
আমার কাগজ প্রতিবেদক
জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নিয়ে রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে আলাপ আলোচনা চলছে। ভোটের প্রস্তুতিতে পিছিয়ে নেই জামায়াতে ইসলামী। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে প্রচার চালাচ্ছে দলটি। তবে নির্বাচনী মাঠে থাকলেও এখনো জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক নেই।
২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরবর্তীতে হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াতে ইসলামী। তবে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানিতে জামায়াতের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় গত নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ বলে আপিল খারিজের আদেশ দেন। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল থাকে।
যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়। সেসময় দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘দাড়িপাল্লা’ও হারায় দলটি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাতিল হওয়া নিবন্ধন ও প্রতীক আইনি লড়াই করেই ফিরে পেতে চায় দলটি।
গণঅভুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি পাল্টেছে। তবে ৮ মাসেও জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ার আবেদনের সুরাহা হয়নি উচ্চ আদালতে।
এবিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আবদুল হালিম বলেন, ‘১৯৭৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে এ পর্যন্ত জামায়াতের ৫৫ জন নেতা জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাদের মধ্যে ৫০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী।’
তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন না পাওয়া আমাদের জন্য দুঃখজনক। আশা করি সাংবিধানিক ও আইনানুগ পন্থায় আমরা ন্যায়বিচার পাব।’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জানান, আমাদের রেজিস্ট্রেশনকে আওয়ামী লীগ বাতিল ঘোষণা করেছে । আসলে এটি জুলুম এবং অন্যায় হয়েছে। সামন শুনানি হলে আমরা আশাবাদী আমরা আমাদের রেজিস্ট্রেশন ফিরে পাবো।
নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়টি আইনগতভাবে সুরাহার ক্ষেত্রে দীর্ঘসুত্রতার কারন জানালেন দলটির আইনজীবী অ্যাড. শিশির মনির। তিনি জানান, জামাতের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মামলাটি আংশিক শ্রুত হয়েছিল।আংশিক শ্রুত যে বেঞ্চে হয়েছিল সেই বেঞ্চের একজন বিচারপতি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি প্রায় এক মাস আদালতে আসতে পারেননি। পরে এক মাস আদালত বন্ধ ছিলো। এ কারণেই বিষয়টিতে সময় লাগছে।
আপিল বিভাগে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাবে জামায়াত এমন প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, জামায়াতের রেজিস্ট্রেশনের নিয়ে অনেকে মনে করে জামায়াত আর প্রতীক ফিরে পাবে না। আমরা এমন আইনী উদ্যোগ নিয়েছি যেটাতে নিবন্ধন ও প্রতীক দুটোই পাওয়া যায়।
এই ইস্যুতে উচ্চ আদালতের শুনানিতে কিছুটা বিলম্বিত হলেও কাঙ্খিত রায়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী জামায়াতের নেতারা।
গত বছরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২২ অক্টোবর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে আদেশ দেয় আপিল বিভাগ। এর ফলে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াই করার পথ খুলে যায়।