
বিনোদন প্রতিবেদক
সালমান শাহ, মৌসুমী, শাবনূর, পূর্ণিমা কিংবা রিয়াজদের সময়ে প্রচলন ছিল ভিউ কার্ডের। ভক্তরা তাদের প্রিয় তারকার ছবি সম্বলিত ভিউ কার্ড কিংবা পত্রিকার কাটিং নিজেদের সংগ্রহে রাখতেন। এরপর সময়ের পরিক্রমায় তা হারিয়ে যায়। আধুনিক যুগে দেখা যায় না বললেই চলে। সোশ্যাল মিডিয়ার এ যুগে এরকম এক বিরল উপহার কিংবা ভালোবাসার নিদর্শন দেখা গেলো চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদকে ঘিরে।
সিয়ামের যেকোনো ছবি, বিজ্ঞাপনী পোস্টার কিংবার পত্রিকায় সংবাদ পেলেই তা যেকোনো মূল্যে সংগ্রহ করেন এক তরুণী। সাত বছর আগে ‘মেঘ এনেছি ভেজা’ নাটক দেখে তার ভক্ত বনে যান। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তার কোনো কাজই মিস করেন না। শুধু তাই নয়, এই সাত বছরে সিয়াম আহমেদের যগুলো ছবি পেয়েছেন কিংবা পত্রিকায় নিউজ কিংবা ইন্টারভিউ পেয়েছেন তার সবই বহু কষ্টে সংগ্রহ করেছেন। শুধু তাই নয়, ২০১৯ সাল থেকে নিজের জন্মদিন পালনের জন্য জমানো টাকা দিয়ে প্রতি বছর এই নায়কের জন্মদিন পালন করে আসছেন তিনি। সেই সঙ্গে এই নায়কের ছেলের জন্মদিনও পালন করেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেসব ছবির একাংশ শেয়ার করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই তরুণী। সেখানে দেখা যাচ্ছে ঘরের দেয়াল জুড়ে সিয়াম আহমেদের ছবির শতাধিক পেপার কাটিং। পোস্টে তিনি লিখেন, ‘২০১৭ সালে এক কিশোরী মেয়ে এমন একজন নায়কের প্রেমে পড়ে যে কি না দেখতে ভীষণ সুন্দর ছিল। কিন্তু এখন সে সেই নায়কের পেছনের মানুষটিকে আবিষ্কার করেছে— যে কি না নারীদের সম্মান করে, জানে কীভাবে তার প্রিয় মানুষটার সঙ্গে আচরণ করতে হয়, পরিবারকে সম্মান করতে, বন্ধুদের পাশে দাঁড়াতে এবং তার ভক্তদের ভালোবাসে। বিশ্বের সমস্ত ভালো জিনিস আপনাকে স্পর্শ করুক। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা এবং দোয়া।’
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপকালে সেই তরুণী বলেন, ‘আমি তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। ২০১৭ সালে মেঘ এনেছি ভেজা নাটকটি দেখার পর বাবার ফোন থেকে নাটকটি ডাউনলোড করি এরপর লুকিয়ে আমার ট্যাবে ট্রান্সফার করি। তখন যে ডাউনলোড করেছিলাম সেটাই এখনও আছে। আমি আর দ্বিতীয়বার ডাউনলোড করিনি, ওটাই আছে। পঞ্চাশ বারেরও বেশি দেখেছি নাটকটি। তখন থেকে উনার ভক্ত হয়ে উঠি। এরপর উনার সম্পর্কে জানতে শুরু করি ,ইন্টারভিউগুলো দেখি, কাজ দেখি। একটু একটু করে উনার প্রতি ভালোলাগাটা তীব্র হতে শুরু করে। যখন একদম ছোট ছিলাম তখন উনার লুক দেখে পছন্দ করতাম, ভালো লাগতো। কিন্তু এরপরে যখন মানুষটাকে জানতে শুরু করলাম তখন সেই ভালোলাগাটা স্থায়ী হতে লাগলো। যে কি না নারীদের সম্মান করে, মানুষের বিপদে পাশে এসে দাঁড়ায় তার মতো মানুষকে পছন্দ না করার কোনো কারণই নেই। আমি হয়তো ফেসবুকে ছদ্মনামে মাঝে মাঝে অনুভূতিগুলো প্রকাশ করি। যেহেতু খুব কনজারভেটিভ ফ্যামিলির মেয়ে চাইলেও উনার সঙ্গে দেখা করা সম্ভব না।’
পত্রিকায় কোনো ছবি কিংবা নিউজ এসেছে জানতে পারলেই যেকোনো উপায়ে সেটি সংগ্রহ করতে উদগ্রীব হয়ে উঠেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শতাধিকেরও অনেক বেশি পত্রিকার কাটিং সংগ্রহ করেছি। যেহেতু আমার পরিবার এসব বিষয়ে কিছুই জানেনা, আমাকে সবকিছুই লুকিয়ে করতে হয়। প্রাইভেটে কিংবা কলেজে যাওয়ার সময়ে যদি কোনো দোকানে সিয়াম ভাইয়ার বিজ্ঞাপনের পোস্টার দেখতাম অনেক অনুরোধ করে দোকানী থেকে সেসব পোস্টার নিতাম কখনও কখনও তারা দিতে চাইত না, তখন দুই-তিন দিন গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। এরপর আমার বন্ধু-বান্ধবীদের বলে রাখতাম উনার কোনো নিউজ দেখতে পেলে সেটা যেন রেখে দেয়। আমি যেখানেই যেতাম সেখানে গিয়েই পত্রিকা খুঁজতাম আর যদি জানতাম ওইদিন সিয়াম ভাইয়ার নিউজ এসেছে তাহলে বান্ধবীর বাসায় চলে যেতাম। যেই ম্যাডামের কাছে প্রাইভেট পড়ি উনি বাসায় পত্রিকা রাখেন। এরজন্য কয়েক ঘণ্টা আগেই ম্যাডামের বাসায় চলে যেতাম, গিয়ে পত্রিকা খুঁজে নিয়ে আসতাম। যেখানেই পোস্টার কিংবা ছবি দেখতাম তাদেরকে অনুরোধ করে সেগুলো নিয়ে আসতাম। এনে বাসায় লুকিয়ে রাখতাম। ফেসবুকে যে ছবিগুলো শেয়ার করেছি পেপার কাটিংয়ের, সেগুলো আমার বাসায়ও না। বান্ধবীর বাসায় গিয়ে এভাবে সাজিয়েছি। কারণ আমার বাসায় জানলে সমস্যা হবে।’
এই তরুণী আরও বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে আমি উনার ভক্ত হই এবং ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি বছর আমি উনার জন্মদিন পালন করি। আমার নিজের জন্মদিন পালনের জমানো টাকা থেকে আমারটা বাদ রেখে উনারটা পালন করে আসছি। সেগুলোর সব স্মৃতি আছে আমার কাছে, গত পাঁচ বছরের।
নিজের ফ্যান্টাসি ভেঙে যাওয়ার আগে সিয়াম আহমেদের সঙ্গে অন্তত একবার দেখা করতে চান এই তরুণী। বললেন, ‘আমার কখনোই ঢাকায় গিয়ে উনার সঙ্গে দেখা করা সম্ভব না। আমার পরিবার কখনোই দিবে না। জানি না কখনও দেখা হবে কি না।’
ভক্তের এমন ভালোবাসায় আপ্লুত সিয়াম আহমেদ বললেন, ‘এখনকার এই সময়ে এমন ভালোবাসা সত্যি বিরল। এসব পেপার কাটিং, ভিউ কার্ডের বিষয়গুলো দেখতাম ছোটবেলায়। এরপর তো নেই বললেই চলে। কিন্তু যিনি আমাকে এমন ভালোবাসায় রেখেছেন তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, অসীম ভালোবাসা। তাদের এমন ভালোবাসাগুলো যখন দেখি তখন ইচ্ছে করে আরও দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করতে। এই মিষ্টি ভালোবাসাগুলো সত্যি আমাকে অনেক সাহস দেয়। কথা দিচ্ছি, আমি যদি কখনও সেই এলাকায় যাই তাহলে অবশ্যই উনার বাসায় গিয়ে এক কাপ চা খেয়ে আসব।’