
আমার কাগজ প্রতিবেদক
শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদ নয়, দেশের সব স্তরের রাজনৈতিক পদে ক্ষমতার মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা পরিবারকেন্দ্রিক ক্ষমতা চর্চা থেকে বেরিয়ে আসার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী পদের সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর নির্ধারণের প্রস্তাবে বিএনপির শর্তসাপেক্ষে একমত হওয়াকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
টানা তিন মেয়াদের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার শাসনামলের শেষদিককার নির্বাচনগুলো নিয়ে নানা বিতর্ক ও প্রশ্ন রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এক প্রজন্মের পর আরেক প্রজন্ম ধরে দেশের শীর্ষ পদ আঁকড়ে থাকার অস্বাভাবিক প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসার সময় এখনই। ঐকমত্য কমিশনের এ প্রস্তাব সেই চেষ্টারই অংশ। তাঁদের মতে, এতে করে পরিবারভিত্তিক কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির অবসান ঘটবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “শুধু প্রধানমন্ত্রী পদে নয়, রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কমিটিতেও এমন মেয়াদসীমার নিয়ম চালু করা উচিত। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত, কারও ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ ১০ বছরের বেশি হওয়া উচিত নয়।”
এই প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি পাওয়াকে গণতান্ত্রিক উদারতার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের মতে, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এমন একটি ঐকমত্যের মাধ্যমে দেশে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যাবে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাহাবুল হক বলেন, “বংশানুক্রমে একই পরিবারের ব্যক্তিরা বছরের পর বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতেন—সেই প্রবণতা থেকে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের গুটিয়ে আনছে, এটি একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।”
বিশ্লেষকদের মতে, শুধু প্রধানমন্ত্রীর নয়—সব রাজনৈতিক পদেই এমন সীমাবদ্ধতা আরোপ, এবং দলগুলোর মধ্যে যেকোনো ইতিবাচক বিষয়ে ঐকমত্য—জনমনে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করবে।