চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম নগরে একটি পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে এই দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন শহিদুল করিম ও নুরুল ইসলাম। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানায়নি পুলিশ।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ আজ শুক্রবার সকালে বলেন, পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আজ বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনসে নগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে।
কাজী তারেক আজিজ আরও বলেন, এ ঘটনায় থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।
ঘটনাটি ঘটে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে, নগরের রহমতগঞ্জের জে এম সেন হলে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান মঞ্চে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছয় সদস্য এই দুর্গাপূজার মঞ্চে দুটি গান পরিবেশন করেন। এর মধ্যে একটি গান ছিল ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’। সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম গতকাল রাতেই ওই পূজামণ্ডপে যান। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেন তিনি। এখন দুজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানাল পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রায় তিন মিনিটের একটি ভিডিওটিতে দেখা যায়, ছয়জন তরুণ মঞ্চে গান পরিবেশন করছেন। আশপাশে উপস্থিত কয়েকজনকে সেটি মুঠোফোনে ধারণ করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান বলেন, পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই সেখানে সংগীত পরিবেশন করতে গেছেন তারা। সেখানে দুটি গান পরিবেশন করা হয়েছে, দুটিই সম্প্রীতির সংগীত। কেউ কেউ ভিডিও এডিট করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও যাচাই করে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, গানের ভিডিওটি আসল, এডিটেড নয়।
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর (উত্তর) ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, এটি ছাত্রশিবিরের কোনো সংগঠন নয়। তবে জামায়েতে ইসলামীর একজন নেতা নিশ্চিত করেছেন, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্র বলছে, গতকাল সন্ধ্যায় মঞ্চে নাচের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। এ সময় কয়েকজন তরুণ এসে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন বলে মঞ্চে ওঠেন। তাঁরা দুটি গান পরিবেশন করেন। পরে তাঁরা ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে নেমে চলে যান। তাঁরা গান গাওয়ার সময় কেউ তাঁদের নামায়নি বা প্রতিবাদ করেনি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন বলেন, পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে ওই তরুণেরা এসে বলেছেন, তাঁরা মঞ্চে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন। পরে তাঁরা উঠে গান শুরু করেন। গান করা শেষে তাঁরা চলে যান। এ বিষয়ে জানতে গতকাল রাতে সজল দত্তের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় সেখানে চট্টগ্রামের আদালত ঘোষিত সিটি মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম নগরের আমির শাহজাহান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শাহাদাত হোসেন ফোন ধরেননি। আর জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, তিনি এদিন কোনো পূজামণ্ডপে যাননি।
পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এ সময় তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারাই জড়িত হোক না কেন, তাদের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে।