
আমার কাগজ ডেস্ক
যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। শান্তিচুক্তির জন্য একের পর এক শর্ত দিয়ে যাচ্ছে মস্কো।
এখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নতুন দাবি, ইউক্রেনের বর্তমান জেলেনস্কির সরকারকে সরিয়ে সাময়িক একটি প্রশাসনকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। ওই প্রশাসনের হাত ধরেই যুদ্ধ বন্ধ হবে। খবর রয়টার্সের।
রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলের মুরমানস্ক বন্দর পরিদর্শন করতে গিয়ে শুক্রবার (২৮ মার্চ) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ কথা বলেন পুতিন।
এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করে পুতিন বলেন, ‘আমার মতে, যুক্তরাষ্ট্রে নতুনভাবে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন কারণে এ সংঘাত শেষ করার বিষয়ে সচেতন।’
ইউক্রেনে সাময়িক প্রশাসন ক্ষমতায় এলে তাঁদের অধীন নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং যুদ্ধ বন্ধ হবে উল্লেখ করে পুতিন বলেন, এ যুদ্ধসহ যেকোনো যুদ্ধে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে রাশিয়া।
তবে এমন কোনো সমাধানের জন্য মস্কো কোনো ছাড় দিতে পারবে না। যুদ্ধের সম্মুখসারিতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যরা কৌশলগতভাবে এগিয়ে রয়েছেন।
তিন বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ শুরুর পর দেশটিতে সামরিক শাসন জারি করা হয়। স্থগিত হয় নির্বাচন। ফলে চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মেয়াদ শেষ হলেও এখনো তিনি ক্ষমতায় রয়েছেন। এ নিয়ে সম্প্রতি আপত্তি তুলেছিলেন ট্রাম্পও। তিনি সরাসরি জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
আসলে ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর থেকে বড় বিপত্তিতে পড়েছে কিয়েভ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট যেভাবে তাদের এককাট্টা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলেন, তা থেকে সরে এসেছেন ট্রাম্প।
শান্তিচুক্তির প্রচেষ্টার পাশাপাশি কিয়েভের ওপর একপ্রকার চড়াও হয়েছেন তিনি। তবে শুক্রবারের পুতিনের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেন, ইউক্রেনে ক্ষমতায় কে থাকবে, তা দেশটির সংবিধানের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
এদিকে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের এক–পঞ্চমাংশ এলাকা এখন রাশিয়ার দখলে। দেশটিতে ইউক্রেন বাহিনীর বিপরীতে ভালো অবস্থানে রয়েছে রুশ বাহিনী।
এরই মধ্যে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের আরও একটি গ্রাম ইউক্রেনের হাত থেকে মুক্ত করেছে তারা। গত আগস্টে অতর্কিত অভিযান চালিয়ে অঞ্চলটির বড় অংশ দখল করে নেয় ইউক্রেন বাহিনী।
রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেওয়া গ্রামটির নাম জোগোলেভকা। শুক্রবার গ্রামটি মুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে গত তিন সপ্তাহে কুরস্ক অঞ্চলের আরও বেশ কয়েকটি এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের হাতে এখন শুধু এ অঞ্চলে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
ধীরে ধীরে কুরস্কের নিয়ন্ত্রণ হারানোর মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ক্ষেত্রে কিয়েভের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ল। এ অঞ্চলকে চুক্তির জন্য দর–কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছিলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি।
সে কথা ভেবেই হয়তো চলতি মাসের শুরুর দিকে কুরস্ক সফরে গিয়ে পুতিন বলেছিল, যেকোনো মূল্যে অঞ্চলটি দখলমুক্ত করতে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে যে খনিজ সম্পদ চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে, তার শর্তগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে চুক্তি নিয়ে ইউক্রেনের কাছে নতুন একটি প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
চুক্তি অনুযায়ী ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ থেকে আয় যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে হবে। এভাবে বিগত তিন বছর ধরে কিয়েভকে যে পরিমাণ অর্থ ওয়াশিংটন দিয়েছে পরিশোধ করতে হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে সুদও।
ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী উইলিয়া এসভিরিদেঙ্কো দেশটির আইনপ্রণেতাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে যে চুক্তির খসড়া দিয়েছে, সে বিষয়ে ঐকমত্য হলেই ইউক্রেনের অবস্থান সম্পর্কে জানানো হবে।
এর আগে এ নিয়ে জনসম্মুখে আলোচনা ক্ষতিকর হতে পারে। আর প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেছেন, এখনো চুক্তির কোনো চূড়ান্ত খসড়া হয়নি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নানা পর্যায়ে এখনো আলোচনা চলছে।