
আমার কাগজ প্রতিবেদক
ফ্যাসিবাদের দোসররা জেঁকে বসে আছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে। তাদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে গুরুত্বপূর্ণ নানা কর্মকান্ড। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন হজ কার্যক্রমে সংকট ও বিশৃঙ্খলা তৈরি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
অভিযোগ মতে, হজ উইং-এর দায়িত্বে আছেন যুগ্মসচিব নেতা ড. মোঃ মন্জুরুল হক। প্রশাসনিক পদবীর চেয়ে তার রাজনৈতিক পরিচয় সবার মুখে মুখে। তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং ফ্যাসিস্টের অন্যতম সুবিধাভোগী। সরকার পরিবর্তনের পরও হজ শাখার পুরো দায়িত্ব কিভাবে তার ওপর ন্যস্ত- সেই প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনজুরুল হক ১৯৯৭-৯৮ সালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০০ সালে ছাত্রলীগের কোটায় বিতর্কিত ২০ তম বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারে সরকারি চাকুরি বাগিয়ে নেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামূল হক শামিম ও সাবেক নৌমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বিশেষ আস্থাভাজন ছিলেন মন্জুরুল হক। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাড়ী এবং মন্জুরুল হকের বাড়ী দিনাজপুরের বিরল উপজেলায়।
মন্জুরুল হক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিনিয়োগ বোর্ডের উপসচিব ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ২০২৩ সালে তাকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ উইং এর দায়িত্ব দিয়েছেন। ২০২৪ সালে আওয়ামী দোসর তৎকালীন সরকারি কর্মকর্তা, ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী, এমপি সহ বহু লোককে সরকারি টাকায় হজে নিয়ে যাওয়ার কাজটি সুচারুরুপে করেছেন এই মন্জুরুল হক। তাকে সহযোগিতা করেন অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম। মতিউল ইসলাম তাবলীগের সাদ গ্রুপের নেতা। সরকারকে বিপদে ফেলতে তাবলীগের সাদ গ্রুপও তৎপর। ২০২৩ সালে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের নিয়োগকৃত হজ পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত আওয়ামী দোসররা কিভাবে বর্তমান ছাত্রজনতার সরকারের সময়ে এই স্পর্শকাতর জায়গায় বহাল তবিয়তে অবস্থান করে, তা অবাক হওয়ার মত বিষয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে ৭১ জন আওয়ামী লীগ নেতা ও ফ্যাসিবাদের দোসরকে হজে নিয়ে যাওয়া হয় সরকারি খরচে। শুধু তাই নয় ১০ জন আওয়ামী সাংবাদিককে মন্জুরুল হক নিজ উদ্যোগে সরকারি খরচে হজে নিয়ে যান। এ সংক্রান্ত পত্রটি তিনি তার নিজের স্বাক্ষরে জারি করেন।
এদিকে এবছর ২০ হাজার হজযাত্রী হজে যেতে পারবেন না বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ইতিমধ্যেই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মন্জুরুল হক খুব পরিকল্পিতভাবে সরকারকে বিপদে ফেলতে এসব করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সময়মত পদক্ষেপ না নেয়া বা মাননীয় উপদেষ্টা ও সচিবকে ভুল বুঝিয়ে হজ ব্যবস্হাপনায় চরম বিশৃঙ্খলা তৈরী করে সরকারকে বিপদে ফেলতে কাজ করছে মন্জুরুল হক চক্র। এ চক্রে আছেন ফ্যাসিস্টের আরেক দোসর জহিরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি মক্কার কাউন্সিলর (হজ) এর দায়িত্বে রয়েছেন।
এবছর এজেন্সী প্রতি হাজীর সর্বনিম্ন সংখ্যা ২৫০ থেকে হঠাৎ করে ১ হাজার করা হলো। এবিষয়ে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে উপদেষ্টাকে মিসগাইড করেছে ফ্যাসিবাদের দোসররা। অথচ সউদি সরকার এজেন্সী প্রতি হাজীর সর্বনিম্ন সংখ্যা ৫০০ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার পরও কাউন্সিলের হজ জহিরুল ইসলামের ষড়যন্ত্রে তা হয়নি। এর আগে মন্ত্রণালয় থেকে সর্বনিম্ন সংখ্যা ৫০০ জন এর সার্কুলার জারি হলে এজেন্সীগুলি সে মোতাবেক কাজ সম্পন্ন করার পর পুনরায় সর্বনিম্ন সংখ্যা ১০০০ জন নির্ধারণ করে পত্র জারির পর বিপাকে পড়েছে অনেক এজেন্সি। হজে পরিকল্পিতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সরকারকে বিপদে ফেলতেই যুগ্মসচিব মন্জুরুল হক ও কাউন্সিলর একাট্টা হয়ে এ অপকর্ম করেছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। তাদের মতে, এজেন্সী প্রতি হাজীর সংখ্যা যত বেশী হবে হজযাত্রীদের সেবা দেয়া তত কঠিন হবে। বেসরকারি হজযাত্রীদের বাড়ী ভাড়া সম্পন্ন হয়নি। সউদি সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে তা করতে পারে নাই অনেক এজেন্সি। এ সংকট সৃষ্টির নেপথ্যেও কলকাঠি নেড়েছেন মন্জুরুল হক। একদিকে এজেন্সি বাড়ী ভাড়া করতে যাওয়ার ভিসা দিতে পারেনি মন্ত্রণালয়, অপরদিকে সউদি সরকার থেকেও সময় বৃদ্ধি করতে পারেনি। ফলে প্রায় ২০ হাজার হজযাত্রীর জন্য বাড়ী ভাড়া হয় নাই। যে বিষয়টি সবচেয়ে আতংকের তা হলো অনেক এজেন্সী হজযাত্রীদের জন্য বাড়ী ভাড়া না করে বাড়ি ভাড়ার কাগজ কিনে তা দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত করেছে। অর্থাৎ হজযাত্রীদের ভিসা করার জন্য অনলাইনে বাড়ী ভাড়ার ডকুমেন্ট আপলোড করতে হয়। তা আপলোড করার শেষ সময় ৪ এপ্রিল শেষ হয়েছে। অনেক এজেন্সী হজযাত্রীদের বাড়ী ভাড়া এসময়ে করতে পারে নাই। তারা বাড়ী ভাড়ার ভ‚য়া কাগজ (তসরিয়া) ক্রয় করে ই হজ সিস্টেমে আপলোড করেছে। যে সকল এজন্সীর বাড়ীর কোন অস্তিত্ব নাই। বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। এসকল হজযাত্রী সউদি আরবে গিয়ে বাড়ী বা হোটেল পাবেন না। তখন বিশাল সমস্যা তৈরী হবে।