
নওগাঁ প্রতিনিধি
গত দুদিনে নওগাঁর রাণীনগরে ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি ও কৃষ্ণপুর নামক স্থানের বেড়িবাঁধ এবং মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর উভয়তীরের ছয় স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত দেড় হাজার পরিবার।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংস্করণে কাজ করতে দেখা গেছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে।
এরইমধ্যে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা জমির আউশ ও আমন ধানের খেত। চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ।
রাণীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের নান্দাইবাড়ি, কৃষ্ণপুর ও প্রেমতলীসহ কয়েকটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া শতাধিক হেক্টর জমির আবাদ, বিশেষ করে মাঠে থাকা কাঁচামরিচ, পটল, শীতের সবজির খেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে মান্দা উপজেলায় বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ ইউনিয়নের নুরুল্লাবাদ ও পারনুরুল্লাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪০০ পরিবার এবং ফকিন্নি নদীর তীরবর্তী এলাকায় আরও অন্তত ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রসাদপুর ইউনিয়নের বাইবুল্যা ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কয়লাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০০ পরিবার। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধ সংস্কার না করার কারণে বেশকিছু অংশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাঁধের ঝঁকিপূর্ণ অংশে নতুন করে ভাঙার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে অন্যান্য স্থানের নদীপাড়ের মানুষ।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল জানান, গত রোববার সকাল থেকে আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এ নদীর পানি বেড়ে এখন আত্রাই নদীর শিমুলতলী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার, মহাদেবপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার ও জোতবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন ভেঙে যাওয়া অংশগুলো আমরা স্ব স্ব উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে জিওব্যাগের মাধ্যমে মেরামতের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে আরও কয়েক দিন পানি বাড়তে পারে। নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বালুভর্তি বস্তা ফেলে মেরামতের কাজ চলছে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধের আর কোথাও যেন নতুন করে ভেঙে না যায় এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা নিয়ে ভেঙে যাওয়া অংশে বস্তায় বালি ফেলে বন্ধ করার কার্যক্রম চলছে। আশা করছি, নদীর পানি কমতে শুরু করলে এলাকার আর কোথাও ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।