
আমার কাগজ প্রতিবেদক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারের রাজপরিবারের কাছ থেকে একটি বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭–৮ ‘জাম্বো জেট’ উপহার হিসেবে গ্রহণের চিন্তা করছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি প্রেসিডেন্সির সময় ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং পরবর্তীতে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় স্থান পাবে।
রোববার (১১ মে) এবিসি নিউজ প্রথম এই খবর প্রকাশ করে। তারা উড়োজাহাজটিকে ‘উড়ন্ত প্রাসাদ’ বলে উল্লেখ করে জানিয়েছে, এটি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল উপহার। ধারণা করা হচ্ছে, এর বাজারমূল্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
তবে কাতার এ বিষয়টি ‘উপহার’ হিসেবে ব্যাখ্যার বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে একটি সাময়িক ব্যবহারের চুক্তি আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। ওয়াশিংটনে কাতার দূতাবাসের মুখপাত্র আলি আল–আনসারি জানান, এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় পদে থাকা কোনো কর্মকর্তা বিদেশি সরকার বা রাজপরিবারের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ করতে পারেন না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প হয়তো এই বিধান পাশ কাটিয়ে উড়োজাহাজটি তার প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে স্থানান্তরের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারেন, ফলে তা ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে না।
তবে ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা শুরু হয়েছে। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই ঘটনা প্রমাণ করে ট্রাম্প রাষ্ট্রীয় পদকে ব্যক্তিগত লাভের জন্য ব্যবহার করছেন। শ্রমজীবী মানুষ যখন চরম অর্থনৈতিক চাপের মুখে, তখন তিনি ধনীদের সম্পদ বাড়ানোর চিন্তায় মগ্ন।’
ডানপন্থী রাজনীতিক লরা লুমার বিষয়টিকে আরও কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তিনি লেখেন, ‘কাতারের মতো দেশ, যারা হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর অর্থ জোগান দেয়, তাদের কাছ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন উপহার গ্রহণ করা উচিত নয়।’
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউস ও বিচার বিভাগ বিষয়টিকে ‘ঘুষ’ হিসেবে দেখছে না। তাদের যুক্তি, উড়োজাহাজটি কোনো প্রতিদানমূলক সুবিধার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে না, বরং এটি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর মালিকানায় যাবে এবং পরবর্তীতে সংগ্রহশালায় স্থান পাবে।
এএফপির অনুরোধেও হোয়াইট হাউস থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে ট্রাম্প কাতার ও আশেপাশের দেশগুলোতে যাচ্ছেন এবং সেখানে উড়োজাহাজ সংক্রান্ত পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পারেন বলে জানিয়েছে এবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমস।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের সম্ভাব্য উপহার গ্রহণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নৈতিকতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রশ্নটি আবারও সামনে চলে এসেছে।