
মো. লাদেন মিয়া
প্রাচীন কালে ব্রহ্মপুত্রের পূর্বাঞ্চল (বাজিতপুরসহ) প্রাগজ্যোতিষ (কামরূপ) রাজ্যের অর্ন্তভূক্ত ছিল। সাগরের মত বিশাল ব্রহ্মপুত্রের অশান্ত পানি রাশি বহিঃ শত্রুকে প্রতিরোধ করেছে। নিশ্চিত আশ্রয় দিয়েছে আর্যদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত পশ্চিম ভারত থেকে বিতারিত দ্রাবির ও অস্ট্রিক (নিষাদ) দেরকে। আর্যরা কি তাদেরকেই অসুর বলে গালি দিয়েছিল? মহাভারতে কথিত আছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে প্রাগজ্যোতিষ (কামরূপ) রাজা কুরুদের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। হয়তো বা সে আক্রোশেই পান্ডবরা ব্রহ্মপুত্রের কিনার পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিল। কিন্তু সাগরের মত বিশাল নদ পাড়ি দেওয়ার সাহস করতে পারেননি। পান্ডব বীর অর্জুন রাগে ক্রোধে ব্রহ্মপুত্রের গভীর জলে গান্ডীব বিসর্জন দিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন। হয়তো বা এ জন্যই ব্রহ্মপুত্রের পূর্বাঞ্চলকে (বাজিতপুরসহ) পান্ডব (আর্য) বর্জিত দেশ বলা হয়। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুও বলেছিলেন, ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের সাথে ভারতের মিল নেই। খ্রিষ্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে পলায়নপর বৌদ্ধধর্মাবলম্বী যোণী, নাথ, সিংহ এবং লৌকিক ধর্মের কোচ, হাজং, কৈবর্ত প্রভৃতি জনগোষ্ঠী বাজিতপুরের নদী তীরবর্তী পূর্বাঞ্চলে হিলচিয়া, দিঘীরপাড়, কৈলাগ, বলিয়ারর্দী, দিলালপুরে বসতি স্থাপন করেছিল। তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এসেছিল অষ্টগ্রাম, সরাইল এবং ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী পশ্চিম অঞ্চলের জেলে পাড়া থেকে। এখানে কোল, ভীল, শবর প্রভৃতি আদি জনগোষ্ঠীরও বাস ছিল।
মুঘলদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত পাঠানরাও এসেছিল ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত নিরাপদ এই আশ্রয় ভূমিতে। এসেছিল দলত্যাগী বিদ্রোহী মুঘল সৈন্যরাও। শেষ পর্যন্ত তাদের অনেকেই স্থায়ী বসতি স্থাপন করে থেকে যায়। পরবর্তীতে তেলী, ধোপা, নাপিত, কামার, কুমার, মিস্ত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এসেছিল ভাগ্যের অন্বেষনে।
লৌকিক ধর্মই ছিল প্রথম দিকের আশ্রয় নেওয়া জনগোষ্ঠীর ধর্ম। সম্রাট অশোকের সময় ভারতবর্ষ ব্যাপী বৌদ্ধধর্মের প্রভাব এবং প্রসার ঘটে। সে সময়ে ব্রহ্মপুত্র দ্বারা বেষ্টিত মহাভারত থেকে বিচ্ছিন্ন এই অঞ্চলেও বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটেছিল। ঐতিহাসিকদের ধারণা বাজিতপুরের হিলচিয়ায় প্রতিষ্ঠিত কোচ সামন্ত রাজা বৌদ্ধধর্মাত্মানী ছিলেন। অর্থাৎ ভাটি অঞ্চলের প্রায় সবাই বৌদ্ধধর্মালম্বী ছিলেন। তবে একাদশ শতকে সেন বংশের রাজত্বকালে বৌদ্ধ ধর্মের উপর প্রচন্ড আঘাত আসে। হিন্দুধর্মের চাপে বৌদ্ধদের ধর্ম টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। তারা বৌদ্ধ ধর্মের গোরক্ষনাথ এবং হিন্দুধর্মের শিবকে অভিন্ন দেবতা জ্ঞানে পূজা করতে থাকে। বল্লালী কৌলীন্য প্রথায় পিষ্ঠ বৌদ্ধধর্ম থেকে আসা নবদীক্ষিত হিন্দুদেরকে নিম্নবর্ণের হিন্দু পরিচয়ে অমর্যাদাকর অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়।
১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজি কর্তৃক লৌখনৌতি জয়ের পর মুসলমানদের আগমন শুরু হয়। অবশ্য ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে তার আগেই পীর মাসায়েক দরবেশদের আগমন ঘটেছিল। মুসলিম সমাজের ক্রমবিকাশ এবং সাম্যনীতির কারণে বর্ণ সমাজের নিগৃহীত নবদীক্ষিত হিন্দু নিম্ন শ্রেণীভুক্ত জনগোষ্ঠী দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
একদিকে বর্ণবাদী হিন্দু সমাজের অনাচার-নিগ্রহ অন্য দিকে ইসলাম ধর্মের দ্রুত বিকাশে ভীত সনাতনী হিন্দু সমাজে শ্রী চৈতন্য দেব আবির্ভূত হন। তাঁর প্রবর্তিত বৈষ্ণব ধর্মের গোসাইরা বিভিন্ন আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন। ঘাগটিয়া (তাতালচর), পাগলা শংকর আখড়াসহ বাজিতপুরের প্রায় সকল আখড়া তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৪৬৬-৬৭ সালে বাজিতপুরের উত্তর পূর্ব সীমানায় গুড়ই গ্রামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু তখনও বাজিতপুর নিকলী অষ্টগ্রাম অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দে ঈশা খাঁ সরাইল পরগনা থেকে নৌপথে বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে জংগলবাড়ির সামন্ত রাজা লক্ষন হাজরাকে পরাজিত করার পর ভাটি অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৫৮৪-১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে নিস্তারকান্দি এবং চন্দ্রগ্রামের মধ্যবর্তী মাঠে মুঘল সেনানায়ক ভরসুন খানের সাথে বিদ্রোহী মুঘল সেনাপতি মাসুম খান কাবুলী এবং ঈশাখানের যৌথ বাহিনীর যুদ্ধ হয় যুদ্ধে মুঘল বাহিনী পরাজিত হয়। মোঘল সেনাপতি তরসুন খান বন্দি অবস্থায় নিহত হন। যুদ্ধের পর উভয় পক্ষের অনেক সৈন্য বাজিতপুরে স্থায়ীভাবে থেকে যায়।
মুঘল আমলে বাজিতপুরে মসলিন কাপড় তৈরী হত। মুঘল রাজ দরবারে মসলিনের কদর ছিল বলেই বাজিতপুরের পরিচিতি মুঘল আমল থেকেই ছিল। ওলন্দাজরা প্রথম বাজিতপুর মসলিন কাপড়ের ব্যবসা করতে এসে কুঠি স্থাপন করে। ব্রিটিশরা ওলন্দাজদেরকে বিতারিত করে কুঠি দখল করে মসলিন কাপড়ের ব্যবসায় হাত দেয়। বাজিতপুরের চারবাড়ি গ্রামে এমনই একটি কুঠি বাড়ি ছিল। তবে বাজিতপুর বাজারের নাম ছিল শ্রীধরগঞ্জ বাজার। জনশ্রুতি আছে, বাজিতপুর বাজারের বর্তমান চাউল মহালে শ্রীধর বিগ্রহের আখড়া/মন্দির ছিল। ভক্তগণ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বাজারের নাম রেখে ছিলেন শ্রীধরগঞ্জ বাজার। অন্য জনশ্রুতি মতে, শ্রীধর ছিলেন ধীরে। খালপাড়ে বসে মাছ বিক্রি করতেন। ধীবর শ্রীধরের নামেই বাজিতপুর বাজারের নাম হয় শ্রীধরগঞ্জ বাজার। মুসলমি সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং বাজিতপুর মৌজা প্রতিষ্ঠার পর ধীরে ধীরে শ্রীধরগঞ্জ বাজার বাজিতপুর বাজারে রূপান্তরিত হয়।
মুঘল রাজস্ব ব্যবস্থাপনার প্রথম দিকে বাজিতপুর ছিল সায়রজলকর পরগনার অর্ন্তভূক্ত। পরবর্তী সময়ে খালিয়াজুরি এবং জয়েনশাহী নামে দুইটি পৃথক পরগনা হয়। বাজিতপুর জয়েনশাহী পরগনার অন্তর্ভুক্ত হয়। ব্রিটিশ আমলের প্রথমদিকে বাজিতপুর ছিল জালালপুর ঢাকা বিভাগের অধীন। ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস এর সময় বাজিতপুর ঢাকা জেলার অর্ন্তভুক্ত হয়। ১৭৮৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা সৃষ্টির পর বাজিতপুর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। বাজিতপুর থানা স্থাপিত হয় ১৫ আগস্ট ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে। আয়তন ছিল ৪৪৩ বর্গ মাইল। ১৮৭২ সালে আদমশুমারি অনুযায়ী বাজিতপুরে জনসংখ্যা ছিল ১৫৬৭৯১ জন। অষ্টগ্রাম, কুলিয়ারচর, ভৈরব তখন বাজিতপুর থানার অন্তর্গত ইউনিয়ন ছিল। ১৯০৬ সালে অষ্টগ্রাম এবং ভৈরব থানা হয়। ১৯২২ সালে কুলিয়ারচর থানা হয়।
আদালত: ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে বাজিতপুরে দেওয়ানী আদালত হয়। দিলালপুর ষ্টীমার ঘাটের উত্তরপাশে ঘোড়াদারার কোথাও অস্থায়ী আদালত ছিল। পরবর্তীতে পাইলট স্কুলের পূর্ব পাশে আদালতটি ছিল। ১৯৩৩ সালে ছনের তৈরি আদালত ভবন আগুনে পুড়ে যায়। বসন্তপুরের হাজীবাড়ীর আব্দুল মজিদের দেওয়া ১৭০০০ টাকার বর্তমান একতলা পাকা ভবনটি ১৯৩৪ সালে তৈরি হয়।
স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা : প্রাচীনকাল থেকেই গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ১৮৭০ সালে ব্রিটিশ সরকার The Village Chaukidari Act এর মাধ্যমে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে আইনের অধীন করে। জমিদার, তালুকদার, বিত্তশালী, শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে পঞ্চায়েত কমিটিতে মনোনয়ন দিতেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। ১৮৮৬ সালে ইউনিয়ন কমিটি এবং ১৯১৯ সালে ইউনিয়ন বোর্ড স্থাপন হয়। বাজিতপুরে তখন হুমাইপুর, মাইজচর, দিলালপুর, কৈলাগ (পরবর্তীতে দিঘীরপাড়), হিলচিয়া, সরারচর এবং পিরিজপুর এই ৭টি ইউনিয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউনিয়ন বোর্ডের প্রধানকে প্রেসিডেন্ট বলা হত। ইউনিয়ন বোর্ডের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন পিরিজপুরে প্রফুল্ল চন্দ্র আচার্য্য, সরারচরে নদীয়াবাসী দাস, হিলচিয়ায় মৌলভী মোহাম্মদ আকরাম, কৈলাগে রাহেলা গ্রামের গগন রায়, দিলালপুরে এড, সুরেন্দ্র চন্দ্র বসু, মাইজচারে হাজী আবদুল ওয়াহেছ এবং হুমাইপুরে সোনা মিয়া। আয়ুব খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ১৯৫৯ সালে ইউনিয়ন বোর্ড ভেঙ্গে ইউনিয়ন কাউন্সিল করা হয় এবং ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্টকে চেয়ারম্যান করা হয়।
পৌরসভা: ১ এপ্রিল ১৮৬৯ সালে নাছিরাবাদ পরে ময়মনসিংহ জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ এবং বাজিতপুর এই পাঁচটি মিউনিসিপালিটি গঠিত হয়। বাজিতপুরে ভিত্তিস্থাপন হয় একদিন পূর্বে। ১৯৫৯ সালে টাউন কমিটি এবং ১৯৭২ সালে পৌরসভা হয়। প্রতিষ্ঠাকালে বাজিতপুর মিউনিসিপালিটির আয়তন ছিল দুই বর্গ মাইল। লোক সংখ্যা ছিল চার হাজারের মত। প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন গঙ্গাধর তর্কালংকার।
১৭৮১ সালে র্যানেলের মানচিত্রে বাজিতপুরকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই মানচিত্রে কিশোরগঞ্জ নামে কোন স্থানের উল্লেখ ছিল না। ঈশাখানের দ্বিতীয় রাজধানী জঙ্গলবাড়ির নাম ছিল। কিশোরগঞ্জের নাম হয় ১৮৬০ সালে মহকুমা স্থাপনের সময়। ১৯১২ সালে বাজিতপুরে মহকুমা স্থাপনের জন্য বসন্তপুর মৌজায় ৭২ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। কিন্তু ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে কয়েকবার মহকুমা/জেলা প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা তদবীর হয়। কিন্তু মহকুমা/জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। শোনা যায় বাজিতপুরেরই কতিপয় লোকের বিরোধীতার কারণে মহকুমা/জেলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় নাই।
বাজিতপুর থানা ১৯৮৩ সালে বাজিতপুর উপজেলায় উন্নীত হয়। বর্তমানে বাজিতপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা। যথাক্রমে : হুমাইপুর, দিলালপুর, বলিয়ারদী, পিরিজপুর, সরারচর, হালিমপুর, হিলচিয়া, দিঘীরপাড়, পিরিজপুর, মাইজচরা, গাজিরচর, কৈলাগ ইউনিয়ন এবং বাজিতপুর পৌরসভা।
বাজিতপুর উপজেলা ভূমি অফিসের অধীন ৯২টি মৌজা এবং ৮ ইউনিয়ন ভ‚মি আছে। একটি পুলিশ সার্কেল অফিস, একটি জেলখানা (বর্তমানে পরিত্যক্ত), একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও তিনটি পুলিশ ফাঁড়িসহ একটি থানা এবং দুইটি টেলিফোন একচেঞ্জ অফিস আছে।
উপজেলার মোট আয়তন ১৯৩.৭৬ বর্গ কি.মি. লোকসংখ্যা প্রায় ২, ৫৫, ১৪০ জন। গ্রাম ১৮৮টি, পরিবারের সংখ্যা ৪২৭০০ শিক্ষার হার ৪২.০১%, মোট জমি ৪১৯৩৪.২৯ একর, জলমহল ২০ একরের উর্ধ্বে ৯টি) ২০ একরের নিচে ১৪টি, মোট ফসলী জমি ৪০৭৫৫ একর, বার্ষিক খাদ্যশস্য উৎপাদন (২০১৬) ৭৮৭০০ মেট্রিক টন, চাহিদা ৪১৯৯০ মেট্রিক টন, উদ্বৃত্ত ৩৬৭১০ মেট্রিক টন, সবজি উৎপাদন (২০১৬) ৩০৯৬০ মেট্রিক টন, চাহিদা ১৮১৫০ মেট্রিক টন, উদ্বৃত্ত ১২৮১০ মেট্রিক টন। ফল, মসল্লা, তৈল এবং ডাল উৎপাদনে ঘাটতি। বিসিআইসি সার ডিলার ১৭ জন। কীটনাশক ডিলার পাইকারী ৪ জন, খুচরা ৮০ জন, সরকারী নার্সারী ১টি, বেসরকারী নার্সারী ২০টি। কোলস্টোরেজ নাই। ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ৬টি, কৃষি ব্লক ৩৪টি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জহুরুল ইসলাম নার্সিং কলেজ, নার্সিং কলেজটি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত জহুরুল ইসলাম নার্সিং ইনষ্টিটিউট ছিল। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বাজিতপুর ডিগ্রী কলেজ, ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হাজী এডঃ ওসমান গণি মডেল কলেজ (উচ্চমাধ্যমিক কলেজ) সরারচর। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাজিতপুর আর.এন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আফতাব উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ। ১৮৯০ সনে প্রতিষ্ঠিত বাজিতপুর হাফেজ আঃ রাজ্জাক পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত নাজিরুল ইসলাম কলেজিয়েট স্কুল, ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হিলচিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দিলালপুর আঃ করিম উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কমর আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত পিরিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হালিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত ডুয়াইগাঁও সুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মফিজুর রহমান রোকন উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত মেরাজ মান্নান আলম উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বেগম রহিমা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাহেবালী এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত দিঘীরপাড় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হাজী আঃ বারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত আঃ মান্নান স্বপন উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত নিলখী কাছেমূল উলূম দাখিল মাদ্রাসা, ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সরারচর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত পিরিজপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সরারচর বি.এম কলেজ। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত পিরিজপুর বি.এম কলেজ। এবতেয়াদায়ী মাদ্রাসা ১৫টি। কওমি মাদ্রাসা ১৬টি। নূরানী মাদ্রাসা ৩৩১টি। অষ্টম শ্রেণী চালুকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় : ১টি। বলিয়ারদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় : ১০৮টি। মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র ৭৫টি। মসজিদ ৪০৭টি, মন্দির ৯৮টি, হরিসভা ১টি, আখড়া ১২টি।
যোগাযোগ ব্যবস্থা : (রেল ষ্টেশন ৩টি- বাজিতপুর (ভাগলপুর), সরারচর, হালিমপুর মকসুদ। হাইওয়ে রোড : ভৈরব-কিশোরগঞ্জ হাইওয়ে রোড বাজিতপুর অংশে ৩.৫০ কিলোমিটার) উপজেলা রোড পাকা ৪১.১০ কিলোমিটার। কাঁচা ৬.৭৩ কিলোমিটার। ইউনিয়ন রোড : পাকা ৩২.০৫ কিলোমিটার, কাঁচা ৫৪.২৮ কিলোমিটার। মোট ৮৬.৩৩ কিলোমিটার।
গ্রামীণ রাস্তা : পাকা ৯৮.৮৬ কিলোমিটার, কাঁচা ৪১১.৫৮ কিলোমিটার। মোট ৫১০.৪৪ কিলোমিটার।
নদীপথে ১৯৭২-৭৩ পর্যন্ত ষ্টীমার চলাচল করত। দিলালপুরে ষ্টীমার ঘাট ছিল। বর্তমানে যাত্রীবাহী লঞ্চ, নৌকা (ট্রলার), পণ্যবাহী নৌকা, ইঞ্জিন চালিত ষ্টীলবডি নৌকা এবং কার্গো লঞ্চ চলাচল করে।
মৎস্য : পুকুর ১৭১৪টি, আয়তন ৯০৬ একর খাস পুকুর ১৫টি, আয়তন ৪৭.৫৫ একর। মৎস্য খামার ৫০টি, আয়তন ১৬৫.৫ একর। নদী ৪টি, আয়তন ৪৩৮৪ একর। প্লাবন ভূমি ১৯৬০ একর। নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৫৫২২ জন। বার্ষিক মৎস্য উৎপাদন ৪৫৫০ মেট্রিক টন।
উল্লেখযোগ্য কীর্তিমান
মৌলভী উবেদুল হাসান: উপজেলার বাহেরনগর গ্রামে জন্ম। উচ্চ শিক্ষিত আলেম ছিলেন। হায়দরাবাদের নিজাম বাহাদুরের স্থাপিত উচ্চ বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ ছিলেন।
মৌলভী আলী আহম্মদ : পৈত্রিক নিবাস পাকুন্দীয়া। নানার বাড়ী বাহেরনগর। সম্ভবত পিতা বৈবাহিক সূত্রে বাহেরনগরেই বসতি ছিলেন। তিনি প্রথম অত্র অঞ্চলের ডিপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন।
খানবাহাদুর আবদুল করিম: বাহেরনগরে জন্ম। অবিভক্ত বাংলার আইন সভার সদস্য ছিলেন। শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের মন্ত্রী সভায় ১৯৪১-৪৩ সময়ে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।
কমরেড নীহারেন্দু দত্ত মজুমদার : বাজিতপুরের সন্তান। বাজিতপুর বারের উকিল ছিলেন। দেশ বিভাগের পর ভারতে চলে যান এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইনমন্ত্রী হন।
মৌলভী করম নেওয়াজ : দেওচান্দি গ্রামে জন্ম। পেশায় উকিল ছিলেন। ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ১৯২২-২৬ সময় বাজিতপুর পৌরসভার প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
মৌলভী হামিদ উদ্দিন খান : জন্ম কটিয়াদী উপজেলার বোয়ালীয়া গ্রামে। বাজিতপুর বারের উকিল ছিলেন। ১৯৩২-৪২ পর্যন্ত বাজিতপুর পৌরসভার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দুইবার অবিভক্ত বাংলার আইন সভার সদস্য ছিলেন। ১৯৫০-৫৩ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তারের কৃষিমন্ত্রী ছিলেন।
আবদুল মোনায়েম খান : জন্ম হুমাইপুর গ্রামে। ময়মনসিং বারের উকিল ছিলেন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় সংসদের সদস্য হন। ১৯৬২ সালেই পাকিস্তান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন এবং অল্প দিন পরই পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হন। ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত গভর্ণর ছিলেন।
আলহাজ্ব জহুরুল ইসলাম : ভাগলপুর গ্রামে জন্ম। মেধা ও যোগ্যতা বলে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ধনী হওয়ার খ্যাতি অর্জন করেন। জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ বাজিতপুর এবং ঢাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।
জাতীয় সংসদ সদস্য : বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন, মঞ্জুর আহম্মদ বাচ্চু মিয়া, আমির উদ্দিন আহম্মদ, মোঃ খালেকুজ্জামান খান হুমায়ুন, মোঃ মফিজুর রহমান রোকন, আলহাজ্ব মোঃ মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং আলহাজ্ব মোঃ আফজাল হোসেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান : অধ্যাপক মোঃ ইয়াকুব মিয়া, মোঃ আলাউল হক, শেখ এ.কে.এম নূরন্নবী বাদল এড. এবং ছারওয়ার আলম এবং বর্তমানে রকিবুল হাসান শিবলী।
পৌরসভার প্রেসিডেন্ট ১২ জন, চেয়ারম্যান ১৭ জন এবং মেয়র ২ জন। প্রথম প্রেসিডেন্ট গঙ্গাধর তর্কালংকার, প্রথম চেয়ারম্যান জনাব মৌলানা আফতাব উদ্দিন আহম্মেদ এবং প্রথম মেয়র জনাব মোঃ এহেসান কুফিয়া, বর্তমান মেয়র জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন।
মুক্তিযুদ্ধ : বাজিতপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয় ২ এপ্রিল। প্রাক্তন সেনা সদস্য হোসেন আলীর তত্ত্ববধানে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু করে। ১৯ এপ্রিল কতিপয় দালাল ইন্দু দাসকে বাড়ি থেকে ধরে এনে জানায় আটক রাখে। ১৪ দিন পর ২ মে আর্মি এসে ইন্দু দাসকে ভৈরব নিয়ে যায়। ৪ মে পাক আর্মি বাজিতপুর আক্রমণ করে কয়েকশ মানুষ হত্যা করে। ২৭ অক্টোবর বাজিতপুর শত্রু মুক্ত হয়। (সংগৃহীত)।
-মো. লাদেন মিয়া, বাজিতপুর সরকারি কলেজের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।