
ফাইল ছবি
আমার কাগজ প্রতিবেদক
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের ফি সিটি করপোরেশন পাবে, নাকি সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হবে- এ নিয়ে মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে চিঠি চালাচালি চলছে দীর্ঘ কয়েক মাস। এ প্রশ্নের সমাধান না হওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে প্রায় দুই মাস। এ সমস্যার সমাধান কী তা জানে না জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়।
সরকারি দুই সংস্থার দ্বন্দ্বে অসহায় হয়ে পড়েছেন সেবাগ্রহীতা সাধারণ নাগরিকরা। জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পাসপোর্ট, স্কুলে ভর্তি, ব্যাংক হিসাব খোলা, ভূমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমসহ ১৯টি নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
মাসের পর মাস মানুষ ভোগান্তিতে থাকলেও সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ও দায়সারা জবাব দিচ্ছেন। শুধু ডিএসসিসি নয়- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশনও জন্মনিবন্ধন ফির ভাগ চায়। তবে ডিএসসিসির মতো অন্যরা কাজ বন্ধ রাখেনি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন কিছুদিন বন্ধ রাখার পর চালু হলেও টাকার বিষয়টি সমাধান হয়নি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ফি জটিলতায় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি বলেন, আমি যতটুকু জানি সিটি করপোরেশন টাকা দিচ্ছে না। তবে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। টাকা সিটি করপোরেশন পাবে, নাকি সরকারি কোষাগারে যাবে- বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এজন্য আমি নোট দিয়ে চিঠি লিখেছি দ্রুত সমাধানের জন্য।
দক্ষিণে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এবং উত্তর সিটিতে অনলাইনে আবেদন করা যাচ্ছে না- এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘সমাধান কী আমি জানি না। ফি নিয়ে জটিলতা সমাধান তাদের হাতেই, তারা করলেই পারে।’ উত্তর সিটি করপোরেশনে সাধারণ সেবাগ্রহীতারা অনলাইনে আবেদন করতে পারছে না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের আবেদন আপাতত বন্ধ আছে। মেরামতের কাজ চলছে।’ কতদিনের মধ্যে পুনরায় চালু হতে পারে জানতে চাইলে বলেন, এটা বলতে পারব না। সমাধান হলে খুলে দেওয়া হবে।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
মো. মিজানুর রহমান বলেন, ফি নিয়ে জটিলতার জন্য আপাতত বন্ধ আছে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চিঠি চালাচালি চলছে। আশা করি দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে। মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। ফি সংক্রান্ত জটিলতা কেটে গেলে কার্যক্রম শুরু হবে। তবে কবে হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো জবাব দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।
জন্মনিবন্ধন বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ৯৭ নয়াটোলার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদ খান তুষার। তিনি বলেন, খুব জরুরি প্রয়োজনে আমার ছেলের জন্মনিবন্ধন করাতে প্রথমে আমার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নে আমার ভাইকে পাঠাই। সেখানে কয়েকদিন ঘুরে হতাশ হয়ে ফিরে এলাম। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বলা হয়েছে সার্ভারে সমস্যা। তাই ভাবলাম ঢাকায় হয়তো সার্ভারে সমস্যা হবে না। যেহেতু আমার বাসা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তাই অনলাইনে একাধিকবার চেষ্টা করলাম। দোকানে গিয়ে করাতে গিয়েও পারিনি। দোকান থেকে বলা হয়েছে সার্ভারে সমস্যা। এখন পর্যন্ত জন্মনিবন্ধন করতে পারিনি।
জন্মনিবন্ধন বন্ধ থাকায় পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ভিসা আবেদন, ব্যাংক হিসাব খোলা, ভূমিসেবা, টিকাগ্রহণসহ ১৯টি নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, আগে জন্মনিবন্ধনের ফি হাতে নেওয়া হতো এবং সপ্তাহ শেষে চালান আকারে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করত ডিএসসিসি। আর ফির আরেকাংশ সিটি করপোরেশনের তফসিলভুক্ত আয় হিসেবেই গণ্য করা হতো। গত এপ্রিলে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের ফি পরিশোধে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় (জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন)।
এ ই-পেমেন্ট চালু হওয়ায় সব অর্থ সরাসরি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়। তখন এই খাতে ডিএসসিসির আয় বন্ধ হয়ে যায়। এই আয় বা অর্থ আদায়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের ওপর চাপ বাড়াতে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেন ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। এখন জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য কেউ ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে গেলে নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে বলে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
দেশের সব সিটি করপোরেশন (১২টি), পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন ফি অনলাইনেই নেওয়া হচ্ছে। একমাত্র ডিএসসিসি তা মানতে নারাজ। তারা আগের মতোই চালান আকারে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে চায়।
জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাচ্চাকে স্কুলে দিতে পারছেন না অনেকে। এমনই এক অভিভাবক সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন বলেন, ‘বাচ্চার জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে জানতে পারলাম আমার ও আমার স্ত্রীর জন্মনিবন্ধনও লাগবে। আমার বাসা কাদেরাবাদ হাউজিংয়ে। আমি উত্তর সিটি করপোরেশনে গিয়ে সেবাটি পাইনি। এমন একটি জরুরি সেবা এভাবে বন্ধ রেখে মানুষকে হয়রানি করার মানে হয় না।’