আমার কাগজ প্রতিবেদক
কার্তিক মাসের শেষে এসে রাজধানীর বাজারগুলোয় বেড়েছে শীতকালীন সবজির সরবরাহ। এতে করে সবজির বাজারের অস্থিরতা কিছুটা কমেছে। আলু ছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে অন্তত ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। অন্যদিকে বাজারে নতুন আলু আসতে শুরু করলেও পুরনো আলুর দাম কেজিপ্রতি ফের ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। এই সময়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। দেশি ও আমদানি করা উভয় ধরনের পেঁয়াজের দামই গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে কেজিতে। চাল-ডালসহ অন্যান্য মুদি পণ্যের দাম অবশ্য একই আছে আলোচ্য সময়ে। আমিষ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে মুরগি ও চাষ করা মাছের দাম কমেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, বেশিরভাগ সবজিই বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। তবে আলুর দাম বেড়েছে আর করলা আগের মতোই ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত সবজি আসতে শুরু করেছে। এর ফলে বেশিরভাগ সবজির দাম কমেছে। তবে পুরনো আলুর দাম বেড়েই চলেছে। নতুন আলু না আসা পর্যন্ত আলুর দাম বাড়তি থাকবে।
গতকাল কারওয়ান বাজার, নিউ মার্কেট ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, কাঁচা মরিচ ১০০, টমেটো ১২০, লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৭০, পটোল ৪০ থেকে ৫০, বরবটি ৬০, কচুর মুখী ৮০, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে, চিচিঙ্গা আগের মতোই ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আসা ক্রেতারা সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি পেলেও আলু ও পেঁয়াজের দামে উবে যাচ্ছে সেই স্বস্তি। বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। আলুর মতো আমদানি করা পেঁয়াজের কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের কেজিতে ১০ টাকা কমে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।
গতকাল শান্তিনগর বাজারে আসা আজিজুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা দেশ রূপান্তরকে জানান, বাজারে সবজির দাম কমেছে কিছুটা। কিন্তু অন্য পণ্যগুলোর এখনো চড়া দাম। একটি পণ্য কিনতে গেলে অন্য পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সবজির মতো মাছের বাজারে ঘুরে কিছুটা স্বস্তির খবর পাওয়া গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পাঙাশ, তেলাপিয়া ও রুইজাতীয় মাছ কেজিতে অন্তত ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। গতকাল কেজিতে ৩০ টাকা কমে প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। পাঙাশের মতো কেজিতে ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, যা এক সপ্তাহে আগেও বিক্রি হয়েছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া দাম কমে প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ ও প্রতি কেজি সরপুঁটি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়।
তবে পাঙাশ, তেলাপিয়া ও রুই মাছের দাম কমলেও অপরিবর্তিত দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের নদীর মাছ। প্রতি কেজি বাইলা ৬০০ থেকে ৭০০, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ ও লইট্টা বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায়।
জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রাকিব হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনে চাষ করা মাছের দাম অনেক কমেছে। যেখানে প্রতি কেজি পাঙাশ বিক্রি করতাম ২২০ টাকার ওপরে। এখন তা বিক্রি করছি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। ৩০০ টাকার নিচে কখনোই রুই বিক্রি করিনি, এখন বাজারে মাছের চাপ থাকায় তা বিক্রি করছি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়।
মাছের মতো মুরগির দামও কমেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, গত এক সপ্তাহে সব ধরনের মুরগির দাম কমেছে। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা ও সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। মুরগির দাম কিছুটা কমলেও নতুন করে আবার বেড়েছে ডিমের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোয় এখনো চড়া দামে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়।
গতকাল চালের বাজার ঘুরে দেখা আগের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের চাল। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৯ থেকে ৬০ টাকায়। আবার পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোয় একই মানের স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬১ থেকে ৬২ টাকায়। স্বর্ণা চালের মতো চড়া দামে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকার।