁদের আলোচনা হয়।
গত জুলাইতে ঢাকায় আসেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার প্রধান হালুক গরগুন। এক দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানায়, বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সম্ভাব্য কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তুরস্ক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা ও আঙ্কারার মধ্যে উচ্চপর্যায়ের এসব সফরের পর বেরিস একিনচির এ সফর বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষত গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় সম্পর্ককে অব্যাহত রেখে নতুন উচ্চতায় নিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের ওপর নজর রাখছে তুরস্ক। সফরের প্রথম দিনে তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতবিনিময় সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।