
আমার কাগজ ডেস্ক
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ৩১ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর চীনে, শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) থিয়েনচিন শীর্ষ-সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তিনি চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) ‘হাই-এন্ড ইন্টারভিউ’তে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন এবং ইরান-চীন সম্পর্ক, মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি, ইরানের পরমাণু সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
গত বছরের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটা পেজেশকিয়ানের প্রথম চীন সফর। তিনি চীনের উন্নয়ন অর্জনের উচ্চ প্রশংসা করে বলেন, চীন তার শীর্ষনেতার শক্তিশালী নেতৃত্বে একটি ঐক্য ও সুসংগত উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। একতরফাবাদের বিরোধিতা এবং বহুপক্ষবাদ প্রচারে চীনের অবস্থান ‘ন্যায়সঙ্গত ও প্রশংসনীয়’। তিনি বলেন, দশ বছর আগে তিনি পণ্ডিত হিসেবে চীন সফর করেছিলেন, যখন আবার আসেন, তখন দেখতে পেয়েছেন ‘শহরের প্রতিটি কোণের চেহারা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে’।
ইরান ও চীনের সম্পর্ক সম্পর্কে তিনি বলেন, কয়েক হাজার বছর ধরে দু’দেশের মধ্যে বিনিময় চলছে, উভয়দেশই প্রাচীন সভ্যতার দেশ। বর্তমানে দু’দেশের মধ্যে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্ব সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি, থিয়েনচিন শীর্ষ-সম্মেলনে প্রথমবারের মত বিশ্ব শাসন উদ্যোগ পদ্ধতিগতভাবে ব্যাখ্যা করেন, এই উদ্যোগ সার্বভৌম সমতা, আন্তর্জাতিক আইনের শাসন এবং দ্বৈত মানদণ্ডের বিরোধিতার উপর জোর দেয়। ইরান, চীনের সঙ্গে ‘দৃষ্টিভঙ্গিকে কর্মে রূপান্তর করতে’ এবং একসঙ্গে ‘শান্তি, নিরাপত্তা, ন্যায়বিচারে’র বিশ্ব গড়ে তুলতে ইচ্ছুক মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে পেজেশকিয়ান বলেন, চীনের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন হল তার সর্বোচ্চ নেতার লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ’। চীনের নেতারা শান্তির পক্ষে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই এসসিওর মত আন্তর্জাতিক সংস্থার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে চীন আরও শক্তিশালী ও বিস্তৃত প্রভাব ফেলতে পারে। চীন বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে তার ভূমিকা পালন করতে পারে, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের যৌথ নির্মাণের মাধ্যমে চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করতে পারে এবং অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ‘স্ন্যাপব্যাক নিষেধাজ্ঞা’ ব্যবস্থার সাম্প্রতিক সক্রিয়করণ সম্পর্কে তিনি এটাকে ‘ক্লাসিক দ্বৈত মান’ বলে সমালোচনা করেছেন: ইরান সবসময় পরমাণু চুক্তি মেনে চলেছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে চুক্তিটি ভেঙে দিয়েছে, ইউরোপও তা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে, তবুও তারা ইরানকে দোযারোপ করে, এটি ‘অগ্রহণযোগ্য’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর দেশ কখনই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করবে না, ইরান আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যে সংলাপ চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক, তবে ‘কখনও ক্ষমতা ও চরম চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না’।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত সম্পর্কে তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ইরান যুদ্ধের উস্কানিদাতা নয়, আক্রমণ করা হলে ইরান পাল্টা শক্তি প্রয়োগ করে তা প্রতিরোধ করবে। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েলের ‘গণহত্যা ও অনাহারের নীতি’ এবং সিরিয়া ও দোহায় সীমান্ত অতিক্রম করে আক্রমণগুলো যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজশে পরিচালিত হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এগুলো বন্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের স্থায়ী শান্তি অর্জনের মূল চাবিকাঠি হল ‘দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য, ভৌগলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সমান সহযোগিতা, যা এসসিও ও বিশ্ব শাসন উদ্যোগ এর জন্য একটি কার্যকর পথ প্রদান করেছে।
প্রাক্তন হার্ট সার্জন পেজেশকিয়ান তার শাসন দর্শনকে ব্যাখ্যা করার জন্য ‘চিকিত্সা শপথ’ ব্যবহার করেন: সরকারের উচিত ডাক্তারের মত সকল রোগীকে সমানভাবে সেবা দেওয়া, যারা কষ্ট পাচ্ছে তাদেরকে আর কষ্ট না দেয়া। দেশে বিদেশে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে তার ‘প্রেসক্রিপশন’ হল ন্যায্যতা, সহযোগিতা এবং বহুপক্ষবাদ।
সাক্ষাৎকারের শেষে পেজেশকিয়ান আশা করেন দু’দেশের জনগণ একসঙ্গে কাজ করে সমৃদ্ধি ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ তৈরি করবে।
সূত্র: তুহিনা-হাশিম-লিলি,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।