আমার কাগজ ডেস্ক
ইসরাইলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র চায়, যুদ্ধের পর পশ্চিম তীরভিত্তিক প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি (পিএ) গাজা শাসন করুক। কিন্তু নেতানিয়াহু তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের কাছে যে সংক্ষিপ্ত নথি উপস্থাপন করেছেন, তাতে পিএ’র কোনো উল্লেখ নেই। এই সংক্রান্ত এক নথিতে নেতানিয়াহু ওই অঞ্চলের একটি রূপরেখা তুলে ধরেন।
শুক্রবার ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধোত্তর গাজা নিয়ে তার রূপকল্প তুলে ধরেছেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে এবং ইসরায়েলের প্রতি বৈরী গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এমন ফিলিস্তিনিরা ওই অঞ্চল পরিচালনা করবে।
এর আগেই তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত সংস্থাটিকে (পিএ) যুদ্ধোত্তর গাজার দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন। তিনি একটি ‘অসামরিক’ গাজার কথা বলেছেন। যেখানে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যতীত সব সামরিক শক্তি অপসারণের জন্য ইসরায়েল দায়বদ্ধ থাকবে।
ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের ওপর উভয় চোরাচালান রোধে মিশরের সঙ্গে অঞ্চলটির সীমান্তে একটি ‘সাউদার্ন ক্লোজার’ থাকবে। এছাড়া, সব ধর্মীয়, শিক্ষা ও কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানে ‘ডি-রেডিকালাইজেশন’ কর্মসূচি প্রচার করা হবে। নথিতে এ ধরনের কর্মসূচির অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন আরব দেশগুলো এতে সম্পৃক্ত হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
যদিও নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে কোনো দেশের নাম বলেননি। পরিকল্পনার আওতায় ইসরাইল জর্ডানের পশ্চিমে পুরো এলাকার স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে।
সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই গাজার জন্য পরিকল্পনা প্রকাশের জন্য দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রয়েছেন নেতানিয়াহু। তিনিও নেতা হিসেবে ইসরায়েলকে নিরাপদে রাখতে সক্ষমতার খ্যাতি পুনরুদ্ধারে মরিয়া।
অন্যদিকে পিএ’র প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে চলেছে। মুখপাত্র নাবিল আবু রুদাইনেহ বলেন, বিশ্ব যদি সত্যিকার অর্থে এ অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা চায়, তাহলে তাদের অবশ্যই ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলের দখলদারত্বের অবসান ঘটাতে হবে এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
এদিকে, সাময়িক যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির মধ্যস্থতা করার চেষ্টাকারীরা শিগগিরই প্যারিসে একটি বৈঠকে বসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই এ বিষয়ে একটি চুক্তি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপও রয়েছে।
অন্যদিকে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
প্রসঙ্গত, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলের প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫৩ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকেই গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী সামরিক অভিখযান পরিচালনা করে আসছে।
গাজায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ ল্যাজারিনি সতর্ক করে বলেন, গাজার ‘আঞ্চলিক শান্তি, সুরক্ষা ও মানবাধিকার বিশাল বিপর্যয়ের মুখোমুখি’।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির কাছে লেখা এক চিঠিতে ফিলিপ ল্যাজারিনি বলেন, গাজায় নজিরবিহীন মানবিক প্রয়োজনের সময় ইউএনআরডব্লিউএ ভেঙে দেওয়ার এবং এই সংস্থায় কয়েকটি দেশের অর্থায়ন স্থগিতের জন্য ইসরায়েলের বারবার আহ্বানের মাধ্যমে সংস্থাটি ভেঙে পড়ার পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, গাজার ২০ লাখেরও বেশি মানুষ জীবনধারণের জন্য এই ত্রাণ সংস্থার ওপর নির্ভরশীল। মাত্র গুটিকয়েক স্টাফের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কারণে সংস্থাটিতে তহবিল দেওয়া বন্ধ করাটা বেদনাদায়ক। বিশেষ করে যেখানে ইউএনআরডব্লিউএ তাদের এই স্টাফদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের উদ্যোগ নিচ্ছে।
অক্টোবরের হামলায় ইউএনআরডব্লিউএ কর্মীদের অংশগ্রহণের জন্য অভিযুক্ত করে নেতানিয়াহু তার যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সংস্থাটি বন্ধ করে দিতে চান। তিনি এর পরিবর্তে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে গাজায় কর্মকাণ্ড পরিচালনার আহ্বান জানান।
গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত এবং সব ইসরায়েলি জিম্মিকে ফেরত না দেয়া পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।