
আমার কাগজ ডেস্ক
রাজধানী ঢাকার বায়ুর মান আজও অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। যদিও বুধবারের (২৬ ফেব্রুয়ারি) তুলনায় সামান্য উন্নতি হয়েছে, তবে বৈশ্বিক মানদণ্ডে এখনও ঢাকার বাতাস অত্যন্ত দূষিত।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় ঢাকার বায়ুমান সূচক (একিউআই) ১৯১ রেকর্ড করা হয়েছে, যা গতকালের ২১৭-এর তুলনায় কিছুটা কম। তবে অন্যান্য শহরের তুলনায় দূষণের মাত্রা এখনো অনেক বেশি।
বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় আজ দিল্লি শীর্ষে রয়েছে, যেখানে একিউআই ২২৮। দ্বিতীয় স্থানে সাংহাই (১৯২) এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা (১৯১)। এছাড়া, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে কাঠমান্ডু (১৮৫) এবং ডাকার (১৮৪)।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার নিয়মিত একিউআই প্রকাশ করে, যা বায়ুর মান বিশ্লেষণ করে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা দূষণের প্রধান কারণ, যা শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
বিশুদ্ধ বাতাসের সূচক ৫০-এর নিচে হলে তা নিরাপদ ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে সহনীয়, তবে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ১০১-১৫০ পর্যন্ত সতর্কতামূলক, ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর। ২০১-৩০০ পর্যন্ত সূচক খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০০-এর বেশি হলে তা ভয়াবহ দূষিত বলে বিবেচিত হয়।
বায়ুদূষণের ফলে প্রতিবছর লাখো মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল (বিএমজে)-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যানুসারে, গৃহস্থালি ও পরিবেশগত বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে প্রতি বছর প্রায় ৬৭ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বায়ুর মান বিপজ্জনক পর্যায়ে থাকায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় নাগরিকদের বাইরে বের হলে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। সংবেদনশীল ব্যক্তিদের (শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ) খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে না যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ইটভাটা ও শিল্পকারখানার বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, ট্রাক ও লরি ঢেকে নির্মাণসামগ্রী পরিবহন করা এবং ধোঁয়া নির্গত করা পুরোনো যানবাহন রাস্তায় না নামানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এ বছর ঢাকার বায়ুর মান ১০ শতাংশ পর্যন্ত খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ডিসেম্বরে বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ঢাকার বাতাস আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, যা জনস্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।